অ্যাডিলেড, ২৩ অক্টোবর: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পার্থে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে হতাশাজনক ব্যর্থতার পর প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি-কে ঘিরে কড়া মন্তব্য করেছেন। কাইফের মতে, বর্তমানে কোহলি তার “ব্যাটিং জোনে নেই” এবং ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এটাই ছিল কোহলির ভারতের জার্সিতে প্রত্যাবর্তন। তবে প্রত্যাবর্তনটা একেবারেই সুখকর হয়নি। পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে তিনি মাত্র ৮ বল খেলে শূন্য রানে আউট হন। অফ-স্টাম্পের বাইরে একটি বলের পেছনে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে কুপার কনোলিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
কাইফের বিশ্লেষণ
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কাইফ বলেন,
“একজন খেলোয়াড় ততক্ষণই ভালো যতক্ষণ তার ছন্দ, ব্যাটিং ফর্ম এবং নিয়মিত ম্যাচ খেলার অভ্যাস থাকে। যখন প্রতিদিন বা দু’দিন অন্তর ম্যাচ খেলা হয়, তখন চোখও তীক্ষ্ণ থাকে। তখন ব্যাটসম্যান সহজেই বুঝতে পারে বল ইন-সুইং নাকি আউট-সুইং, ইয়র্কার নাকি স্লোয়ার ওয়ান। সেটাই আসল ‘ব্যাটিং জোন’। কোহলি আপাতত সেই জোনে নেই।”
কাইফের মতে, কোহলি বর্তমানে আউট অফ টাচ, তাই পার্থে এত দ্রুত আউট হতে হয়েছে।
অ্যাডিলেডে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
ভারতীয় দলের সঙ্গে এখন কোহলি অ্যাডিলেডে, যেখানে আগামীকাল দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে নামবেন তিনি। পরিসংখ্যান বলছে, অ্যাডিলেড ওভাল কোহলির প্রিয় ভেন্যু। এখানে তিনি ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, ১৭ ইনিংসে ৯৭৫ রান করেছেন গড়ে ৬৫.০০। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ-সেঞ্চুরি, সেরা স্কোর ১৪১। কেবল তাই নয়, অ্যাডিলেডে খেলা সমস্ত বিদেশি ব্যাটসম্যানের মধ্যে সেরা রানসংগ্রাহকও তিনি।
২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত কোহলি ৮ ইনিংসে ২৭৫ রান করেছেন, যেখানে রয়েছে একটি শতরান ও দুটি অর্ধশতরান। তবে তার গড় মাত্র ৩৯.২৮, যা তার মানদণ্ডে কিছুটা নিচে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা: কোহলি বনাম জাম্পা
দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার তারকা লেগ-স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা-ও ফিরছেন। জাম্পার রেকর্ড কোহলির বিরুদ্ধে বেশ ভালো। ১৫ ইনিংসে জাম্পা ছয়বার কোহলিকে আউট করেছেন। গড়ে কোহলি তার বিরুদ্ধে ৪৭.৮৩ রান করলেও লড়াইটা সবসময় তীব্র হয়েছে। কাইফ সতর্ক করে দিয়েছেন,
“অস্ট্রেলিয়া এবার আরও শক্তিশালী দল। জাম্পা ফিরছে, ওর রেকর্ড বিরাটের বিরুদ্ধে ভালো। তাই উইকেটে সেট হয়ে দীর্ঘ সময় ব্যাট করা অত্যন্ত জরুরি।”
রোহিত-কোহলির ভিন্নতা
কাইফ একই সঙ্গে রোহিত শর্মার ব্যাটিং স্টাইলের কথাও উল্লেখ করেন। তার মতে,
“রোহিত শর্মা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং খেলেন। বারবার শর্ট বল পুল করার চেষ্টা করবেন, সেটা যদি মিসও হয়। রোহিত যতবার রান পেয়েছেন, সব সময় বোলারদের ওপর চাপ তৈরি করে খেলেছেন। অন্যদিকে, কোহলি গ্রাউন্ডেড শট খেলেন, বিশেষ করে পাওয়ারপ্লেতে। দুই ব্যাটসম্যানের দর্শন আলাদা।”
কোহলির কাছে অ্যাডিলেড ওভালের ম্যাচটি তাই শুধু ফর্মে ফেরার সুযোগ নয়, বরং ২০২৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভারতীয় সমর্থকরা আশা করছেন, তার প্রিয় মাঠে কোহলি আবারও পুরনো ছন্দ খুঁজে পাবেন। তবে জাম্পার চ্যালেঞ্জ এবং অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী আক্রমণ মোকাবিলা করাই হবে তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।