ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) গতিপথ বদলে দেওয়া টুর্নামেন্ট আইএসএল (ISL) গত এক দশকে তুলে এনেছে একঝাঁক দেশীয় প্রতিভাকে (Indian Footballer)। যাঁরা নিজেদের সাহস, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে মাঠে একের পর এক ইতিহাস গড়েছেন। বিদেশি তারকাদের ভিড়ে দেশীয় ফুটবলাররা যে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন, তা প্রমাণ করে সেরা ভারতীয় একাদশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবিই ছিল।
এই একাদশ শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নয়, বরং তাঁদের প্রভাব, ধারাবাহিকতা ও নেতৃত্বের গুণে বাছাই করা হয়েছে। আসুন, একবার দেখে নেওয়া যাক সেই ১১ ভারতীয় তারকাকে, যাঁরা আইএসএলের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ভারতীয় একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন।
গোলকিপার: বিশাল কাইথ (Vishal Kaith)
বিশালের নিখুঁত রিফ্লেক্স, চাপের মুখে শান্ত থাকা এবং বক্সের নিয়ন্ত্রণ তাঁকে আইএসএলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গোলরক্ষক করে তুলেছে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে সাম্প্রতিক সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ৫৪টি ক্লিন শিট ও দুটি গোল্ডেন গ্লাভ জয়ের মাধ্যমে গুরপ্রীত বা অমরিন্দরকে পিছনে ফেলে সেরা জায়গা দখল করেছেন।
রাইট-ব্যাক: প্রীতম কোটাল (Pritam Kotal)
আইএসএলে এক নিরবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি। পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা এবং লিডারশিপের এক নিদর্শন। ১৮০ বেশি ম্যাচ খেলে প্রমাণ করেছেন তিনি ভারতীয় ফুটবলের নির্ভরতার আরেক নাম।
সেন্টার-ব্যাক: রাহুল ভেকে
বহুমুখিতা আর বড় ম্যাচে পারফরম্যান্স এই দুই গুণেই তিনি নিজের জায়গা পাকা করেছেন। ১৭৬ ম্যাচ, ১০ গোল, ৫৭ ক্লিন শিট বলছে তাঁর দখল কতটা।
সেন্টার-ব্যাক: সন্দেশ ঝিঙ্গান
চোট থেকে ফিরে আসার পরও যিনি বদলাননি নিজের আগ্রাসী খেলা। নেতৃত্ব, সাহস ও অভিজ্ঞতা তাঁকে এই একাদশে অপরিহার্য করে তোলে।
লেফট-ব্যাক: শুভাশীষ বোস (Subhasish Bose)
‘শ্রী নির্ভরযোগ্য’ নামে পরিচিত শুভাশীষ মাঠে যেমন শান্ত, তেমনই কার্যকর। দুই আইএসএল খেতাব জয়ী অধিনায়ক হিসেবে তাঁর নেতৃত্বও তাঁকে এগিয়ে রেখেছে।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: লালেঙমাউইয়া রালতে (আপুইয়া)
মাত্র ২৪ বছরেই ১১৩টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। বল পায়ে ঠান্ডা মাথার খেলা ও স্ট্যামিনা তাঁকে মিডফিল্ডের ছায়াসঙ্গী করে তুলেছে।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: অনিরুদ্ধ থাপা (Anirudh Thapa)
রক্ষণ থেকে আক্রমণে দারুণ রূপান্তর ঘটান। চেন্নাইয়িন ও মোহনবাগান দুই দলেই নেতৃত্ব ও কার্যকারিতায় সফল থাপা এখন ভারতীয় মিডফিল্ডের অন্যতম স্তম্ভ।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ
২৭৯টি চ্যান্স ক্রিয়েশন করে আইএসএলে এই বিভাগে ইতিহাস তৈরি করেছেন। তাঁর থ্রু বল, সেট-পিস ও পাসিং দক্ষতা তাঁকে একজন আদর্শ প্লেমেকার বানিয়েছে।
রাইট উইঙ্গার: লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে
গতি, দৃঢ়তা এবং নেতৃত্ব ভর করে তিনি এখন মুম্বই সিটি এফসির অধিনায়ক। গোল্ডেন বল জয়ী ছাংতের আইএসএলে উন্নতি অবিশ্বাস্য।
লেফট উইঙ্গার: বিপিন সিং
আইএসএলের ফাইনাল ম্যাচে ম্যাচজয়ী গোল করা থেকে শুরু করে ধারাবাহিক গোল ও অ্যাসিস্ট সবকিছুতেই নজর কেড়েছেন বিপিন। বাঁদিক দিয়ে তাঁর আক্রমণ মানেই বিপদ।
সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড: সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)
৭৫টি গোল, ১৮০-র বেশি ম্যাচ, নেতৃত্ব, এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। এই একাদশে সুনীল ছেত্রীর নাম নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠে না।
একাদশ কেবল পরিসংখ্যানের সমষ্টি নয়, বরং আইএসএলের এক দশকের ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস। একাদশে আছেন সেই সব খেলোয়াড়, যাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের প্রমাণ করে ফুটবলপ্রেমীদের মনে স্থায়ী ছাপ রেখেছেন। আইএসএল যে শুধু বিদেশিদের লিগ নয়, বরং ভারতীয় ফুটবল প্রতিভার অন্যতম মঞ্চ তার প্রমাণ। আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনই এই দল ফুটবলপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলাই যায় নিঃসংশয়ে।
Domestic Icons as Indian Footballer the best Indian XI in ISL history