ডুরান্ড কাপ ২০২৫ (Durand Cup 2025) সেমিফাইনালে নেমে ইতিহাসের পথে হেঁটে গেল ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC)। ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য ফাইনালে জায়গা করে নিল মাত্র চার বছরের এই ক্লাব। আর এই ঐতিহাসিক সাফল্যের নেপথ্যে যিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠলেন, তিনি আর কেউ নন ডায়মন্ড হারবার এফসির সভাপতি এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ৫-১ গোলে হার। তখন অনেকেই ভেবেছিল, এখানেই বুঝি শেষ ডায়মন্ড হারবারের স্বপ্ন। কিন্তু সেই সময়েই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নেন। ফুটবলারদের জন্য আয়োজন করেন এক নৈশভোজের। সেই নৈশভোজে ছিলেন কেবল খেলোয়াড় ও ক্লাব কর্মকর্তারা।
ম্যাচের শেষে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসলেন ডায়মন্ড হারবার এফসি দলের অন্যতম শীর্ষকর্তা তথা সচিব মানস ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ‘আমরা যখন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে ৫-১ গোলে হারলাম, সেইসময় আমাদের দলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ফুটবলারদের জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। ফুটবলারদের পাশাপাশি সেখানে শুধুমাত্র আমাদের কর্মকর্তারাই ছিল। সেখানে আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা তো একেবারে নতুন এসেছি। না হয় একটা ম্য়াচে হেরেই গেলাম! কিন্তু, মনোবল হারালে চলবে না। যদি মনোবল ঠিক রাখা যায়, যদি আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা যায়, তাহলে জয় একেবারে অবশ্যম্ভাবী।’
এই পেপ টকের পরেই কিবু ভিকুনার ডায়মন্ড হারবার দেখিয়ে দেয় নিজেদের পাল্টে যাওয়ার প্রমাণ। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা হারায় জামশেদপুর এফসিকে। এরপর সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ঐতিহ্যবাহী ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচ শুরু থেকেই হয়ে উঠেছিল জমজমাট। ৬৬ মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজার বাইসাইকেল কিকে এগিয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার। যদিও পরের মিনিটেই আনোয়ার আলি গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। কিন্তু ৮৩ মিনিটে ডায়মন্ড হারবারের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন জবি জাস্টিন।
ম্যাচের পর ক্লাব সচিব মানস ভট্টাচার্য বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলের কাছে জেতার মানে এই নয় যে ফাইনালও জিতে যাবে। ফুটবলে এখন আর নাম দিয়ে খেলা চলে না। আমরা সেটা আজ প্রমাণ করে দিলাম।” তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় ফুটবলে এখন বড় দল আর ছোট দলের মধ্যে ব্যবধান ধীরে ধীরে কমছে। খেলোয়াড়দের মান, কোচিং এবং পরিকল্পনা এই তিনটি যদি ঠিক থাকে। তাহলে কোনও দলকেই ছোট করে দেখা যায় না।”
মাত্র তিন বছর বয়স ডায়মন্ড হারবার এফসির। ইতিমধ্যেই তারা আই লিগ থ্রি ও টু জিতেছে। এখন কলকাতা লিগেও শীর্ষস্থান দখলের লড়াইয়ে রয়েছে। ডুরান্ডে এটাই তাদের প্রথম মরসুম এবং সেই প্রথম সিজনেই তারা পৌঁছে গেল ফাইনালে। এই প্রথম কোনও ক্লাব আই লিগ ফার্স্ট ডিভিশনে না খেলেই ডুরান্ড কাপে ফাইনালে উঠল। এমন নজির ভারতীয় ফুটবলে বিরল।
ডায়মন্ড হারবার এফসির ভাইস সহ-সভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। খেলার পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেন, পরিকল্পনা নেন। মাঠে বা মাঠের বাইরে, দলের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি পাশে থাকেন।’
এখন গোটা বাংলার ফুটবল মহলের নজর ডায়মন্ড হারবার এফসির দিকে। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসির। কিন্তু যাই হোক, এই দল যে এখন আর কোনও সাধারণ ক্লাব নয়, সেটা বুঝে গেছে গোটা দেশ। ডায়মন্ড হারবার শুধু ফাইনালে ওঠেনি, তারা দেখিয়ে দিয়েছে মনোবল, নেতৃত্ব আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ইতিহাস গড়া সম্ভব।
Diamond Harbour FC beat East Bengal by 2-1 & reach Durand Cup 2025 Final inspired by Abhishek Banerjee message