ধোনির অধিনায়কত্বে কলকাতার কাছে লজ্জাজনক হার চেন্নাইয়ের

আইপিএল ২০২৫-এর ২৫তম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) তাদের ঘরের মাঠ এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) কাছে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে। এমএস ধোনির অধিনায়কত্বে…

CSK vs KKR MS Dhoni Dhoni’s Captaincy Return Ends in Record Home Defeat

আইপিএল ২০২৫-এর ২৫তম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) তাদের ঘরের মাঠ এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) কাছে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে। এমএস ধোনির অধিনায়কত্বে ফিরে আসার ম্যাচে সিএসকে মাত্র ১০৩ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ঘরের মাঠে তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর গড়ে। কেকেআর মাত্র ১০.১ ওভারে ১০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয়, যা সিএসকে’র জন্য একটি বিব্রতকর পরাজয়।

৬৮২ দিন পর অধিনায়ক হিসেবে ফিরে আসা ধোনির জন্য এই ম্যাচটি ছিল একটি বিশেষ প্রত্যাবর্তন। তবে, টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা সিএসকে কেকেআরের বোলিং আক্রমণের সামনে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। সুনীল নারিনের নেতৃত্বে কেকেআরের স্পিন আক্রমণ এবং হর্ষিত রানার গতি সিএসকে’র ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দেয়। নারিন ৩টি উইকেট দখল করেন, যার মধ্যে ছিল ধোনির মূল্যবান উইকেট। বরুণ চক্রবর্তী এবং হর্ষিত রানা দুটি করে উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ম্যাচের শুরুটা সিএসকে’র জন্য ভালো হয়নি। ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে কেকেআরের বোলারদের সামনে সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১৮ রান তোলার পর সিএসকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। মইন আলি, যিনি এই ম্যাচে কেকেআরের হয়ে খেলছিলেন, প্রথম বলেই প্রায় উইকেট পেয়েছিলেন এবং পরবর্তী ওভারে কনওয়েকে এলবিডব্লিউ করে সিএসকে’র শুরুর ধাক্কা আরও তীব্র করেন।

রাহুল ত্রিপাঠি, রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন। জাদেজা শূন্য রানে এবং ধোনি মাত্র ১ রান করে আউট হন, যা চিপকের দর্শকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিবম দুবে (৩১ রানে অপরাজিত) এবং বিজয় শঙ্কর (২৯ রান) কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, তা দলকে লজ্জাজনক স্কোর থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

ধোনির আউট হওয়ার ঘটনাটি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। নারিনের একটি স্লাইডারে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর ধোনি রিভিউ নিয়েছিলেন। আল্ট্রা-এজে সামান্য শব্দ দেখা গেলেও তৃতীয় আম্পায়ার মাঠের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সিএসকে সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা গেছে। তবে, ধোনি কোনো বিতর্ক ছাড়াই মাঠ ছেড়ে চলে যান।

কেকেআরের তাড়া ছিল একপেশে। কুইন্টন ডি কক এবং সুনীল নারিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে সিএসকে বোলারদের কোনো সুযোগ দেননি। ডি কক তৃতীয় ওভারে খলিল আহমেদের বলে দুটি ছক্কা মারেন, যা কেকেআরের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। যদিও অংশুল কাম্বোজ ডি কককে আউট করেন, ততক্ষণে কেকেআর জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে যায়। অধিনায়ক অজিঙ্ক্য রাহানে (১৬ রানে অপরাজিত) এবং রিঙ্কু সিং (১ রানে অপরাজিত) অল্প সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। সিএসকে’র বোলাররা, বিশেষ করে খলিল আহমেদ এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কেকেআরের ব্যাটসম্যানদের থামাতে ব্যর্থ হন।

Advertisements

এই পরাজয় সিএসকে’র জন্য একটি বড় ধাক্কা। টানা চারটি ম্যাচ হারের পর এই ম্যাচে জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছিল দলটি। তবে, ধোনির অধিনায়কত্বে ফিরেও দলের ভাগ্য বদলায়নি। চিপক, যেটি একসময় সিএসকে’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল, এই মরশুমে তাদের জন্য স্বস্তির জায়গা হয়ে উঠছে না। অন্যদিকে, কেকেআর এই জয়ের মাধ্যমে তাদের পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। নারিন এবং চক্রবর্তীর স্পিন জাদু এবং রাহানের শান্ত নেতৃত্ব দলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়েছে।

ধোনির নেতৃত্বে ফিরে আসা সিএসকে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। তবে, এই ম্যাচে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং বোলিংয়ের অক্ষমতা তাদের আশা ভঙ্গ করেছে। শিবম দুবের আঘাত থেকে ফিরে আসা এবং বিজয় শঙ্করের কিছুটা প্রতিরোধ ছাড়া সিএসকে’র ব্যাটিং লাইনআপ কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ধোনি নিজেও ব্যাট হাতে কোনো অবদান রাখতে পারেননি, যা সমর্থকদের জন্য আরও হতাশার কারণ।

এই ম্যাচে সিএসকে’র সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। টানা পাঁচটি পরাজয়ের পর দলের মনোবল তুলতে এবং প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকতে তাদের দ্রুত ফিরে আসতে হবে। ধোনির অভিজ্ঞতা এবং কৌশল এখন দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, কেকেআর এই জয়ের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে এবং আগামী ম্যাচগুলিতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে।

এই ম্যাচে চিপকের দর্শকরা ধোনির প্রত্যাবর্তন উদযাপন করলেও, ফলাফল তাদের হতাশ করেছে। সিএসকে’র জন্য এখন প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ, এবং ধোনির নেতৃত্বে দল কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, তা দেখার জন্য সমর্থকরা অপেক্ষায় রয়েছেন।