পুরুষদের ক্রিকেটে ১৯৮৩ আর ২০১১, দুটি বছর চিরস্মরণীয়। এবার কি মহিলাদের ক্রিকেটেও (ICC Womens World Cup) যুক্ত হতে চলেছে ২০২৫? রবিবারের ফাইনালেই সেই প্রশ্নের উত্তর। হরমনপ্রীত কৌরদের সামনে এখন ইতিহাসের হাতছানি। ঘরের মাঠে এক দিনের বিশ্বকাপ জিততে পারলে বদলে যেতে পারে ভারতের মহিলা ক্রিকেটের মানচিত্র, যেমন বদলে দিয়েছিল কপিল দেবদের ১৯৮৩ সালের ঐতিহাসিক জয়।
তৃতীয়বারের মতো মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছে ভারত। ২০০৫ ও ২০১৭ দু’বারই ফাইনালে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মিতালি রাজের দলকে। এবার তাঁর উত্তরসূরি হরমনপ্রীত কৌরের হাতে সেই অসমাপ্ত গল্প শেষ করার সুযোগ। টুর্নামেন্টের শুরুটা মন্দ হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেয়েছে ভারতীয় শিবির। টানা তিনটি পরাজয়ের পর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পা রেখেছে ‘উইমেন ইন ব্লু’।
ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে ভারতীয় ড্রেসিংরুম
সেমিফাইনালে জেমাইমা রদ্রিগেজের দুর্দান্ত ইনিংস, অধিনায়ক হরমনপ্রীতের ফর্মে ফেরা, আর স্পিনারদের ধার সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর দল। যদিও দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ওপেনার স্মৃতি মন্ধানার ব্যাটে বড় রান আসছে না, তবুও কোচের আস্থায় ভর করে মাঠে নামছেন ক্রিকেটাররা। “চেনা পিচে কাউকে দিদিগিরি করতে দেব না,” সেমিফাইনালের পর জেমাইমার এই মন্তব্যই যেন ভারতীয় দলের মনোভাব প্রকাশ করছে।
প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিহাস গড়ার প্রত্যাশায়
প্রোটিয়া অধিনায়ক লরা উলভার্টের দলও ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়। ফাইনালে উঠে ইতিমধ্যেই এক নজির গড়েছে তারা। জয় পেলে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ধারাবাহিকতার অভাবই তাদের বড় সমস্যা। লিগ পর্বে কখনও দুর্দান্ত, কখনও নিষ্প্রভ। তবুও তাজ়মিন ব্রিটস, মারিজন কাপ, নাদিন ডি ক্লার্ক ও স্পিনার ননকুলুলেকো এমলাবা, চারজনই ভারতের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর হতে পারেন।
পরিসংখ্যান বলছে, পাল্লা ভারী ভারতের
এক দিনের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৩৪ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তার মধ্যে ২০ বার জিতেছে ভারত, ১৩ বার দক্ষিণ আফ্রিকা, একটি ম্যাচ ফলহীন। সাম্প্রতিক ফর্মও ভারতের পক্ষে— ২০২৪ সাল থেকে দুই দলের ছয়টি মুখোমুখি লড়াইয়ে পাঁচটিতে জিতেছে হরমনপ্রীতের দল।
Captain Harmanpreet Kaur is ready to lead the #WomenInBlue with pride at the biggest stage 🔥#TeamIndia | #Final | #CWC25 | #INDvSA | @ImHarmanpreet pic.twitter.com/QBMquGaJk4
— BCCI Women (@BCCIWomen) November 2, 2025
চেনা মাঠ, অচেনা চাপ
ফাইনাল মানেই চাপ। ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি প্রত্যাশার ভারও বিশাল। হরমনপ্রীত ও তাঁর সতীর্থরা জানেন, রবিবারের জয় কেবল ট্রফি নয়, হতে পারে ভারতের মহিলা ক্রিকেটের নবযুগের সূচনা।
যেমন ১৯৮৩ বিশ্বজয়ে কপিল দেবরা দেশজুড়ে ক্রিকেট বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তেমনই এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে পারে হরমনপ্রীত-মন্ধানাদের হাত ধরে। ইতিহাসের অপেক্ষায় গোটা দেশ— ফাইনালের দিনে চোখ থাকবে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, যেখানে হয়তো জন্ম নেবে ভারতীয় ক্রিকেটের আরেকটি স্বর্ণালি অধ্যায়।


