ম্যাচ গড়াপেটাতে নয়া পদক্ষেপ নিতে শীর্ষ আদালতে BCCI

bcci-supreme-court-match-fixing-case

নয়াদিল্লি: ভারতের ক্রিকেটে নতুন এক আইনি অধ্যায় খুলতে চলেছে। বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (BCCI) এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে হস্তক্ষেপের আবেদন জানাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি মামলায় যেখানে নির্ধারণ হতে পারে, ম্যাচ ফিক্সিং কি আইনত “প্রতারণা” হিসেবে গণ্য হবে কি না।

Advertisements

ভারতের মতো ক্রিকেটপ্রেমী দেশে আজও ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কোনও পৃথক ফৌজদারি আইন নেই। ফলে এমন অপরাধ ধরা পড়লেও তা কেবল বোর্ডের অভ্যন্তরীণ শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এবার বি.সি.সি.আই চায়, আদালত যেন এই শূন্যতা পূরণ করে স্পষ্ট জানায় ম্যাচ ফিক্সিং মানেই ফৌজদারি অপরাধ।

টিকিট মূল্য ২.৭ কোটি! বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মদন

এই মামলার উৎপত্তি কর্ণাটক প্রিমিয়ার লিগ (KPL)-এর ২০১৮-১৯ মরশুমে। অভিযোগ ছিল, একাধিক ক্রিকেটার, দলের মালিক, রাজ্য ক্রিকেট আধিকারিক ও বুকির মধ্যে ফিক্সিংয়ের যোগসূত্র ছিল। বেঙ্গালুরু পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা এবং ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক কাজের মামলা করেছিল।

তবে অভিযুক্তরা কর্ণাটক হাইকোর্টে গিয়ে যুক্তি দেন “ম্যাচ ফিক্সিং অনৈতিক বটে, কিন্তু প্রতারণা নয়।” ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁদের পক্ষে রায় দেয়, এবং বলে যে, ম্যাচ ফিক্সিং মানে দর্শক বা ক্রেতাকে কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করাতে প্ররোচিত করা নয়। ফলে এটি ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং বোর্ডের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাভঙ্গ। এরপর কর্ণাটক সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, এবং সেই আপিলে এখন BCCI হস্তক্ষেপকারী পক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছে।

বোর্ডের যুক্তি স্পষ্ট ম্যাচ ফিক্সিং সরাসরি প্রতারণা। কারণ, ক্রিকেট ম্যাচে দর্শক ও স্পনসরদের কাছে একটি “অঙ্গীকার” থাকে যে খেলা হবে ন্যায্যভাবে। যখন খেলোয়াড়রা ম্যাচ ফিক্স করে, তখন তারা সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দর্শক ও বিনিয়োগকারীদের ঠকায়।

Advertisements

ফলে টিকিট বিক্রয়, বিজ্ঞাপন বা স্পনসরশিপ সবই প্রতারণার আওতায় পড়ে। BCCI আদালতে জানিয়েছে, “আমাদের অভ্যন্তরীণ অ্যান্টি-করাপশন কোড আছে, কিন্তু সেটি যথেষ্ট নয়। আইনের শক্তি প্রয়োজন যাতে ফিক্সিংয়ের মতো ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।”

ভারতে এখনো পর্যন্ত ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কোনও পৃথক কেন্দ্রীয় আইন নেই। পুলিশ সাধারণত ৪২০ ও ১২০বি ধারায় মামলা করে, কিন্তু কর্ণাটক হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী সেই যুক্তিও দুর্বল। ২০১৮ সালে আইন কমিশন তাদের ২৭৬তম রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলেছিল, “বর্তমান আইনি কাঠামো খেলাধুলার দুর্নীতি রুখতে অপ্রতুল।” কমিশন সুপারিশ করেছিল, ‘match-fixing’ ও ‘sports fraud’ কে পৃথক অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু এত বছরেও সেই আইন পাস হয়নি।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো অনেক আগেই নির্দিষ্ট আইন করেছে। যুক্তরাজ্যে Gambling Act 2005 অনুযায়ী ম্যাচের ফলাফল প্রভাবিত করা অপরাধ। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিটি রাজ্যে sports corruption law রয়েছে, আর দক্ষিণ আফ্রিকায় Prevention and Combating of Corrupt Activities Act, 2004-এর অধীনে খেলাধুলায় দুর্নীতি স্পষ্টভাবে শাস্তিযোগ্য।

ভারতের ক্ষেত্রে তাই BCCI-এর এই পদক্ষেপ কেবল ক্রিকেট নয়, বরং পুরো স্পোর্টস সিস্টেমের জন্য দৃষ্টান্তমূলক হতে পারে। যদি সুপ্রিম কোর্টের রায় বোর্ড ও কর্ণাটক সরকারের পক্ষে যায়, তবে ভবিষ্যতে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মামলা ‘প্রতারণা’ হিসেবে ফৌজদারি আইনে বিচারযোগ্য হয়ে উঠবে। এক প্রাক্তন ক্রিকেট প্রশাসকের মন্তব্য, “এটি কেবল ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নয়, বরং খেলার মর্যাদা রক্ষার লড়াই। যদি খেলোয়াড়রা জানে যে ফিক্সিং করলে জেলে যেতে হবে, তাহলে এই প্রবণতা অনেকটাই কমবে।”