ভারতীয় ক্রিকেটে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। তাঁর মতে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন নির্বাচন প্রক্রিয়া দরকার যা আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। চেতেশ্বর পূজারার ইউটিউব চ্যানেলে এক আলোচনায় রাহানে বলেন, ক্রিকেটারদের যেন নির্বাচকদের ভয় না থাকে, বরং তাঁরা যেন মুক্তভাবে খেলতে পারেন।
রাহানের মূল প্রস্তাব, সম্প্রতি অবসর নেওয়া ক্রিকেটারদেরই ঘরোয়া ক্রিকেটে নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ করা হোক। তিনি মনে করেন, যারা সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেট থেকে গত ৫-৮ বছরের মধ্যে অবসর নিয়েছেন, তাঁরাই সবচেয়ে ভালোভাবে আধুনিক ক্রিকেটের চাহিদা ও পরিবর্তনশীল চরিত্র বুঝতে পারবেন।
রাহানে বলেন, “ক্রিকেটারদের নির্বাচকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা চাই এমন নির্বাচক থাকুক, যারা আধুনিক ক্রিকেট বুঝবেন। এখন যেভাবে খেলা বদলাচ্ছে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ও আইপিএলের পর, সেটা বুঝতে পারা খুব দরকার। ২০-৩০ বছর আগের চিন্তাভাবনা দিয়ে এখনকার খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।”
আচমকা স্ত্রীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দুই প্রধানে খেলা প্রাক্তন ফুটবলার
বর্তমানে বিসিআইয়ের (BCCI) নিয়ম অনুযায়ী,দশটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার অবসর নেওয়ার পর পাঁচ বছর অপেক্ষা করলে রাজ্য দলের নির্বাচক হতে পারেন। জাতীয় নির্বাচকের ক্ষেত্রে নিয়ম আরও কঠিন। কিন্তু এই নিয়মেই আপত্তি রাহানের। তাঁর মতে, এমন নিয়ম আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচকদের মনোভাব ক্রিকেটারদের উন্নতি বা পারফরম্যান্সে বড় প্রভাব ফেলে। অনেক সময় খেলোয়াড়রা নির্বাচকদের ভয় পায় বা চাপে থাকে, এতে স্বাধীনতা দিয়ে খেলা হয় না। আমি চাই, ক্রিকেটাররা সাহস নিয়ে খেলুক, ভয় না পেয়ে।”
রাহানের এই মন্তব্যের পর চেতেশ্বর পূজারা খানিকটা ব্যালান্সড মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বড় রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এটা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, কারণ ওদের হাতে বিকল্প বেশি। তবে এমন অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা হয়ত ১৫-২০ বছর আগে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণক্ষমতা দুর্দান্ত। তাঁদের বাদ দেওয়া ঠিক হবে না।” পূজারা নিজে ২০২৪ সালে অবসর নিয়েছেন। তাই বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচক হওয়ার জন্য।
রাহানের এই মন্তব্য অনেকেই ব্যাখ্যা করছেন “বুড়োদের জায়গা নেই” বলে। তবে বিষয়টা এমন নয় যে তিনি অভিজ্ঞতা বা প্রবীণতার বিরুদ্ধে, বরং তিনি চান নির্বাচক প্যানেলে এমন মুখ থাকুক, যারা মাঠের বাস্তবতা ও বর্তমান ক্রিকেট সংস্কৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে মানসিকভাবে সংযোগ তৈরি করতে পারেন।
এই বিতর্ক নতুন করে প্রশ্ন তুলছে, ভারতীয় ক্রিকেটে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কি যুগোপযোগী পরিবর্তন জরুরি? ক্রিকেটারদের স্বাধীনভাবে খেলার পরিবেশ তৈরিতে কী ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা আদর্শ হতে পারে? রাহানে-পূজারা আলোচনার সূত্রে এই বিতর্ক এখন রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। BCCI এই ইস্যুতে আদৌ কোনো নীতি বদল করে কি না, সেটাই এখন দেখার।