বয়স কখনোই প্রতিভার বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, আর ৫৫ বছর বয়সী বিনা শাহ (Bina Shah) এর জ্বলন্ত উদাহরণ। ৩৮ তম জাতীয় গেমসে মেয়েদের লন বল একক বিভাগে ঝাড়খণ্ডের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২১-৭ পয়েন্টে পরাজিত করে বাংলার ঝুলিতে ষষ্ঠ স্বর্ণপদক তুলে আনলেন তিনি। এর আগেও দুটি জাতীয় গেমসে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে কখনো রুপো বা ব্রোঞ্জেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে তৃতীয়বারের চেষ্টা ছিল সফল, এবং তার অসীম সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, আজ তিনি ভারতের জাতীয় গেমসে সোনালী অর্জন করেছেন।
বিনার জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং সংগ্রাম
লন বল খেলার প্রতি বিনা শাহের ভালোবাসা শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে। যদিও তিনি মাত্র ৫৫ বছর বয়সী, তবে তাঁর খেলাধুলার প্রতি প্যাশন এবং কষ্টকর পরিশ্রম তাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। জাতীয় গেমসের তৃতীয়বারের অংশগ্রহণে সোনা জয়ের পর তিনি জানান, “অবশ্যই, এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা ছিল। কিন্তু আমি কখনোই হাল ছাড়িনি। আমি জানতাম, একদিন আমার পরিশ্রম সফল হবে।”
তিনি আরও জানান, “আমার লক্ষ্য শুধু স্বর্ণপদক জেতা নয়, আগামী বছর অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং সেখানে ভালো ফলাফল অর্জন করা। আমি সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
খেলার প্রতি বিনার ভালোবাসা
বিনা শাহ সবসময় মনে করেন যে, খেলার প্রতি তার ভালোবাসা ও সততা তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে লন বলের জন্য কঠোর অনুশীলন করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। তবে কলকাতাতে লন বলের জন্য সঠিক পরিকাঠামো না থাকায় তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তিনি জানালেন, “কলকাতাতে রয়েল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব ছাড়া আর কোথাও সেভাবে বোলিং গ্রীন নেই। এখানে প্রায় ১৫০ জন খেলোয়াড় অনুশীলন করে। যদি অন্ততপক্ষে দুই বা তিনটা লন বল কোর্ট থাকতো, তাহলে অনুশীলনের সুবিধা আরও ভালো হতো।”
স্বর্ণপদকের সাথে নতুন আশা
বিনা শাহর মতো খেলোয়াড়ের জন্য এই স্বর্ণপদক শুধুমাত্র তার পরিশ্রমের ফলস্বরূপ নয়, বরং তার এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বড় উদাহরণ। তার সাফল্য প্রমাণ করে যে, বয়স কোনো বাধা নয়, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিভাবান হয় এবং তার লক্ষ্য স্থির থাকে।
লন বল খেলার প্রতি তার অবদানের জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠন। সিএবি (ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল)-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “বিনা শাহের সাফল্য আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়। তার মতো খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কাজ।” তার এই সোনালি অর্জন বাংলার ক্রীড়ামহলে নতুন আশা এবং উৎসাহ নিয়ে এসেছে।
নতুন প্রজন্মের জন্য উদাহরণ
বিনা শাহের সোনালি অর্জন শুধু তার নিজের জন্য নয়, বরং বাংলার সমস্ত ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি উদাহরণ। তার সততা, পরিশ্রম, এবং অসম্ভব সংকল্প প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকাঠামো ও সুযোগ পেলে যেকোনো বয়সের মানুষই দেশের হয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারে। বর্তমানে, বাংলার ক্রীড়ামহলে তার সাফল্য নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়া, বিনা শাহ জানিয়েছেন যে তিনি আরো অনেক পরিকল্পনা করছেন এবং ভবিষ্যতে আরো বড় দায়িত্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এই সোনালি অর্জন বাংলা ক্রীড়ার ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে থেকে যাবে।