ঢাকা: বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবারও ফিরে এল বিতর্কের ছায়া। এক সময়ের দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার, যিনি একদিকে যেমন রেকর্ড গড়েছিলেন, অন্যদিকে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে নিজের কেরিয়ার শেষ করে ফেলেছিলেন তিনি আবার ফিরলেন জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে, যিনি এবার বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (BCB) সোমবারের বৈঠকের পর ঘোষণা করে যে, আগামী আয়ারল্যান্ড সিরিজে আশরাফুল জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করবেন। একই সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার ও প্রাক্তন নির্বাচক আব্দুর রজ্জাককে টিম ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেট মহলে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া একদল বলছেন, দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য প্রত্যেকেই, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “যিনি দেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করেছিলেন, তিনি কি আদৌ এই দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্য?”
ম্যাচ গড়াপেটার ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বিস্ফোরক’ পোস্ট সৌভিকের
রজ্জাক সংবাদমাধ্যমে জানান, “আশরাফুলের ওপেনিংয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁর ব্যাটিং টেকনিকের জ্ঞান তরুণদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। তাই আমরা মনে করেছি, এই দায়িত্বের জন্য তিনিই উপযুক্ত।”
তবে বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। আশরাফুলের নাম শুনলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনও সেই ২০১৩ সালের স্মৃতিতে ফিরে যান, যখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL)-এর সময়ে তিনি বুকিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ম্যাচে ইচ্ছাকৃত খারাপ পারফরম্যান্স করেন বলে তদন্তে উঠে আসে। তিনি স্বীকারও করেন যে কয়েকটি ওভারে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজে শট খেলেছিলেন, যাতে ম্যাচের ফলাফল প্রভাবিত হয়।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরে সেই শাস্তি কমিয়ে ৫ বছর করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং কোচিংয়ে মন দেন।
এক সময়ের “বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান” নামে পরিচিত আশরাফুলের ক্রিকেট কেরিয়ার ছিল উত্থান-পতনে ভরা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে তিনি খেলেছেন ৬১টি টেস্ট ম্যাচ, করেছেন ৬টি সেঞ্চুরি, ও ১৭৭টি ওয়ানডে ম্যাচে করেছেন ৩৪৬৮ রান। রয়েছে ৩টি শতরান ও ২০টি অর্ধশতরান। পেশাদার কেরিয়ারে তিনি ৩৩টি সেঞ্চুরি করেছেন এবং মোট রান ১৬ হাজারেরও বেশি।
বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সিরিজ শুরু হবে ১১ নভেম্বর সিলেটে, দ্বিতীয় ম্যাচ ১৯ নভেম্বর মিরপুরে। দুটি টেস্ট এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিয়ে এই সিরিজে দেখা যাবে, নতুন কোচ হিসেবে আশরাফুল কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন।
অনেকেই বলছেন, “যদি আশরাফুল নিজের অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে সৎ খেলার বার্তা দেন, তবে এই নিয়োগটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নতুন অধ্যায় হতে পারে।” আবার অন্য পক্ষের প্রশ্ন, “যিনি একবার ক্রিকেটের পবিত্রতাকে কলঙ্কিত করেছেন, তাঁর হাতে তরুণ প্রজন্মের ব্যাটিং শেখানো কি ঠিক?”
তবে এত সব বিতর্কের মাঝেও একটা বিষয় স্পষ্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবার একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতীতের দাগ মুছে আশরাফুল কি নতুন দায়িত্বে নিজের প্রমাণ দিতে পারবেন? সেটাই এখন সময়ের অপেক্ষা।


