গুয়াহাটি: ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় যোগ হলো আজ। দক্ষিণ আফ্রিকা গুয়াহাটির বরসাপাড়া স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতকে ৪০৮ রানে লন্ডভন্ড করে ২-০ তে সিরিজ জিতে নিয়েছে। এটি ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হার রানের হিসাবে। আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাগপুরে ৩৪২ রানের। আরও বড় কথা, ২৫ বছর পর (১৯৯৯-২০০০ সিরিজের পর) কোনো বিদেশী দল ভারতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে।
সিরিজে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলে শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে, যখন ভারতের হাতে শূন্য।দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ল। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ রান করে সাউথ আফ্রিকান বোলারদের দুর্দান্ত স্পেলের পর ভারতকে ২০১-এ আটকে দেয়। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬০/৫ (ট্রিস্টান স্টাবস ৯৪) করে ডিক্লেয়ার করে ৫৪৯ রানের লক্ষ্য দিল। চতুর্থ দিনের শেষে ভারত ২৭/২ ছিল, কিন্তু আজ পঞ্চম দিনে মাত্র ১৪০ রানে অলআউট।
প্রযুক্তি শহরে ভেজাল ঘি কাণ্ডে পুলিশের জালে শিবকুমার
সাইমন হারমার (৬ উইকেট দ্বিতীয় ইনিংসে) এবং মার্কো জ্যানসেনের (সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট) জুটি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কোনো সুযোগ দিল না। রবীন্দ্র জাদেজা ৫৩ রান করে লড়াই করলেন, কিন্তু বাকিরা ব্যর্থ।প্রথম টেস্টেও কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ রানে জিতেছিল। প্রথম ইনিংসে ১৫৯-এ সীমাবদ্ধ হয়েও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৩ করে ভারতকে ১২৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল।
ভারত ১৮৯ ও ৯৩-এ ধসে পড়ে। তেম্বা বাভুমা-নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়াসরা মাত্র তিন দিনে ম্যাচ শেষ করে সিরিজে ১-০ নিয়ে এগিয়ে যায়। এই জয়ে বাভুমা বললেন, “আমরা ‘নেভার গিভ আপ’ মন্ত্রে বিশ্বাসী। ভারতের মাঠে জিততে এত বছর লেগেছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস অটুট।”এই হার ভারতের জন্য শুধু সংখ্যাতত্ত্বের নয়, মানসিক ধাক্কা। গত বছর নিউজিল্যান্ডের কাছে বাড়িতে ০-৩ হোয়াইটওয়াশের পর আবার এমন লজ্জা।
প্রশ্ন উঠছে ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা নিয়ে। যশস্বী জয়সওয়াল, কে.এল. রাহুল, সাই সুদর্শন কেউ স্থিতিশীলতা দেখাতে পারেনি। স্পিন-বান্ধানো পিচে ভারতীয় স্পিনাররা (কুলদীপ যাদব, জাদেজা) প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু হারমারের অফ-স্পিন এবং জানসেনের পেস ভারতকে ছাপিয়ে গেল।এখন ফিরে তাকালে, দক্ষিণ আফ্রিকার এই জয় ঐতিহাসিক। ১৯৯৯-২০০০ সিরিজে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দল মুম্বইয়ে ইনিংসে জিতে সিরিজ নেয় তারপর ২৫ বছর ধরে ভারত অজেয় ছিল বাড়িতে।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দলও হেরেছে, কিন্তু প্রোটিয়াসরা ফিরে এসেছে। সিরিজে হারমার ১২ উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ। ভারতের জন্য এখন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাড়তি চাপ।ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন: “এমন হার কখনো ভুলব না!” কিন্তু ক্রিকেট তো এমনই উত্থান-পতনের খেলা। ভারতকে এখন নতুন করে গড়ে উঠতে হবে, না হলে ডব্লিউটিসি ফাইনালের স্বপ্ন আরও দূরের হয়ে যাবে।
