বিসিসিআইয়ের চ্যালেঞ্জ খারিজ, কোচি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দিতে হবে সুদসহ ৫৩৮ কোটি টাকা

বিসিসিআইয়ের (BCCI) বিরুদ্ধে বড়সড় রায় ঘোষণা করল বম্বে হাই কোর্ট (Bombay High Court)। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া আইপিএল (IPL) দল কোচি টাস্কার্স…

Bombay High Court has directed BCCI to pay 385.50 crore to KCPL and 153.34 crore to RSW

বিসিসিআইয়ের (BCCI) বিরুদ্ধে বড়সড় রায় ঘোষণা করল বম্বে হাই কোর্ট (Bombay High Court)। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া আইপিএল (IPL) দল কোচি টাস্কার্স (Kochi Tuskers) কেরালার প্রাক্তন মালিকদের মোট ৫৩৮.৮৪ কোটি টাকা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। এই মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সালিশি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার বিসিসিআইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং আইনগত দৃষ্টিতে তার কোনও ভিত্তি নেই।

এই রায়ের ফলে বিসিসিআইকে কোচি ক্রিকেট প্রাইভেট লিমিটেডকে (KCPL) ৩৮৫.৫০ কোটি এবং রন্দেভ্যু স্পোর্টস ওয়ার্ল্ডকে (RSW) ১৫৩.৩৪ কোটি দিতে হবে, যা ২০১৫ সালে দুইটি আলাদা সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছিল। সঙ্গে রয়েছে বিপুল হারে সুদের বোঝা—১৮% হারে সুদ দিতে হবে ২০১১ সাল থেকে। বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি রিয়াজ ই. ছাগলা ১৭ জুন, ২০২৫ তারিখে এই রায় দিয়ে জানান, আদালত সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায়ের উপর পুনরায় মতামত দিতে পারে না।

   

মামলার পেছনের গল্প

২০১১ সালের আইপিএল মরসুমে অংশ নেয় কোচি টাস্কার্স কেরালা। দলের মালিকানা প্রথমে ছিল রন্দেভ্যু স্পোর্টস ওয়ার্ল্ডের (RSW) হাতে, পরে তা হস্তান্তরিত হয় কোচি ক্রিকেট প্রাইভেট লিমিটেডের (KCPL) কাছে। বিসিসিআই অভিযোগ তোলে যে, তারা চুক্তি অনুযায়ী মার্চ ২০১১-এর মধ্যে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা দেয়নি। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিসিসিআই একতরফাভাবে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করে দেয়।

তবে কোচি ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফ থেকে দাবি করা হয়, স্টেডিয়াম বিষয়ক জটিলতা, শেয়ারহোল্ডার অনুমোদনের বিলম্ব এবং আইপিএলের ম্যাচ সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে তারা আর্থিকভাবে চাপের মুখে পড়েছিল এবং সময়মতো গ্যারান্টি দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও বিসিসিআই তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল। কিন্তু আচমকা ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করে দেয় বোর্ড, এমনকি আগেই জমা দেওয়া টাকা ফেরত না দিয়েই।

লন্ডনে শুভমনদের সঙ্গে ২ ঘণ্টার বৈঠক, টেস্ট দলের পরামর্শদাতা বিরাট কোহলি!

সালিশি প্রক্রিয়া ও রায়

Advertisements

এই ঘটনার পরে, KCPL ও RSW উভয়েই সালিশি প্রক্রিয়ার পথে যায়। ২০১৫ সালের ২২ জুন সালিশি ট্রাইব্যুনাল KCPL-কে ₹৩৮৪.৮৩ কোটি এবং RSW-কে ₹১৫৩.৩৪ কোটি দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যার উপর ১৮% হারে সুদ আরোপ হয়। এছাড়া KCPL-কে ₹৭২ লক্ষ টাকা সালিশি খরচ বাবদ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

বিসিসিআই এই রায়ের বিরুদ্ধে বম্বে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায়, দাবি করে যে তারা বৈধভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করেছিল এবং গ্যারান্টির ব্যর্থতা চুক্তিভঙ্গের সমতুল্য। বোর্ড আরও বলে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ চুক্তির মূল শর্তের তুলনায় অতিরিক্ত এবং আরএসডব্লু’র সালিশির আবেদন ভারতীয় অংশীদারিত্ব আইনের পরিপন্থী।

তবে বিচারপতি ছাগলা তাঁর ১০৭ পৃষ্ঠার রায়ে স্পষ্টভাবে বলেন, “সালিশি রায়ের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই যদি তা ফ্যাক্ট ও আইনের সঠিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে হয়। এখানে বোর্ডের যুক্তিগুলি আইনত গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “বিসিসিআইয়ের এই চ্যালেঞ্জ আসলে সালিশি আইনের ধারা ৩৪-এর সীমানার বাইরে।”

এই রায় বিসিসিআইয়ের জন্য আর্থিকভাবে যেমন বড় ধাক্কা, তেমনই আইনি দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল। এখন দেখার, বিসিসিআই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কি না, নাকি ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়। বর্তমানে বোর্ডের ঘাড়ে সুদসহ যে পরিমাণ আর্থিক দায় এসে পড়েছে, তা আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আর্থিক ক্ষতির ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

Bombay High Court has directed BCCI to pay 385.50 crore to KCPL and153.34 crore to RSW