ডুরান্ড কাপের ২০২৫ ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলার ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC) এবং আইএসএলের অভিজ্ঞ দল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। শনিবার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত এই হাইভোল্টেজ ফাইনাল ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। একদিকে অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে চমক। এই লড়াইকে ঘিরেই এখন জমে উঠেছে ভারতীয় ফুটবল।
ডায়মন্ড হারবার এফসি, একটা সময় অবজ্ঞার চোখে দেখা এক নয়া দল। আজ ভারতের সবচেয়ে পুরনো ফুটবল প্রতিযোগিতা ডুরান্ড কাপে ইতিহাসের দোরগোড়ায়। মাত্র চার বছরের ক্লাব, এই প্রথমবার ডুরান্ড খেলছে। আর প্রথমবারেই দাপটের সঙ্গে উঠে এসেছে ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে মহামেডানকে হারিয়ে, কোয়ার্টার ফাইনালে জামশেদপুরকে পেছনে ফেলে এবং সেমিফাইনালে হাইপ্রোফাইল ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে তারা প্রমাণ চমকে দিয়েছে।
Also Read | ব্রাইট কবে আসছেন? ডুরান্ড ফাইনালে অভিষেক! ফাঁস সহ-সভাপতির
তবুও ডায়মন্ড কোচ কিবু ভিকুনা যথারীতি সংযত। তাঁর মতে, “ফাইনাল ম্যাচ মানেই চাপ থাকে। তবে ছেলেরা তৈরি। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলেই আমরা ফাইনালে লড়াই করতে পারব। নর্থইস্ট দুর্দান্ত দল, গতবারের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমরাও তো সহজে এখানে আসিনি।”
ডুরান্ডের এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি আইএসএল দলের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা ডায়মন্ড হারবারের ঝুলিতে। কিবুর ভাষায়, “মোহনবাগান, জামশেদপুর, ইস্টবেঙ্গল সব ম্যাচে ছেলেরা ভয় না পেয়ে খেলেছে। চাপটাকে কাজে লাগিয়েছে।” এখন নর্থইস্ট ইউনাইটেড, যাদের দলে রয়েছে আলাদিন আজেরাইয়ের মতো গোলমেশিন। তাঁকে আটকানোর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকছেই, তবে কোচের মতে, “নর্থইস্ট দলটাই বিপজ্জনক। একজন নয়, গোটা দলকেই নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে।”
এই ম্যাচ শুধু ট্রফির লড়াই নয়, ডায়মন্ড হারবারের কাছে সম্মান ও ইতিহাস গড়ার সুযোগ। কারণ ফাইনাল জিতলে এটিই হবে প্রথমবার ডুরান্ডে নামা এক দলের প্রথম ট্রফি জয়। তা নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক বড় অধ্যায় হয়ে থাকবে। পাশাপাশি বাংলা ফুটবলের মুখরক্ষা করার লড়াইও এটা। কারণ মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান তিনটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ছিটকে যাওয়ার পর এখন শেষ ভরসা ডায়মন্ড হারবার।
Also Read | ফাইনালে ডায়মন্ডকে নিয়ে সতর্ক বেনালি! লুকা প্রসঙ্গে দিলেন বার্তা
ডায়মন্ডের প্রধান দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই বিদেশি, মিকেল কোর্তাজা ও স্ট্রাইকার লুকা মায়সেন। তবে দলে অভিজ্ঞ বিদেশি ক্লেটন সিলভেইরা চোটের জন্য বাইরে রয়েছেন। ভারতীয় তরুণ ব্রিগেডও দলের বড় সম্পদ বলে মনে করছেন কিবু।
ফাইনালের আগে দলের ডিফেন্ডার বিক্রমজিত বলেন, “প্রতি ম্যাচে আমরা আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নেমেছি। এতে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি, বরং উল্টে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। ফাইনালেও আমরা সেই মানসিকতা নিয়ে নামব। ১০০ শতাংশ নয়, ২০০ শতাংশ দেব মাঠে।”
ডায়মন্ড কর্ণধার অভিষেক ব্যানার্জি মাঠে উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ক্লাব ম্যানেজমেন্টের থেকে সবরকম সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে জানালেন কিবু। তাঁর কথায়, “সকলের সমর্থন আমাদের সাহস দিচ্ছে। ফাইনালটা শুধু ক্লাবের জন্য নয়, গোটা বাংলার ফুটবলের জন্য বড় উপলক্ষ।”
নর্থইস্ট ইউনাইটেড যদি জেতে, তাহলে হবে পরপর দ্বিতীয় ট্রফি জয়। অন্যদিকে ডায়মন্ড হারবারের জন্য ট্রফি জেতা মানে ইতিহাস লেখা। এখন দেখার, যুবভারতীর মাটিতে কারা শেষ হাসি হাসে। তবে এক কথা স্পষ্ট, শনিবারের রাত বাংলার ফুটবল অধ্যায়ের এক নতুন গল্প লিখতে চলেছে।