শুরু হতে চলেছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy 2024), যেখানে বাংলা দল দেশের গৌরব পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে। বঙ্গীয় ফুটবল দল একসময় সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে সাফল্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে গত কয়েক বছরের হতাশাজনক পারফরম্যান্স ও প্রত্যাশার চাপ নিয়ে এবার ফের অভিযান শুরু করছে। বিগত কয়েক বছর সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে তেমন আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেনি বাংলা। এবার সেই হতাশার চিত্র বদলানোর জন্য বঙ্গীয় ফুটবল ফেডারেশন দায়িত্ব তুলে দিয়েছে অভিজ্ঞ কোচ সঞ্জয় সেনের হাতে।
সঞ্জয় সেন বাংলা ফুটবলের পরিচিত এক মুখ। তিনি একসময় শিল্ড ফাইনালে মহামেডান স্পোর্টিংকে ঐতিহাসিক বিজয় এনে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আই-লিগে মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই কোচের অভিজ্ঞতা, কৌশলগত দক্ষতা এবং ময়দান সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের কারণে তাঁকেই এবার সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে বাংলার কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে ফেডারেশন।
দল গঠনের প্রক্রিয়া: দুই প্রধানের প্রতিনিধি, মোহনবাগানের অনুপস্থিতি
সঞ্জয় সেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এবারের বাংলা দলে মোট ২২ জন ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইমামি ইস্টবেঙ্গল থেকে রয়েছেন দুইজন তরুণ ফুটবলার – গোলরক্ষক আদিত্য পাত্র এবং ডিফেন্ডার চাকু মান্ডি। ইস্টবেঙ্গলের এই দুই ফুটবলার ইতিমধ্যে নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে ময়দানে সকলের নজর কেড়েছেন। তাঁদের ক্রীড়াশৈলীর জন্য সন্তোষ ট্রফির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মহামেডান স্পোর্টিং থেকে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দলে স্থান পেয়েছেন ইসরাফিল দেওয়ান। সাদা-কালো জার্সিতে প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে দুর্দান্ত খেলার জন্য কোচের নজরে পড়েছেন এই প্রতিভাবান ফুটবলার। তাঁর একক দক্ষতা ও ডুরান্ড কাপে তাঁর খেলা প্রশংসা কুড়িয়েছে, যা তাঁকে সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।
তবে কিছুটা আশ্চর্যের বিষয় হলো, এবারের বাংলা দলে রাখা হয়নি কলকাতা ময়দানের আরেক জনপ্রিয় ক্লাব মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোনো ফুটবলারকে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা বিতর্ক হলেও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে, শুধুমাত্র পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত দল গঠন করা হয়েছে।
সফলতার লক্ষ্যে প্রস্তুতি ও কোচের কৌশল
সন্তোষ ট্রফিতে সাফল্য পেতে দলকে যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে নিয়মিত অনুশীলনের সময়সূচি। কোচের তত্ত্বাবধানে এবং নির্ধারিত কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে ক্লাবের মাঠেই সম্ভবত চলবে দলের নিয়মিত অনুশীলন।
সঞ্জয় সেন জানিয়েছেন যে, তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং এবার বাংলা দলকে সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে একটি লড়াকু, সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ দল হিসেবে দেখা যাবে। দলের খেলোয়াড়দের তিনি কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে প্রস্তুত করছেন যাতে তাঁরা মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন।
দলের লক্ষ্যমাত্রা ও সমর্থকদের আশা
বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা এবার সন্তোষ ট্রফিতে সফল প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন। কোচ সঞ্জয় সেনের উপস্থিতি দলকে মানসিক ও কৌশলগতভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলবে বলেই আশা করা হচ্ছে। আদিত্য পাত্র, চাকু মান্ডি ও ইসরাফিল দেওয়ানের মতো তরুণ প্রতিভাদের ওপর নির্ভর করেই এবার বাংলা দল সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে।
প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজস্ব পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে বাংলার সম্মান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এই অভিযান কতদূর সফল হবে। এবারের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করা তরুণ ফুটবলাররা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে প্রস্তুত। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা দলের সোনালী অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণ করা।
ফেডারেশনের ভূমিকা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ফেডারেশন চায় বাংলার ফুটবল ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে, যাতে নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররা এই খেলার প্রতি আগ্রহী হয়। সেজন্য ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন আশাবাদী, সঞ্জয় সেনের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের উদ্যমে বাংলা ফুটবল দল আবার সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
সন্তোষ ট্রফির মঞ্চে সফল হতে হলে বাংলা দলের সামনে রয়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কোচ, খেলোয়াড় এবং ফেডারেশনের একযোগে প্রয়াস বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।