১৩৪তম ডুরান্ড কাপের ফাইনাল (Durand Cup 2025 Final) যেন এক রূপকথার দ্বৈরথ। শনিবার সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হচ্ছে অভিজ্ঞদের চ্যাম্পিয়ন দল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (NorthEast United FC) এবং নবাগত ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC)। একদিকে গতবারের বিজেতা, অন্যদিকে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পা রাখা ‘ডায়মন্ডস’। ম্যাচের শুরু বিকেল ৫.৩০টায়। যদিও এদিন ফাইনালের মূল আকর্ষণ হতে চলেছে আলাদিন আজারাই বনাম লুকা মাজসেনের লড়াই। একজন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা, অন্যজন নতুন দলের প্রধান ভরসা।
হাতে গুনে কয়েক বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল ডায়মন্ড হারবার এফসি। এর মধ্যে আই লিগ ২ জিতে জায়গা করে নিয়েছে দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টে। আর প্রথম সুযোগেই উঠে গেছে ফাইনালে। কোচ কিবু ভিকুনার ছেলেরা যেন নিজেদের প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে কিবুর মুখে ঝলমলে আত্মবিশ্বাস, “চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে খেলছি ঠিকই, তবে আমাদের দল প্রস্তুত। চাপ নয়, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
২০১৯ সালে মোহনবাগানের কোচ হিসেবে ডুরান্ড কাপ ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল কিবুকে। সেবার গোকুলম কেরালার কাছে স্বপ্নভঙ্গ। এবার নতুন দলে নতুন কাহিনি লিখতে চান অভিজ্ঞ স্প্যানিশ কোচ। তিনি বলেন, “এবার লড়াইটা আইএসএল দলের সঙ্গে, আমরা শুরু করছি নম্রভাবে কিন্তু জেতার বিশ্বাস নিয়ে।”
গ্রুপ লিগে মোহনবাগানের কাছে ১-৫ ব্যবধানে হারলেও মহামেডান ও বিএসএফকে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থান থেকে কোয়ার্টারফাইনালে উঠে ডায়মন্ড হারবার। তারপর জামশেদপুরকে ২-০ এবং ইস্ট বেঙ্গলকে ২-১ হারিয়ে জায়গা করে নেয় ফাইনালে। গোলরক্ষক মিরশাদ মিচুর অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, জবি জাস্টিনের চোখ ধাঁধানো খেলা এবং স্লোভেনিয়ান ফরোয়ার্ড লুকা মাজসেনের চারটি গোল। সব মিলে কিবুর দলের আত্মবিশ্বাস এখন আকাশছোঁয়া। যদিও আলাদিন আজারাইয়ের মতো স্ট্রাইকারকে সামলাতে হবে রক্ষণভাগকে। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার কোর্তাজার সেই দায়িত্বে রয়েছেন।
নর্থইস্ট ইউনাইটেড গতবার যুবভারতীতেই মোহনবাগানকে হারিয়ে প্রথম ডুরান্ড কাপ জিতেছিল। এবার লক্ষ্য টানা দ্বিতীয় খেতাব। শেষবার ১৯৯১ সালে ইস্টবেঙ্গল পরপর তিনবার জিতেছিল এই টুর্নামেন্ট। সেই রেকর্ড স্পর্শ করতে চায় জন আব্রাহামের মালিকানাধীন দল।
এই দলে রয়েছেন মরক্কোর গোল মেশিন আলাদিন আজারাই, যিনি ইতিমধ্যেই সাতটি গোল করে ফেলেছেন। পার্থিব গগৈ, সাম্পেরিও ও মিডফিল্ডে চেমা নুনেজ এবং অ্যান্ডি রদ্রিগেজ এই দলের মেরুদণ্ড। গোলরক্ষক গুরমিত সিং এবং অধিনায়ক জাবাকোর নেতৃত্বে রক্ষণভাগও দৃঢ়।
প্রশিক্ষকের চাতুর্যে দুই দলই সমানে সমান। নর্থইস্টের কোচ খুয়ান পেদ্রো বেনালি কৌশলে কিবুকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। তবে কিবু পাল্টা বার্তায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার দল ভয় পায় না। “চারটে আইএসএল দলের বিরুদ্ধে খেলেছি আমরা, হেরেছি শুধু মোহনবাগানের কাছে। বড় দলের বিরুদ্ধে খেলতে অভ্যস্ত,” বলেন কিবু।
যুবভারতীর ৬০ হাজার আসনের অর্ধেকই ভরাতে তৈরি ডায়মন্ড হারবার ম্যানেজমেন্ট। আশা করা যাচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার সমর্থক মাঠে উপস্থিত থাকবেন তাদের সমর্থনে। নর্থইস্টের জন্যও আলাদা গ্যালারি বরাদ্দ। তবে এ বছর মাঠে হাতে তোলা হবে না আসল ডুরান্ড ট্রফি। সেনাবাহিনীর ঘোষণামতে, বিজেতার হাতে ট্রফি তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এক বিশেষ অনুষ্ঠানে।
ডায়মন্ড হারবার কি রূপকথা সম্পূর্ণ করবে? নাকি নর্থইস্ট ইউনাইটেড দ্বিতীয়বারের মতো কাপ জিতে ইতিহাস লিখবে? উত্তর মিলবে শনিবার রাতেই। তবে যাই হোক, এদিন যুবভারতীতে হবে ভারতীয় ফুটবলের এক ঐতিহাসিক সন্ধ্যা।
Defending champions NorthEast United FC face history chasing Diamond Harbour FC in Durand Cup 2025 Final