গিনেস রেকর্ডে রোনাল্ডো ও মেসির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

ফুটবলের মাঠে যিনি একের পর এক অসাধারণ কীর্তি গড়ে চলেছেন, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) আবারও শিরোনামে। সম্প্রতি ইউইএফএ নেশনস লিগ ২০২৪-২৫-এর কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয়…

Cristiano Ronaldo

ফুটবলের মাঠে যিনি একের পর এক অসাধারণ কীর্তি গড়ে চলেছেন, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) আবারও শিরোনামে। সম্প্রতি ইউইএফএ নেশনস লিগ ২০২৪-২৫-এর কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে পর্তুগাল বনাম ডেনমার্ক ম্যাচের আগে তিনি আরেকটি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এই ম্যাচে পর্তুগাল ডেনমার্ককে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে রোনাল্ডো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৩৩টি জয়ের রেকর্ড গড়েছেন, যা তাকে ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক জয়ী খেলোয়াড়ের আসনে বসিয়েছে। এই অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সংখ্যাও এখন ৪১-এ পৌঁছেছে, যা আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির সমান।

   

ফুটবলের মাঠ থেকে সামাজিক মাধ্যম: রোনাল্ডোর অপ্রতিরোধ্য যাত্রা

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, যিনি “সিআর৭” নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত, ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী নামগুলোর একটি। পর্তুগালের ছোট্ট ক্লাব স্পোর্টিং সিপি-তে তার ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল। সেখানে তরুণ রোনাল্ডো তার অসাধারণ প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন। তার দক্ষতা এবং সম্ভাবনা দেখে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দৈত্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তাকে দলে ভেড়ান। ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টারে যোগ দেওয়ার পর থেকে রোনাল্ডোর উত্থান আর থামেনি। ২০০৭-০৮ মৌসুমে তিনি প্রিমিয়ার লিগে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় নিজের নাম লেখান।

২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর রোনাল্ডো তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে যান। স্প্যানিশ লা লিগার এই ক্লাবের হয়ে তিনি ৪৩৮টি ম্যাচে ৪৫০টি গোল করে ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচবার ইউইএফএ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় করেন। এছাড়াও, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা প্রথম খেলোয়াড়ও তিনিই। এই অর্জনগুলো তার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যা তার অসাধারণ কৃতিত্বের প্রমাণ।

গিনেস রেকর্ডের রাজা: ৪১টি অর্জনের গল্প

রোনাল্ডোর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তালিকা শুধু ফুটবল মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। এছাড়াও, সামাজিক মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। তার ‘ইউআর ক্রিশ্চিয়ানো’ নামে ইউটিউব চ্যানেলটি প্ল্যাটফর্মের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল চ্যানেল হিসেবে গিনেস রেকর্ড অর্জন করেছে। ফুটবলের বাইরেও তার প্রভাব এতটাই যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি ফলোয়ারের রেকর্ডও তার দখলে।

সম্প্রতি পর্তুগাল বনাম ডেনমার্ক ম্যাচের আগে তাকে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৩২টি জয়ের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। ম্যাচে জয়ের পর এই সংখ্যা ১৩৩-এ উন্নীত হয়, যা তার আরেকটি গিনেস রেকর্ডের পথ প্রশস্ত করেছে। বর্তমানে তার গিনেস রেকর্ডের সংখ্যা ৪১, যা তাকে লিওনেল মেসির সমকক্ষে নিয়ে গেছে। দুই ফুটবল কিংবদন্তির এই প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীদের মনে উত্তেজনা জাগিয়ে তুলেছে।

Advertisements

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য: ১০০০ গোল এবং ২০২৬ বিশ্বকাপ

৩৯ বছর বয়সেও রোনাল্ডোর ফিটনেস এবং উদ্যম অবিশ্বাস্য। তিনি এখনও তার ক্লাব এবং দেশের হয়ে মাঠে ঝড় তুলছেন। তার লক্ষ্য এখন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে খেলা এবং ক্যারিয়ারে ১০০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা। বর্তমানে তার গোল সংখ্যা ৮০০-এর বেশি, এবং তিনি প্রতিটি ম্যাচে নতুন গোল যোগ করে এগিয়ে চলেছেন। ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোনাল্ডোর শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক দৃঢ়তা তাকে এই অসাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে।

বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে রোনাল্ডো

বাংলায় ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা অপরিসীম। কলকাতার গলিতে মেসি-রোনাল্ডো বিতর্ক যেন প্রতিদিনের আলোচনার অংশ। রোনাল্ডোর এই অর্জনগুলো বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের মনে নতুন করে উৎসাহ জাগিয়েছে। অনেকেই বলছেন, “রোনাল্ডো শুধু খেলোয়াড় নন, তিনি একটি প্রেরণা।” তার কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং সাফল্যের গল্প তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি উদাহরণ।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর যাত্রা শুধু ফুটবলের গল্প নয়, এটি একটি স্বপ্নদ্রষ্টার গল্প। পর্তুগালের ছোট্ট শহর থেকে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছে তিনি প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ়তার কাছে কোনো বাধাই অসম্ভব নয়। ৪১টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মালিক এই তারকা এখনও থামেননি। তার পরবর্তী লক্ষ্য এবং অর্জনের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা ফুটবল বিশ্ব।