দামামা বেজে উঠল কলকাতা ফুটবল লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশন ২০২৫-২৬ মরসুমের (CFL 2025)। ময়দান প্রস্তুত, দলগুলি নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। তবে ফুটবল মাঠের বাইরেই এক তাৎপর্যপূর্ণ ও আবেগঘন ঘটনার সাক্ষী থাকল ফুটবলপ্রেমীরা। ২৩ জুন কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে আইএফএ’র (IFA) উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন মুহূর্তে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ঘোষণা করে দিলেন সঞ্জয় সেন হবেন বাংলার পরবর্তী সন্তোষ ট্রফির কোচ।
এই বছর কলকাতা লিগ উৎসর্গ করা হল প্রয়াত প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Pradip Kumar Banerjee) স্মৃতিতে। যিনি একাধারে ছিলেন অসাধারণ ফুটবলার ও অনুপ্রেরণাদায়ী কোচ। ২৩ জুন, তাঁর ৮৯তম জন্মদিনে আইএফএ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, যা নিঃসন্দেহে এক গর্বের মুহূর্ত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই ও প্রাক্তন ফুটবলার প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অতনু ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই আয়োজনের মধ্যেই বাংলা ফুটবলের ঐতিহ্য ও আবেগ ফিরে এল।
আর এই আবেগেরই প্রতীক হয়ে উঠল গোপাল ভাঁড় (Gopal Bhar), যিনি এবছরের কলকাতা লিগের ম্যাসকট (Mascot)। হাস্যরস ও বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তার মিশেল গোপালের রূপক, ফুটবলের কঠিন বাস্তবতায় এক আশার প্রতীক। সঙ্গে প্রয়াত প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি হিসাবে উদ্বোধন করা হয় এদিন।
হটাৎ করেই পরবর্তী সন্তোষ ট্রফির জন্য বাংলার কোচ হিসেবে পুনরায় সঞ্জয় সেনের নাম ঘোষণা যতটা আবেগের, ততটাই চমকপ্রদ। কারণ আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি পরিষ্কার জানিয়েছেন, “ক্রীড়ামন্ত্রী আচমকাই ঘোষণা করেছেন। আমরা তাঁর প্রস্তাব কোচেজ কমিটির কাছে পাঠাব। নিয়ম অনুযায়ী সেখান থেকে পাস করাতে হবে।” অর্থাৎ এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি, তবে আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছে। একই কথা বলতে শোনা গেল আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তকে।
সঞ্জয় সেন নিজেও ছিলেন এই ঘোষণায় অবাক। তাঁর বক্তব্য, “আমার কাছে কোনও পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। মন্ত্রী আবেগ ও ভালোবাসা থেকে বললেন। এটা নিঃসন্দেহে সম্মানের, কিন্তু এখনই আমি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছি না। ভাবনার প্রয়োজন আছে।”
তবে আবেগে ভর করে নেওয়া এই ঘোষণায় এক অন্যরকম প্রত্যাশার আলোও আছে। কারণ সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে বাংলা ২০১৭ সালে সন্তোষ ট্রফি জিতেছিল। তাঁর কোচিং দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি জানেন কীভাবে কঠিন ম্যাচ জেতাতে হয়, জানেন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে। ফলে যদি শেষপর্যন্ত তাঁর হাতেই কোচের দায়িত্ব ওঠে, তাহলে বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ের স্বপ্ন আরও একটু বাস্তব হয়ে উঠবে।
এদিন ক্রীড়ামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ভূমিপুত্র ফুটবলারদের গুরুত্ব দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন আগামী দিনে সন্তোষ ট্রফি ফের বাংলার ঘরে ফিরবে। ISL-এর বিদেশি কোচ ও ফুটবলারদের আধিপত্যের মাঝেও তিনি রেফারিংয়ের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
সব মিলিয়ে এক আবেগঘন উদ্বোধনে বহু বার্তা রইল। ফুটবল শুধু খেলার মাঠে খেলা নয়, তা আবেগ, ঐতিহ্য, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এখন দেখার, সেই আবেগের বেগে বাস্তবের মাঠে কেমন খেল দেখান সঞ্জয় সেন — যদি শেষপর্যন্ত তাঁর হাতেই ওঠে বাংলার কোচের দায়িত্ব।
CFL 2025 dedicated to Indian Football Team Former Footballer Pradip Kumar Banerjee
