আবারও দুঃসংবাদ এল দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট মহল থেকে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মঙ্গলবারের ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণের (Pakistan Blast) পর মাঝপথেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে নির্ধারিত ত্রিদেশীয় হোয়াইট-বল সিরিজটি কার্যত স্থগিত হয়ে গেল।
💥 বিস্ফোরণ ও আতঙ্কের পর ফেরার সিদ্ধান্ত
মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদের একটি ব্যস্ত এলাকায় আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত ও বহুজন আহত হন। ঘটনার সময় পাকিস্তানে অবস্থান করছিল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল, যারা করাচিতে অনুশীলন করছিল আসন্ন সিরিজের জন্য।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) প্রথমে আশ্বস্ত করলেও পরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি দেখে শ্রীলঙ্কা বোর্ডের (SLC) সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে। রাতভর আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় — দলটি নিরাপত্তার স্বার্থে তৎক্ষণাৎ দেশে ফিরে যাবে।
শ্রীলঙ্কার বোর্ডের প্রতিক্রিয়া
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,
“আমাদের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সহায়তা সত্ত্বেও আমরা মনে করেছি এই মুহূর্তে দেশে ফেরা শ্রেয়। ক্রিকেটের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তাই এখন বড়।”
শ্রীলঙ্কা দলের অধিকাংশ সদস্য ইসলামাবাদে অবস্থান করছিলেন, যেখানে ম্যাচের প্রস্তুতি চলছিল। বিস্ফোরণের খবর আসার পর থেকেই খেলোয়াড় ও পরিবারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।
🏏 বাতিল হলো ত্রিদেশীয় সিরিজ
ত্রিদেশীয় এই হোয়াইট-বল সিরিজে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, আপাতত সিরিজটি স্থগিত, তবে নতুন সূচি পরে ঘোষণা করা হবে।
PCB-এর এক মুখপাত্র বলেন,
“আমরা শ্রীলঙ্কা দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত হলে ভবিষ্যতে সিরিজটি পুনরায় আয়োজন করা হবে।”
⚠️ পাকিস্তানে ক্রিকেট ও নিরাপত্তা ইস্যু
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর জঙ্গি হামলার পর দীর্ঘ এক দশক পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ ছিল। বহু বছর পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফের শুরু হলেও এই বিস্ফোরণ আবারও সেই পুরনো আতঙ্ক ফিরিয়ে আনল।
পাকিস্তানে এখন টানা দুটি নিরাপত্তা ঘটনা ঘটেছে — কেবলমাত্র তিন মাস আগেই কোয়েটায় সামরিক কনভয়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এবার রাজধানী ইসলামাবাদের কেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলা হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে—আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবারও কি পাকিস্তান ছাড়বে?
🧭 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,
“এটি দেশের বিরুদ্ধে এক কাপুরুষোচিত হামলা। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের অবস্থান কঠোর থাকবে। বিদেশি খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক দলগুলির আস্থা পুনরুদ্ধার করা এখন PCB-এর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
📸 খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ
দলের কয়েকজন সদস্যের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণের পর থেকেই খেলোয়াড়দের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দেয়। অনেকের পরিবারের সদস্যরা কল করে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ করেন।
একজন শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার নাম প্রকাশ না করে বলেন,
“আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছিলাম, কিন্তু এখন সবাই শুধু নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চায়।”
🌍 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস হতে পারে না।”
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও শ্রীলঙ্কার সিদ্ধান্তের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
🏁 ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই ঘটনার ফলে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডার নতুন করে প্রশ্নের মুখে। আগামী মাসে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ, এরপর পাকিস্তান সুপার লিগ (PSL)—সবই এখন ঝুঁকির মধ্যে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন,
“একবার আস্থা নষ্ট হলে তা ফেরানো কঠিন। পাকিস্তানকে এখন শুধু নিরাপত্তা নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারেও মন দিতে হবে।”


