উরুগুয়ের ক্লাবে নিজের জাত চেনালেন ভারতীয় ডিফেন্ডার

ভারতের ফুটবল মানচিত্রে বিজয় ছেত্রী (Bijay Chhetri) এখন একটি উল্লেখযোগ্য নাম। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের নাম লেখানো ভারতীয় ফুটবলারের সংখ্যা হাতে গোনা। বাইচুং…

Bijay Chhetri Colon FC

ভারতের ফুটবল মানচিত্রে বিজয় ছেত্রী (Bijay Chhetri) এখন একটি উল্লেখযোগ্য নাম। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের নাম লেখানো ভারতীয় ফুটবলারের সংখ্যা হাতে গোনা। বাইচুং ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিং সান্ধু এবং সন্দেশ ঝিঙ্গানের মতো তারকাদের পথ অনুসরণ করে এবার বিজয় ছেত্রী উরুগুয়ের ক্লাব কোলন এফসিতে নাম লেখালেন। উরুগুয়ের দ্বিতীয় ডিভিশনের এই ক্লাবে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে।

বিদেশি ক্লাবে যাওয়ার যাত্রাপথ
ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয়ে। তারপর চেন্নাই সিটি এফসি এবং রিয়াল কাশ্মীর হয়ে বিজয় পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রীনিধি ডেকানের শিবিরে। শ্রীনিধি ডেকানে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স নজরে আসে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ক্লাবগুলির। ২০২২ সালে চেন্নাইয়িন এফসি তাঁকে দলে ভেড়ায়।

   

চেন্নাইয়িন এফসির জার্সিতে খেলাকালীন বিজয়ের পারফরম্যান্স ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী করে তোলে বিশেষজ্ঞদের। এরপরই আসে সুযোগ। উরুগুয়ের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব কোলন এফসি তাকে লোন ভিত্তিতে সই করায়। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোলন এফসির হয়ে খেলবেন তিনি। যদি এই সময়ের মধ্যে তাঁর পারফরম্যান্স নজর কাড়ে, তবে পাকাপাকি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ক্লাবটি।

মাঠে বিজয়ের অভিষেক
প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ১৫ নভেম্বর। উরুগুয়ের লিগ ম্যাচে কোলন এফসির জার্সিতে লালুজ এফসির বিরুদ্ধে মাঠে নামেন বিজয় ছেত্রী। ম্যাচের ফলাফল ছিল কোলন এফসির পক্ষে ৫-০। বিজয়ের অভিষেক ম্যাচে এই বড় জয় নিশ্চিত করে তাঁর দলের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই ম্যাচে বিজয়ের খেলা রক্ষণভাগে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো এবং বল বিলি করার দক্ষতায় মুগ্ধ করেছেন কোচ থেকে শুরু করে ক্লাবের সমর্থকরা। তাঁর ঠান্ডা মাথার খেলা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে যে, তিনি বড় মঞ্চের জন্য তৈরি।

বিজয়ের অনুভূতি
ম্যাচের পর একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিজয় বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ যে, কোলন এফসি আমাকে সুযোগ দিয়েছে। ভারতের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাচ্ছি। আমার লক্ষ্য, ক্লাবের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়া এবং ভারতের প্রতিনিধিত্ব গর্বের সঙ্গে করা। মাঠে নামার আগে আমি শুধু একটাই কথা ভেবেছিলাম—নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’’

ভারতীয় ফুটবলে বিজয়ের প্রভাব
বিজয়ের মতো প্রতিভাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পাওয়া ভারতীয় ফুটবলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইচুং ভুটিয়া প্রথমবার বিদেশে খেলতে যাওয়ার পর ভারতীয় ফুটবলে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা বিজয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই মুহূর্তে উরুগুয়ের ক্লাবের হয়ে খেলা শুধু বিজয়ের নয়, ভারতীয় ফুটবলের গর্ব।

বিজয়ের বিদেশি ক্লাবে খেলার ঘটনায় তরুণ প্রজন্ম আরও অনুপ্রাণিত হবে। বিশেষত রিজার্ভ লিগ এবং আইএসএলে খেলার স্বপ্ন দেখানো ফুটবলাররা এই ঘটনার মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে, কঠোর পরিশ্রম করলে বিদেশি ক্লাবের দরজা খুলে যেতে পারে।

কেন উরুগুয়ে গুরুত্বপূর্ণ
উরুগুয়ে বিশ্ব ফুটবলে এক স্বর্ণালী ইতিহাস গড়েছে। সুয়ারেজ, কাভানি, ফরলানের মতো তারকাদের দেশ এটি। এমন একটি দেশে বিজয়ের খেলার সুযোগ পাওয়া তাঁর দক্ষতার বড় প্রমাণ। উরুগুয়ের ফুটবল কাঠামো এবং প্রতিযোগিতার মান ভারতীয় ফুটবলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। বিজয়ের এই নতুন অভিজ্ঞতা তাঁকে শুধু একজন দক্ষ ফুটবলার নয়, একজন পরিণত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলবে।

বিজয় ছেত্রীর উরুগুয়েতে অভিষেক ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। তাঁর এই যাত্রা দেশের তরুণ ফুটবলারদের জন্য পথ দেখাবে। কোলন এফসির হয়ে তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স যদি এইভাবেই এগিয়ে চলে, তবে শুধু উরুগুয়ের লিগেই নয়, ইউরোপের বড় লিগেও হয়তো শীঘ্রই ভারতীয় ফুটবলের পতাকা উড়বে।

বিজয়ের কাহিনি ভারতীয় ফুটবলের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই সাফল্যের মঞ্চে তাঁর আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।