ডুরান্ড কাপের (Durand Cup 2025) কোয়ার্টার ফাইনালে এ যেন এক অকাল ফাইনাল (Kolkata Derby)। ১৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG) এবং ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। গ্রুপ লিগে দু’দলই তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে, দিয়েছে ১২টি করে গোল। তাই হিসেবের খাতায় আলাদা করা যাচ্ছে না কোনও দলকেই। একদিকে স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনার বল পজেশন নির্ভর পরিকল্পনা। অন্যদিকে আরেক স্প্যানিশ মগজাস্ত্র অস্কার ব্রুজোর পজিশন নির্ভর আগ্রাসী স্টাইল।
গত মরসুম থেকে দল প্রায় অপরিবর্তিত। পাঁচ বিদেশি ম্যাকলারেন, কামিন্স, পেত্রাতোস, অলড্রেড এবং রদ্রিগেজ সবাই ডার্বি খেলে অভ্যস্ত। একই সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলারদের দিক থেকেও এগিয়ে সবুজ-মেরুন। জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ লিস্টন কোলাসো, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহল সামাদ, আপুইয়া, বিশাল কাইথরা রয়েছেন দলে। ডুরান্ডে এখন পর্যন্ত দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন লিস্টন। তিন ম্যাচে করেছেন পাঁচ গোল। তাঁর দৌড় এবং উইং প্লে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণকে চাপে ফেলতে পারে।
লিস্টনের পাশাপাশি সাহল ও থাপাও মিডফিল্ডে ছন্দে রয়েছেন। সাহল টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট (৪) দিয়েছেন। তবে মোলিনার চিন্তার জায়গা ডান দিক। মনবীর এবং কিয়ান চোটের কারণে ডার্বির বাইরে থাকছেন। ফলে পাসাং দোরজি তামাংয়ের উপরে ভরসা করতে হবে, অথবা ডান দিকের ভার নিতে পারেন সাহল, যার ফলে নম্বর-১০ পজিশন ঘাটতি পড়তে পারে।
অস্কার ব্রুজোর হাতে দল এসেছে গত মরসুমের মাঝপথে। সে সময় ফুটবলারদের মধ্যে অতিরিক্ত বল ধরে রাখার প্রবণতা ছিল। এ বছর কোচ নিজের পছন্দমতো খেলোয়াড় বেছে এনেছেন। মিগুয়েল ফিগুয়েরা, কেভিন সিবিয়ে, হামিদ আহদাদদের নিয়ে গড়েছেন দ্রুতগতির, ওয়ান-টু পাস নির্ভর ফুটবল স্টাইল। যার মূলমন্ত্র, সুযোগ তৈরি করা ও আঘাত হানা। ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার ফিগুয়েরা বল বেশি সময় ধরে রাখেন না। আর্জেন্টাইন সিবিয়ে রক্ষণে নির্ভরযোগ্য। বিপিন সিং, যিনি নতুন দলে এসেই মানিয়ে নিয়েছেন, তিনিই হতে পারেন ব্রুজ়োর তুরুপের তাস।
তবে অস্কারের বড় চ্যালেঞ্জ রশিদের পরিবর্ত খোঁজা। প্যালেস্টাইন আন্তর্জাতিক মাঝমাঠের ভারসাম্য রক্ষা করছিলেন দুর্দান্তভাবে। তাঁর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব কাকে দেবেন, সেটাই প্রশ্ন। অন্যদিকে সাইড ব্যাক পজিশনেও রয়েছে দুর্বলতা। যেখানে লিস্টনের মত উইঙ্গার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন।
ডার্বির ইতিহাস বলছে, চাপ সামলাতে না পারলে শক্তি ও কৌশল ধোপে টেকে না। গত কয়েক বছরে মোহনবাগান দল গুছিয়ে নিয়েছে আগেভাগেই। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল বারবার নতুন করে শুরু করেছে। তবে এ বার ছবি কিছুটা আলাদা। ব্রুজোর দল অনেক আগেই প্রাক-মরসুম শুরু করে নিয়েছে। নতুন বিদেশিরা মানিয়ে নিয়েছেন দলের সঙ্গে। ফলে লাল-হলুদ শিবিরে এবার আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই।
তবু প্রশ্ন থাকছে আহদাদ, সিবিয়ে, ফিগুয়েরার মতো প্রথম ডার্বিতে নামা ফুটবলাররা মাঠে চাপ কতটা সামলাতে পারবেন? বিপরীতে পেত্রাতোস, কামিন্স, অলড্রেডরা ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতায় সিদ্ধহস্ত।
পূর্বাভাসে দু’দলই সমানে সমান। ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হবে মাঠে। কারা গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারবে, কারা তা কাজে লাগাতে পারবে, কারা ৯০ মিনিটের চাপ সামলে ছন্দে থাকবে সেই উত্তর দেবে রবিবারের সন্ধে।