জামশেদপুর এফসির এই সেন্টার ব্যাককে দলে টেনে নিল ডায়মন্ড হারবার

কলকাতার ফুটবল ময়দানে নতুন ইতিহাস গড়ছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। গত মরসুমে তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জোরে আই-লিগ ২ জয় করে এই বাংলার ফুটবল ক্লাব প্রথম ডিভিশন…

Wungngayam Muirang

কলকাতার ফুটবল ময়দানে নতুন ইতিহাস গড়ছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। গত মরসুমে তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জোরে আই-লিগ ২ জয় করে এই বাংলার ফুটবল ক্লাব প্রথম ডিভিশন আই-লিগে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং আসন্ন মরসুমে দলকে আরও শক্তিশালী করতে ম্যানেজমেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি একাধিক ফুটবলারকে দলে ভেড়ানো হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একাধিক ফুটবলারের যোগদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) একজন প্রতিভাবান ভারতীয় ডিফেন্ডার—উংগায়াম মুইরাং (Wungngayam Muirang)।

গত মরসুমে খালিদ জামিলের নেতৃত্বে জামশেদপুর এফসির হয়ে আইএসএলে খেলেছেন এই ২৬ বছর বয়সী ফুটবলার। মোট ছয়টি ম্যাচে মাঠে নেমে তিনি প্রতিবারই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রক্ষণভাগে তাঁর দৃঢ়তা এবং বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁকে বিশেষভাবে আলাদা করে তুলেছে। এই গুণগুলো মাথায় রেখেই ডায়মন্ড হারবার এফসির স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা তাঁকে দলে চেয়েছিলেন। অবশেষে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই ক্লাবের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে মুইরাং-এর যোগদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর উপস্থিতি নিঃসন্দেহে দলের রক্ষণভাগকে আরও শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে আসন্ন ডুরান্ড কাপ ২০২৫-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে।

   

মুইরাং-এর পটভূমি এবং পারফরম্যান্স
মণিপুরের উখরুলে জন্মগ্রহণকারী উংগায়াম মুইরাং অল্প বয়স থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয় এফসি পুনে সিটির রিজার্ভ দলের হয়ে আই-লিগ সেকেন্ড ডিভিশনে। এরপর তিনি গোকুলাম কেরালা এফসির হয়ে আই-লিগে খেলেন এবং ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু এফসিতে যোগ দিয়ে আইএসএল-এ পা রাখেন। বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে তিনি ২০২২ সালে ডুরান্ড কাপ জিতেছেন এবং ২০২১ সালে এএফসি কাপেও অংশ নিয়েছেন। জামশেদপুর এফসিতে তাঁর সময়কালে তিনি গত মরসুমে ডুরান্ড কাপে গোল করেছেন, যার মধ্যে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ হেডার ছিল। তাঁর বামপায়ের দক্ষতা এবং উচ্চতার সুবিধা তাঁকে একজন আদর্শ সেন্টার ব্যাক করে তুলেছে।

২০২৪ সালের ডুরান্ড কাপে জামশেদপুর এফসির হয়ে মুইরাং চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মোবাশির রহমানের কর্নার থেকে তিনি হেডারের মাধ্যমে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে, তিনি একটি পেনাল্টি ফাউলের জন্যও বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন, যদিও চেন্নাইয়িন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। মুইরাং-এর এই ধরনের পারফরম্যান্স তাঁকে ডায়মন্ড হারবারের কোচ কিবু ভিকুনার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে, যিনি তাঁর দলের রক্ষণভাগে শৃঙ্খলা এবং শক্তি যোগ করতে চান।

ডায়মন্ড হারবারের উত্থান এবং ডুরান্ড কাপের প্রস্তুতি
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডায়মন্ড হারবার এফসি মাত্র তিন বছরে কলকাতা ফুটবলের ‘চতুর্থ জায়ান্ট’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কলকাতা ফুটবল লিগের প্রথম ডিভিশনে শুরু করে তারা আই-লিগ ২ জিতে আই-লিগে উঠেছে। এই মরসুমে তারা প্রথমবারের জন্য ডুরান্ড কাপে অংশ নিচ্ছে, যেখানে তাদের গ্রুপে রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, মহামেডান স্পোর্টিং এবং বিএসএফ এফটি। এই কঠিন গ্রুপে প্রতিযোগিতা করার জন্য দলকে শক্তিশালী করতে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট কোনো কসুর বাকি রাখছে না।

