ডায়মন্ড হারবার এফসি-র (Diamond Harbour FC) জন্য ২০২৫ সালের কলকাতা ফুটবল লিগ (CFL) প্রিমিয়ার ডিভিশনের শুরুটা খুব একটা সুখকর ছিল না। গোলের খরা এবং ধারাবাহিকতার অভাবে দলটি প্রথম ম্যাচে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে। কোচ কিবু ভিকুনার নেতৃত্বে দলটি দ্বিতীয় ম্যাচে উয়াড়ী অ্যাথলেটিক ক্লাবের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় পেলেও, পরবর্তী ম্যাচগুলিতে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দলকে পিছিয়ে দেয়। তবে, CFL প্রিমিয়ার ডিভিশনের সুপার সিক্সে জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দলটি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বদ্ধপরিকর। এর পাশাপাশি, আসন্ন ডুরান্ড কাপ এবং আই-লিগ ২০২৫-২৬ সিজনে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখানোর লক্ষ্য রয়েছে এই বাংলার দলটির।
এই লক্ষ্য পূরণে ডায়মন্ড হারবার এফসি ম্যানেজমেন্ট অনেক আগে থেকেই দল গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেছে। ভারতীয় ফুটবলারদের পাশাপাশি বিদেশি খেলোয়াড় নির্বাচনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভেইরা, আইএসএল অভিজ্ঞ সেন্টার-ব্যাক মেলরয় অ্যাসিসি, মিডফিল্ডার পল রামফাংজাউভা এবং স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজারের মতো খেলোয়াড়দের দলে যুক্ত করা হয়েছে। এই সইগুলি দলের শক্তি বাড়িয়েছে, কিন্তু ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতিক সূত্রে জানা গেছে, দলটি এখন স্লোভেনিয়ান স্ট্রাইকার লুকা মাজসেনকে (Luka Majcen) দলে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। এই সই নিঃসন্দেহে দলের আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করবে।
লুকা মাজসেন: ভারতীয় ফুটবলে এক প্রতিষ্ঠিত নাম
৩৫ বছর বয়সী লুকা মাজসেন ভারতীয় ফুটবলে এক পরিচিত নাম। ২০২০ সালে ভারতে পা রেখে তিনি চার্চিল ব্রাদার্সের হয়ে আই-লিগে ১৫ ম্যাচে ১১ গোল করে নজর কাড়েন। এরপর ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডে যোগ দিয়ে তিনি ২০২১ ডুরান্ড কাপে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান এবং ব্যাঙ্গালোর সুপার ডিভিশনে ১৫ গোল করে শীর্ষ গোলদাতা হন। ২০২২ সালে গোকুলাম কেরালার হয়ে তিনি আই-লিগ শিরোপা জিতে নেন এবং এএফসি কাপে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দুটি গোল করেন। ২০২২-২৩ সিজনে পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে তিনি ২০ ম্যাচে ১৬ গোল করে আই-লিগের গোল্ডেন বুট এবং ‘প্লেয়ার অফ দ্য লিগ’ পুরস্কার জিতে দলকে আইএসএল-এ উন্নীত করেন। ২০২৪-২৫ আইএসএল সিজনে তিনি পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে ২০ ম্যাচে ১০ গোল করেন। তবে, পাঞ্জাব এফসি গত জুন মাসে তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ডায়মন্ড হারবার এফসি-র পরিকল্পনা
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডায়মন্ড হারবার এফসি লুকা মাজসেনকে আগামী দুই মরসুমের জন্য দলে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা শুরু করেছে। কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে, যদিও চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও বাকি। মাজসেনের অভিজ্ঞতা এবং গোল করার ক্ষমতা দলের আক্রমণভাগকে শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে ডুরান্ড কাপ এবং আই-লিগের মতো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে। ডায়মন্ড হারবার এফসি, যারা ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিন বছরের মধ্যে আই-লিগে উঠে এসেছে, এখন আরও বড় সাফল্যের লক্ষ্য নিয়েছে। ২০২৫ সালে আই-লিগ ২ জিতে তারা বাংলার চতুর্থ ক্লাব হিসেবে আই-লিগে স্থান পায়।
২০২৫ ডুরান্ড কাপে ডায়মন্ড হারবার এফসি গ্রুপ বি-তে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, মহামেডান এসসি এবং বিএসএফ এফটি-র সঙ্গে খেলবে। ৯ আগস্ট মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে তাদের টুর্নামেন্ট শুরু হবে। এই কঠিন গ্রুপে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে মাজসেনের মতো অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের উপস্থিতি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। আই-লিগেও তারা শিলং লাজং, নামধারি এফসি-র মতো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
কেন লুকা মাজসেন?
মাজসেনের ভারতীয় ফুটবলে অভিজ্ঞতা এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁকে ডায়মন্ড হারবার এফসি-র জন্য একটি আদর্শ পছন্দ করে তুলেছে। তিনি আই-লিগ এবং আইএসএল-এর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ২০২৪ ডুরান্ড কাপে পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে তিনি দুটি ম্যাচে তিন গোল করেছিলেন, যা তাঁর গোল করার ক্ষমতার প্রমাণ। তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী এবং দলের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে বিশেষ করে তুলেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ডায়মন্ড হারবার এফসি-র সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। CFL প্রিমিয়ার ডিভিশনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ডুরান্ড কাপে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং আই-লিগে নবাগত হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করা তাদের জন্য বড় পরীক্ষা। মাজসেনের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংযোজন দলের আক্রমণভাগকে শক্তিশালী করবে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। তবে, চূড়ান্ত চুক্তি এবং মাজসেনের দলে যোগদানের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হওয়ায় সমর্থকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
ডায়মন্ড হারবার এফসি ২০২৫ সালে ডুরান্ড কাপ এবং আই-লিগে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। লুকা মাজসেনের মতো অভিজ্ঞ বিদেশি স্ট্রাইকারের সম্ভাব্য সংযোজন দলটিকে আরও শক্তিশালী করবে। কিবু ভিকুনার কোচিং এবং ম্যানেজমেন্টের কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলার এই ক্লাবটি জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের জায়গা মজবুত করতে চায়। সমর্থকরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন মাজসেনের সইয়ের চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য, যা দলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।