কোভিড-ই কাল করেছে কিং কোহলির রান খরায়!

ন্যাচারাল স্ট্রোক প্লে, বা বোলার কে ডোমিনেট করা বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ন্যাচারাল গেম এর অংশ ছিল। অস্ট্রেলিয়া তে উনি মিচেল জনসন এর মতো বোলার…

Virat Kohli Batting Struggles

ন্যাচারাল স্ট্রোক প্লে, বা বোলার কে ডোমিনেট করা বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ন্যাচারাল গেম এর অংশ ছিল। অস্ট্রেলিয়া তে উনি মিচেল জনসন এর মতো বোলার ডাউন দা পিচ ওয়াক করে আক্রমণ করতেন। অতো দূরত্ব কমালে, দেড়শোর বল আরো বেশি গতিতে আসবে কিন্তু গতি বা বাউন্স ওনার দুরন্ত ব্যাকফুট ব্যালান্স আর ওয়েট ট্রান্সফার এর জন্য সমস্যা হয়ে ওঠেনি। এই ছিল প্রাইম কোহলি র টোটাল গেম।  সমস্যা শুরু হয় কোভিড এর পর। যার জন্য কোভিড কাল ও তার পরের কোহলির ফারাক প্রচুর। শুধু পেস বলে নয়, স্পিন খেলতেও পারছেন না।

স্পোর্টস বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে আমাদের মাথার মধ্যে ওয়ারিং করা থাকে। এই যে নেট এ মানুষ হাজার বল খেলে, তার ফলাফল হোলো সঠিক সময় এ সঠিক রিয়াকশন বেরোনো। ব্রেক এর জন্য বহুদিন লাল বলের ক্রিকেট না খেলে (কোহলি অস্ট্রেলিয়া সফর স্কিপ করেন) যখন ফিরলেন, প্রথম এ খেললেন দেশের মাটিতে হয়ে অত্যন্ত খারাপ পিচ এ। ততদিন এ হ্যান্ড আই কো অর্ডিনেশন আর রিস্ট এর এজিলিটি দুটোই কমতে শুরু করেছে । তাই শুরুতেই স্পিন এর সামনে বিপদে পড়লেন। কোহলি চশমা পরেন এখন সবাই লক্ষ্য করেছেন। যারা চশমা পড়েন তাদের বেশিরভাগ এর স্পিন রিড করতে সমস্যা হয়। বোলিং কিউ যেগুলো, রিলিজ,গ্রিপ,সিম পজিশন ভালো দেখেন না,লেংথ মিসজাজ করেন। এখান থেকে শুরু।

   

পোস্ট কোভিড বহু ব্যাটার ই গুলিয়ে ফেলেছিলেন অফস্টাম্প কোথায় সেটার ‘ফিল’। তাই তিনি গার্ড শিফট করেন অফ মিডল এ। এতে বোঝা যায় যে আইলাইন এ থাকলে খেলবো, আইলাইন এ না থাকলে খেলবোনা।

খেলবোনা ভাবলেই বল ছাড়া যায়না। মাসেল মেমোরি ওরকমই। হাত যেতে থাকবে বলের দিকে। এর সাথে কোহলির ক্রিজ থেকে এগিয়ে খেলার জন্য ওর কাছে একটা অপটিকাল ইলিউশন তৈরী করে যে আমি বল এর কাছে পৌঁছে গেছি। এর ফলেই আউটসাইড অফস্টাম্প একটা ক্রনিক রোগ হয়ে দাঁড়ায়।

সাইড অন থাকার একটা কুফল আছে, আপনার অনসাইড বন্ধ হয়ে যায়। আর কোহলি বেশিরভাগ রান অনসাইড এ করেন। রান করার জন্য উনি এই অস্ট্রেলিয়া সফর এ শুরু করেন ক্রিজ থেকে এগিয়ে ওপেন স্টান্স এ। মানে চেস্ট অন, শোল্ডার মিড উইকেট এর দিকে। কিন্তু পার্থ এর ভ্যারিয়েবল বাউন্স এর ফল এ সেই পা গেলো সোজা আর হাত গেলো কভার এর দিকে।

বাকি পুরো সিরিজই এটা চলেছে। কোহলি বারবার চেষ্টা করেছেন পা এক্রস ফেলার। কখন বল ছাড়ার, কখনো মেরে খেলার। কোনোটাই কাজ করেনি। কখনো বোলার ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে, কখনো হি ওয়াজ টু লেট বা আনলাকি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে ফ্রন্টফুটে প্রেস করার সময় ওয়েট ট্রান্সফার ভালো হয়নি বা ওপেন স্টান্স থেকে শোল্ডার পজিশন এডজাস্ট করে সামনের পা স্কয়ার লেগের দিক থেকে বলের কাছে নিয়ে যেতে দেরি হয়ে গেছে।

সিডনিতে কোহলি সাইড অন স্টান্স-এ ফিরে যান। কিন্তু সিডনি তে আবার ভ্যারিয়েবল বাউন্স ছিল। গোটা সিরিজ এ কোহলি সবথেকে বেশি ফ্রন্টফুটে এসেছেন গুড লেংথ এর বলে আর ভ্যারিয়েবল বাউন্স থাকলে অবধারিত এজ হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংস এ সব করেও মুহূর্তের ভুল, ইনস্টিঙ্কট, পা এক্রস গেলনা।

অবাক কান্ড হোল এই লোকটাই দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিটিং ভাইপার পিচে অবলীলায় রান করে এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কি লম্বা সিমার দের হাই রিলিজ পয়েন্ট এর জন্য লেন্থ বুঝতে কোহলির সুবিধে হয়? বলা মুশকিল। কারণ কোহলির টেকনিক কাট শট এর জন্য তৈরী না, খুব তাড়াতাড়ি লেন্থ বুঝে পিছনে গেলেই সম্ভব।

উপায় কী? বিশেষজ্ঞদের দাওয়াই, একটা জিনিস কোহলি কে বুঝতে হবে। এই বয়সে এই নন ক্রিকেটিং ব্রেক যত বেশি নেবেন তত রিস্টার্ট করা সমস্যা হবে। আমরা পরিবার এর গুরুত্ব বুঝি, কিন্তু সময় এসে গেছে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কারণ শরীর কিন্তু হাত তুলে দিচ্ছে। শচীন এর সিডনি র সাথে কোহলি র তুলনা বারবার করা ভীষণ ই অহেতুক কারণ সচিন অনেক ট্র্যাডিশনাল টেকনিক এর প্লেয়ার। কেন উইলিয়ামসন বা রাহুল দ্রাবিড় এর টেকনিক এ বল ছাড়া অনেক সোজা। কোহলির টেকনিক এ উনি হয় মারবেন নয় মরবেন। শুরু থেকেই তাই, এই বয়সে এসে এটা তো আর ঠিক হবেনা।

এই সমস্যা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ঠিক হবেনা। এর জন্য কোহলিকে আইপিএল আর ওয়ান ডে ফরম্যাট ছাড়তে হবে। ইংল্যান্ড এ গিয়ে বায়ো মেকানিকস একসপার্টের সাথে দু মাস কাজ করতে হবে। তবেই আশা আছে। আপাতত কোহলি র টেস্ট কেরিয়ার এর বাঁচা মরার খেলার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।