ডার্বির পরাজয়ে ‘হতাশাগ্রস্থ’ দেবব্রত সরকারের যুক্তিতে ‘বিস্ফোরক’ তথ্য

কলকাতা, ১৯ অক্টোবর: ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ফুটবল ক্লাবের জন্য ২০২৪ সালের ফুটবল মরশুমে যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরপর সাতটি ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর সমর্থকদের মধ্যে…

East Bengal Official Debabrata Sarkar Expresses Opinion on Kolkata Derby

কলকাতা, ১৯ অক্টোবর: ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ফুটবল ক্লাবের জন্য ২০২৪ সালের ফুটবল মরশুমে যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরপর সাতটি ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর সমর্থকদের মধ্যে হতাশা চরমে পৌঁছেছে। ডুরান্ড কাপ থেকে ছিটকে পড়ার পর আইএসএল এবং এএফসি কাপেও পরাজয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে ক্লেটন সিলভার নেতৃত্বাধীন দল। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডার্বি ম্যাচেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয় ইস্টবেঙ্গল, যা তাদের পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে ঠেলে দিয়েছে।

ডার্বি ম্যাচের বিশ্লেষণ
শনিবারের ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। মোহনবাগানের দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং জেমি ম্যাকলারেনের গোলে সহজেই জয় ছিনিয়ে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। এই জয়ের ফলে মোহনবাগান পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে, আর ইস্টবেঙ্গল ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে দলটির পারফরম্যান্সের এই পতনের ফলে সমর্থকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সুপার কাপের পর থেকে ইস্টবেঙ্গল যে আশার আলো দেখিয়েছিল, তা এখন ম্রিয়মাণ।

   

দলের সামগ্রিক অবস্থা
ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পরপর ম্যাচ হারা, গোল করার ক্ষমতার অভাব এবং মানসিক চাপ—এই সব মিলিয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে এক চরম সংকটে ঠেলে দিয়েছে। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনও প্রেরণা বা আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে না, যা দলের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট। এমনকি নতুন কোচ অস্কার ব্রুজনও এখনও পর্যন্ত দলের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেননি।

দেবব্রত সরকারের মন্তব্য
এই অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার সাংবাদিকদের সামনে আসেন এবং দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “আমাদের দল সব থেকে বেশি পরাজিত হচ্ছে মানসিক ভাবে। কোচ যত তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করতে পারবে সেটা ভালো। দলের জন্য মানসিক সুস্থতা দরকার সবার আগে।” এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, দলের মূল সমস্যাটি মাঠের বাইরে মানসিক চাপ এবং প্রস্তুতির অভাব।

যখন তাকে টানা সাতটি ম্যাচে পরাজিত হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বলেন, “টানা সাত ম্যাচ হারা লজ্জার ঠিকই। তবে এটা শুধু লজ্জার নয়। আমরা টানা সতেরোটা ম্যাচ মোহনবাগানকে পরাজিত করেছি। সেটাও লজ্জার ছিল। আমরা চার বছর ধরে মোহনবাগানকে পরাজিত করেছি।”

রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক
ডার্বি ম্যাচের পেনাল্টি সিদ্ধান্ত নিয়েও দেবব্রত সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আজকে যে পেনাল্টি দেওয়া হয়েছে, তার আগে তো ওর হ্যান্ডবল হয়েছিল। রেফারি সেটা কিছুতেই দেখতে পেল না। এটা কোনও অজুহাত নয়, তবে এমন ছোটখাটো সমস্যাগুলো দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে।”

দেবব্রত সরকারের এই বক্তব্য সমর্থকদের মনোভাব এবং হতাশা প্রকাশের জন্যই। সমর্থকরা আশা করেছিল দলটি ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু প্রতিবারই ফলাফল বিপরীত হয়েছে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
দেবব্রত সরকারের কথায় একদিকে যেমন হতাশা, অন্যদিকে সামনের দিকে তাকানোর ইঙ্গিতও রয়েছে। দলের মধ্যে সমস্যা থাকলেও তিনি মনে করেন, নয়া কোচ অস্কার ব্রুজনের হাতে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে। নতুন কোচের অধীনে দলের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে, আর সেটা যত দ্রুত সম্ভব ঘটানো দরকার। সমর্থকদের ধৈর্য রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের উচিত সব ভুল শোধরানোর জন্য একসাথে কাজ করা। দলকে নিয়ে আমরা এখনও আশাবাদী।”

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
তবে সমর্থকরা এই ধারাবাহিক পরাজয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তারা দলের খেলোয়াড় এবং ম্যানেজমেন্টের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের দুর্বল পারফরম্যান্স নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। অনেকেই মনে করেন, দলের জন্য শুধুমাত্র মানসিকতাই নয়, দক্ষতা এবং কৌশলগত দিক থেকেও উন্নতি প্রয়োজন।

ইস্টবেঙ্গলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই মুহূর্তে দলটি শুধুমাত্র মাঠের পারফরম্যান্সেই নয়, মানসিকতা এবং কৌশলগত দিক থেকেও বড় পরিবর্তনের দরকার। দলের খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে সমর্থকরা হতাশ হলেও, নয়া কোচের অধীনে তাদের কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ইস্টবেঙ্গল এই সংকট থেকে কত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে।

ডার্বি ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে সমালোচনা আরও তীব্র হয়েছে। তবে দেবব্রত সরকারের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ম্যানেজমেন্ট এখনও দলের উন্নতির বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এখন সময়ই বলে দেবে, ইস্টবেঙ্গল তাদের এই খারাপ সময় থেকে কত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।