২০২৪ সালের ফিফা অ্যাওয়ার্ডস রাতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো ফুটবল বিশ্ব। ব্রাজিলীয় ফুটবল কিংবদন্তি মার্তা, যিনি নারী ফুটবলের “কুইন অফ ফুটবল” হিসেবে পরিচিত, পেলেন তার নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মার্তা অ্যাওয়ার্ড (Marta Award)। এই বিশেষ অ্যাওয়ার্ডটি তার অসাধারণ একক গোলের জন্য প্রদান করা হয়েছে, যা তিনি জামাইকার বিপক্ষে করেছিলেন। এই গোলটি ছিল এক আশ্চর্যজনক মুহূর্ত, যেখানে মার্তা প্রতিপক্ষের অঞ্চল থেকে বল নিয়ে জামাইকার এক ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে দুর্দান্ত একটি শট নেন, যা জালে জড়িয়ে যায়।
মার্তা অ্যাওয়ার্ডটি পুরুষদের পুশকাস অ্যাওয়ার্ডের সমান, যা ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং সেরা গোলের জন্য প্রদান করা হয়। গত বছর এই পুরস্কারটি জিতেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ খেলোয়াড় আলেহান্দ্রো গারনাচো, যিনি এভারটনের বিপক্ষে একটি অবিশ্বাস্য বাইসাইকেল কিকে গোল করেছিলেন।
মার্তা: নারী ফুটবলের আইকন
মার্তা ভিয়েরা ডা সিলভা, যিনি বর্তমানে “কুইন অফ ফুটবল” হিসেবে পরিচিত, তার ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, এবং ২০১৮ সালে তিনি ফিফা বিশ্বসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার জিতেছেন। ৫ বার টানা এই পুরস্কারটি জেতার কৃতিত্ব বিশ্বের কোনো ফুটবলারের নেই। তার ক্যারিয়ারে মোট ২০টিরও বেশি পুরস্কার রয়েছে, যা তার খেলার দক্ষতা এবং অসামান্য প্রতিভার প্রমাণ। এবার নতুন একটি পুরস্কার তার শোকেসে যোগ হলো, যা তার দীর্ঘ ফুটবল জীবনের আরেকটি চমকপ্রদ মুহূর্ত।
Marta wins the very first ‘Marta Award’ for best women’s football goal of 2024.
🐐 things
(via @FIFAWWC)pic.twitter.com/lfA4gTv8qG
— B/R Football (@brfootball) December 17, 2024
ইতিহাস রচনা: ডালিমা ছিব্বর মার্তা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করলেন
এদিনের অনুষ্ঠানটি ভারতের জন্যও ছিল বিশেষ। ভারতীয় মহিলা ফুটবলের তারকা খেলোয়াড় ডালিমা ছিব্বর, যিনি বর্তমানে কিকস্টার্ট এবং ভারতের জাতীয় দলের ডিফেন্ডার হিসেবে খেলে থাকেন, প্রথমবারের মতো মার্তা অ্যাওয়ার্ডটি মার্তার হাতে তুলে দিলেন। এই পুরস্কারটি মার্তা নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, প্রথমবারের মতো এর উপস্থাপক হিসেবে ডালিমার নাম উজ্জ্বল হলো। এটি ভারতীয় ফুটবল মহলের জন্য একটি গর্বের বিষয়, কারণ ডালিমা ছিব্বর ভারতীয় নারী ফুটবল দলের একজন আইকন।
ডালিমা ছিব্বরের ক্যারিয়ারের শুরু ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশীয় গেমসে, যেখানে তিনি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেক করেন। এরপর তিনি জাতীয় দলে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত হন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ, বাংলাদেশকে হারিয়ে তিনি তার প্রথম গোল করেছিলেন। এছাড়া, ২০১৯ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিরুদ্ধে একটি দারুণ ৪০ গজ ফ্রি কিক গোল করেন, যা তার ক্যারিয়ারে একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকে।
এই প্রতিভাবান ডিফেন্ডার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ পুরস্কার, “মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার” (এমভিপি) পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। ডালিমা আজকের দিনে ভারতের নারী ফুটবলের জন্য একটি বড় আইকন হয়ে উঠেছেন, এবং তার অভিনব পারফরম্যান্স ভবিষ্যত প্রজন্মের নারী ফুটবলারদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
Indian footballer – Dalima Chhibber was invited to handover the Puskas award at the #FIFABEST ceremony. pic.twitter.com/FQAmtxtltE
— Sameer Shirodkar (@Sameershirodka7) December 17, 2024
ভারতীয় নারী ফুটবলের উন্নয়নে ডালিমা ছিব্বরের ভূমিকা
ডালিমা ছিব্বর কেবল একজন ফুটবল তারকাই নন, তিনি ভারতীয় নারী ফুটবলের উন্নয়নের জন্য একটি বড় প্রতীক। তিনি তাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন যারা নারী ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী, কিন্তু যারা সুযোগের অভাবে পিছিয়ে আছে। ডালিমা তার খেলা দিয়ে শুধু ভারতীয় ফুটবলে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় নারী ফুটবলের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
আজকের দিনটি ভারতের ফুটবল ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করবে, কারণ ডালিমা ছিব্বর দেশের প্রথম নারী ফুটবলারের হিসেবে মার্তা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করলেন। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ এখন তার হাতে, এবং ডালিমা নিশ্চিতভাবে আরো অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করবেন।
ফুটবলে নারী পুরস্কারের নতুন দিগন্ত
মার্তা অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী ফুটবলের পুরস্কারের দিগন্ত আরও প্রসারিত হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু মার্তার গৌরবময় ক্যারিয়ারকেই সম্মান জানানো হয়নি, বরং নারী ফুটবলের প্রতি বিশ্ব ফুটবল মহলের আগ্রহ এবং সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্তা এবং ডালিমার মতো খেলোয়াড়রা যে ভাবে নিজেদের দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে নারী ফুটবল এখন আরও অনেক এগিয়ে যেতে সক্ষম।
ভারতীয় ফুটবলের গর্ব
ফিফা ২০২৪ অ্যাওয়ার্ডসের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ভারতের ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। ডালিমা ছিব্বরের মতো প্রতিভাবান ফুটবলারের হাত ধরে, ভারতীয় নারী ফুটবল বিশ্ব মঞ্চে আরও বেশি কৃতিত্ব অর্জন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা। মার্তা অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বে নতুন একটি ইতিহাস রচিত হয়েছে, এবং ডালিমা ছিব্বরের এই মুহূর্তের মাধ্যমে ভারতীয় নারী ফুটবলও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।