আইপিএল ম্যাচের আগের দিন সাধারণত স্টেডিয়ামের চারপাশটা বেশ শান্ত থাকে। দলগুলো নিজেদের কৌশল মাটিতে নামানোর প্রস্তুতি নেয়। তবে মঙ্গলবার ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন্সের চিত্রটা ছিল একেবারে আলাদা। বিকেলের দিকে চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) টিমবাস যখন গোষ্ঠ পাল সরণি ধরে স্টেডিয়ামের সামনে এসে পৌঁছল, তখন চারদিক থেকে ভেসে এলো একটাই নাম—”ধোনি, ধোনি, ধোনি!”
আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) ইতিমধ্যেই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে। অন্যদিকে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন মরণ-বাঁচনের। কিন্তু তবুও, ফোকাসে একটাই নাম—মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। মঙ্গলবার সিএসকে টিমবাস মাঠে আসলেও মাহি এলেন না অনুশীলনে। টানা দ্বিতীয় দিন প্র্যাক্টিস এড়িয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন কুল। কিন্তু তাতে তাঁর জনপ্রিয়তায় এক বিন্দুও ভাটা পড়েনি।
ভারতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ছেন স্প্যানিশ কোচ? ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা
ইডেন গার্ডেন্সের সামনের ছোট্ট বাগান, টবে সাজানো পাতাবাহারি গাছ আর বোগেনভেলিয়ার ঝাড়—সব যেন তছনছ হয়ে গেল সেই জনতার ভিড়ে। এতটাই ধাক্কাধাক্কি হয়েছে যে কয়েকটি টব পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে। অথচ সেদিন কোনও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনাও ছিল না। কেবল একটাই ঝড় ছিল—ধোনির প্রতি উন্মাদনার ঝড়।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, ধোনি মাঠে না থেকেও কীভাবে এতটা প্রভাব ফেলতে পারেন? সিএসকের বোলিং কোচ এরিক সিমন্স তার উত্তর দিয়ে দেন, “ধোনি শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি একজন নেতা, একজন গাইড। তাঁর উপস্থিতি মানেই ড্রেসিংরুমে আলাদা আত্মবিশ্বাস। তিনি দলের সিদ্ধান্তে সরাসরি যুক্ত থাকেন, কিন্তু কখনও কিছু চাপিয়ে দেন না। তরুণদের হাতে ধরে এগিয়ে নিয়ে যান।”
ভারতীয় ফুটবলের নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েছেন কোচ জামিল!
চেন্নাইয়ের নেতৃত্ব আবার ফিরে এসেছে ধোনির হাতে, কারণ নিয়মিত অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, মাঝ সিজনের হাল ধরা ধোনির জন্য নতুন কিছু নয়। বরং, এটাই তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা।
ইডেনে ম্যাচ মানেই হলুদ রঙে রাঙা গ্যালারি, সেটাই হোক চিপক বা কেকেআরের ঘরের মাঠ। গ্যালারির গর্জনে বিপক্ষ দলও প্রায় ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’-এর অনুভূতি পায়। কেকেআরের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এই ব্যাপারটা জানেন ভালো করেই। তবে তাঁর বক্তব্য, “আমরা বাইরের আওয়াজে কান দিই না। আমাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের খেলায় মন দিচ্ছে।”
সিএসকে ইতিমধ্যেই প্লে অফ থেকে ছিটকে গেলেও, নাইটদের জন্য এখন একেকটা ম্যাচ মানে একেকটা ফাইনাল। তার মধ্যেও তাঁরা জানেন, ধোনি মানেই অন্য লড়াই। ধোনির উপস্থিতি মানে, কৌশলে তাঁর প্রভাব থাকবেই, এমনকি প্র্যাক্টিসে না এলেও। কেকেআরের চিন্তা এখন শুধুই পারফরম্যান্স ঘিরে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ‘ধোনি-ফ্যাক্টর’ এড়িয়ে যাওয়া সহজ নয়।
সুপার কাপের ভবিষৎ নিয়ে বড় বার্তা মার্কুয়েজের!
ম্যাচের আগে সিএসকে শিবিরে মইন আলি ও আনরিখ নখিয়া অনুশীলনে ছিলেন, তাদের ব্যাটিংয়ে বাড়তি নজরও দেখা গেল। স্পষ্ট, শেষ দিকের এই ম্যাচগুলিতেও চেন্নাই হাল ছেড়ে দিতে রাজি নয়।
বুধবার ইডেনে সেই মাহি-শো দেখতে তৈরি গোটা কলকাতা। তিনি খেলবেন, এটুকু নিশ্চিত হলেও, তিনি যে ম্যাচের আগেই পুরো শহরকে মাত করে দিয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ম্যাচের আগে মাঠে না এসেও ম্যাচ ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।