রায়পুর: দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ (India vs South Africa 2nd ODI)এই হতাশা কাটিয়ে উঠতেই ভারতের লক্ষ্য ছিল ওডিআই সিরিজ জিতে মর্যাদা ফেরানো। সিরিজের প্রথম ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জয়ের পর দ্বিতীয় ওডিআইয়ে সেই আত্মবিশ্বাস যেন দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু রায়পুরে এক ঝড়ো, ওঠাপড়ায় ভরা ম্যাচে চার উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারতে হলো টিম ইন্ডিয়াকে। সিরিজ এখন ১-১ সমানে, আর ৬ ডিসেম্বর বিশাখাপত্তনমে শেষ ম্যাচ ডু অর ডাই।
টস-ভাগ্য আবারও ভারতের বিপক্ষে। এ নিয়ে টানা ২০ ওডিআই ম্যাচে টস হারল ভারত—যা আধুনিক ক্রিকেটে এক অদ্ভুত কীর্তি। প্রথম ম্যাচে এইডেন মারক্রামের কাছে টস হার, দ্বিতীয় ম্যাচে তেম্বা বাভুমার কাছে। আর টসের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও যেন হাতছাড়া হয়ে যায় রোহিত শর্মাদের। তবে শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না। জয়সওয়াল (২২) ও রোহিত (১৪) ব্যাটিং শুরু করেন বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে, কিন্তু দু’জনেই দ্রুত সাজঘরে ফেরায় ভারত কিছুটা চাপে পড়ে। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন দিনের দুই নায়ক—বিরাট কোহলি এবং ঋতুরাজ গায়কোয়াড়।
সাইডলাইনে সময় কাটালেন হামিদ, আগামীকাল শুরু করবেন ইবুসুকি?
দু’জন মিলে তৈরি করেন ১৯৫ রানের দুরন্ত জুটি। ঋতুরাজ আক্রমণ ও ধৈর্যের মিশেলে খেলেন ৮৩ বলে ১০৫ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি—এটাই তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। যুবক ওপেনারের ব্যাট থেকে নিখুঁত টাইমিং, গতি আর ফ্লো সব মিলিয়ে ইনিংস ছিল চোখের আরাম।
ঋতুরাজ ফেরার পরে দলের দায়িত্ব নেন বিরাট কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরপর দুই ম্যাচে শূন্য হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই সমালোচনাকে মুহূর্তে ভুলিয়ে দিয়ে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন কিং কোহলি।
রায়পুরে ৯৩ বলে ১০২ রানের সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে প্রমাণ করলেন—তিনি এখনও ভারতের ভরসা। শেষদিকে অধিনায়ক কেএল রাহুলের ৪৩ বলে ৬৬ রানের অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি ভারতকে নিয়ে যায় ৫ উইকেটে ৩৫৮ রানে, যা তাড়া করা খুব সহজ নয়। জাডেজাও অপরাজিত থাকেন ২৪ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা এই ম্যাচে প্রায় পুরো সময় ধরেই ছন্নছাড়া। মার্কো জ্যানসেন, যিনি টেস্ট সিরিজে আগুন ঝরিয়েছিলেন, এখানে নেন মাত্র দুটি উইকেট। বাকিরা ধারাবাহিক চাপই তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু ভারতের বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ার পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত। ওপেনার ডি কক (৮) দ্রুত ফিরলেও অন্য ওপেনার এইডেন মারক্রাম ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন একাই। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৯৮ বলে ঝকঝকে ১১০ রান—যা ছিল রান তাড়ার ভিত।
ক্যাপ্টেন বাভুমা খেলেন ৪৮ বলে ৪৬। এর পরে রিজা হেনড্রিকসের জায়গায় দলে ঢোকা ব্রিৎজকি খেলেন ৬৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ব্রেভিসও (৫৪) খেলেন এক ম্যাচজয়ী ভূমিকা। প্রোটিয়াদের বড় শক্তি ছিল একাধিক পার্টনারশিপ, ২য় উইকেটে ১০১ রান (মারক্রাম–বাভুমা), ৩য় উইকেটে ৭০ রান (মারক্রাম–ব্রিৎজকি) এবং ৪র্থ উইকেটে ৯২ রান (ব্রিৎজকি–ব্রেভিস)। এই ধারাবাহিক পার্টনারশিপই ভারতের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেয়।
ভারতীয় বোলাররা শেষ পর্যন্ত উইকেটের খোঁজেই ছুটেছেন, কিন্তু রান-বন্যা থামানোর আগেই ম্যাচ ফস্কে গেছে। শেষ ওভারের আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলে। সব মিলিয়ে, রায়পুরে জোড়া সেঞ্চুরি করেও ম্যাচ হার দর্শকদের হতাশ করেছে। এখন সিরিজের ভাগ্য ঝুলে আছে বিশাখাপত্তনমের ডেসাইডারে।

