কলকাতা ফুটবল লিগের (CFL 2025) প্রিমিয়ার ডিভিশনে ভূমিপুত্র ফুটবলারদের (Bhumiputra Footballer) সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA)। রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতরের অনুরোধে এবার থেকে লিগের ম্যাচে প্রতিটি ক্লাবকে কমপক্ষে ছয়জন ভূমিপুত্র মাঠে নামাতেই হবে। আগে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ।
আইএফএর তরফে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব প্রতিনিধিদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সচিব অনির্বাণ দত্ত, সহ সচিব রাকেশ ঝাঁ, মহম্মদ জামাল, সুদেষ্ণা মুখার্জী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সুফল রঞ্জন গিরি।
এই বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল ভূমিপুত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন, কলকাতা লিগে (Calcutta Football League) বাংলার ফুটবলারদের সংখ্যা ও প্রাধান্য বাড়াতে হবে। তাঁর বক্তব্য, “কলকাতা লিগ বাংলার লিগ। এখানে বাংলার ফুটবলারদের, অর্থাৎ ভূমিপুত্রদেরই জায়গা পাওয়া উচিত।”
কন্যাশ্রী কাপের ফাইনালের দিন মঞ্চ থেকে এই বার্তা দেন ক্রীড়ামন্ত্রী। তার কিছুদিনের মধ্যেই ক্রীড়া দফতরের পক্ষ থেকে আইএফএকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ছ’জন ভূমিপুত্র মাঠে রাখার অনুরোধ করা হয়। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকে বসে আইএফএ।
প্রথমে ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়। বেশ কিছু ক্লাব ছয়জন ভূমিপুত্র রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করে। তবে কিছু ক্লাব অনুরোধ জানায়, দল গঠনের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলা হয়ে গিয়েছে, তাই সংখ্যাটি আপাতত ছয়ের বেশি যেন না করা হয়। সব দিক বিবেচনা করেই পাঁচ থেকে ছয় ভূমিপুত্র মাঠে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়।
বৈঠকে এই বিষয়ে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেন, “ক্রীড়া দফতরের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চিঠি এসেছিল। আমরা সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠক করি। আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ম্যাচে ছয়জন ভূমিপুত্র মাঠে রাখা বাধ্যতামূলক হবে।”
এদিকে, বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়, লিগের লটারি নিয়ে মিডিয়ায় ওঠা প্রশ্ন। কিছুদিন আগে সাদার্ন সমিতির তরফ থেকে লিগের লটারি প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটি চিঠি দেওয়া হয়। যদিও শুক্রবারের বৈঠকে সাদার্ন সমিতি কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি।
লটারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আইএফএ সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করতে চায়। বৈঠকে উপস্থিত ক্লাব প্রতিনিধিরা একযোগে জানান, লটারি অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে হয়েছে, তাঁদের কারও কোনও আপত্তি নেই। ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও, মোহনবাগান ক্লাব কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কলকাতা লিগে বাঙালি ফুটবলারদের আরও বেশি করে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হল। ইতিমধ্যেই বহু ক্লাব রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের খুঁজে এনে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু করেছে।
এই পরিবর্তনের মাধ্যমে আইএফএ একদিকে রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের অনুরোধ রক্ষা করল, অন্যদিকে স্থানীয় ফুটবলারদের উৎসাহ দিতেও সফল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, মাঠে ছয়জন ভূমিপুত্র রাখার নিয়ম কি লিগের মান ও প্রতিযোগিতায় কোনও প্রভাব ফেলবে? ফুটবল মহলের মতে, যেহেতু নিয়ম সব দলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য, তাই প্রতিযোগিতা যথাযথই থাকবে। বরং রাজ্যের প্রতিভাবান যুব ফুটবলারদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ হতে পারে।
কলকাতা লিগ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটা বাংলার ফুটবল ঐতিহ্যের প্রতীক। আর সেই ঐতিহ্যে বাংলার সন্তানদের আরও বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করাই এবার লক্ষ্য। ক্রীড়ামন্ত্রীর চিঠিতে অবশেষে স্থানীয় প্রতিভার জন্য দরজা আরও বড় করে খুলে দিল আইএফএ।