উংগায়াম মুইরাং-এর যোগদান এই প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং আইএসএল-এর উচ্চমানের প্রতিযোগিতায় খেলার ক্ষমতা দলের রক্ষণভাগে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এছাড়া, দলের তারকা ফুটবলার ক্লেটন দা সিলভেরার মতো বিদেশি খেলোয়াড়রা ইতিমধ্যে শহরে পৌঁছে গেছেন, এবং অন্যান্য ফুটবলাররাও ধীরে ধীরে দলে যোগ দিচ্ছেন। কোচ কিবু ভিকুনা ডুরান্ড কাপকে আই-লিগের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন, যেখানে দলের শক্তি এবং দুর্বলতা পরীক্ষা করা যাবে।

Advertisements

ডুরান্ড কাপে ডায়মন্ড হারবারের সম্ভাবনা
ডুরান্ড কাপ ২০২৫-এর গ্রুপ বি-তে ডায়মন্ড হারবারের প্রথম ম্যাচ ২৮ জুলাই মহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটি কলকাতার কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে। গ্রুপে মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের উপস্থিতি ডায়মন্ড হারবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, গিরিক খোসলার মতো অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার এবং মুইরাং-এর মতো দৃঢ় ডিফেন্ডারের উপস্থিতিতে দল আশাবাদী। গিরিক গত মরসুমে আই-লিগ ২-এ পাঁচটি গোল করে দলের শীর্ষ স্কোরার ছিলেন এবং ডুরান্ড কাপে তাঁর পারফরম্যান্সের উপরও নজর থাকবে।

মুইরাং-এর যোগদান দলের রক্ষণভাগে স্থিতিশীলতা এবং আক্রমণাত্মক ক্ষমতা যোগ করবে। তিনি শুধুমাত্র রক্ষণে শক্তিশালী নন, বরং সেট-পিসে গোল করার ক্ষমতাও রাখেন, যা ডুরান্ড কাপের মতো টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাঁর আইএসএল অভিজ্ঞতা তরুণ খেলোয়াড়দের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হবে।

কলকাতা ফুটবলে ডায়মন্ড হারবারের উত্থান
ডায়মন্ড হারবার এফসি মাত্র তিন বছরে কলকাতা ফুটবলের একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে উঠেছে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান স্পোর্টিং-এর পাশাপাশি তারা চতুর্থ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের আই-লিগ ২ জয় এবং ডুরান্ড কাপে অংশগ্রহণ এই ক্লাবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রমাণ। কোচ কিবু ভিকুনা, যিনি পূর্বে মোহনবাগান এবং কেরালা ব্লাস্টার্সের সঙ্গে কাজ করেছেন, দলকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল শৈলীর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান এবং মহামেডানের মতো দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সহজ হবে না। তবে, মুইরাং-এর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এবং ক্লেটন দা সিলভেরার মতো বিদেশি তারকাদের সমন্বয়ে ডায়মন্ড হারবার আশা করছে গ্রুপ পর্ব থেকে নকআউটে উঠতে। ২৩ আগস্ট কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ফাইনালের আগে এই টুর্নামেন্টে তাদের পারফরম্যান্স দলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেবে।

উংগায়াম মুইরাং-এর সই ডায়মন্ড হারবার এফসির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। তাঁর আইএসএল এবং ডুরান্ড কাপের অভিজ্ঞতা দলের রক্ষণভাগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আসন্ন ডুরান্ড কাপে তাঁর পারফরম্যান্সের উপর সকলের নজর থাকবে, বিশেষ করে যখন দল কলকাতার ফুটবল জায়ান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কিবু ভিকুনার নেতৃত্বে এবং মুইরাং-এর মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার এফসি ভারতীয় ফুটবলে একটি নতুন শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রস্তুত।