জাতীয় দলের সাফল্যের প্রসঙ্গে কী বললেন বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ?

গত রবিবার (১৮ মে ২০২৫) অরুণাচল প্রদেশের ইউপিয়ার গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দল। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ)…

Bibiano Fernandes

গত রবিবার (১৮ মে ২০২৫) অরুণাচল প্রদেশের ইউপিয়ার গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দল। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছে ভারতীয় যুব দল। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র থাকলেও, পেনাল্টি শ্যুটআউটে দলের অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তা এবং দক্ষতা ভারতকে চ্যাম্পিয়নের মুকুট এনে দিয়েছে। এই জয় শুধু ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রতিভাদের প্রতিফলনই নয়, বরং অরুণাচল প্রদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

ম্যাচের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত
ম্যাচের শুরুতেই ভারত দ্রুত এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় মিনিটে দলের অধিনায়ক সিঙ্গামায়ুম শামি ৩০ গজ দূর থেকে একটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিক গোলে পরিণত করেন। শামির এই গোল স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকদের মধ্যে উৎসাহের জোয়ার তুলে দেয়। প্রথমার্ধে ভারত আধিপত্য বজায় রাখলেও, বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ফিরে আসে। ৬১তম মিনিটে মোহাম্মদ জয় আহমেদের গোলে স্কোর সমতায় আসে। এরপর উভয় দলই গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালালেও, নির্ধারিত সময়ে ফলাফল অমীমাংসিত থাকে।

   

পেনাল্টি শ্যুটআউটে ভারতের খেলোয়াড়রা অসাধারণ ধৈর্য ও দক্ষতা প্রদর্শন করে। দ্বিতীয় পেনাল্টিতে রোহেন সিংয়ের শট বাংলাদেশের গোলকিপার মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন মাহিন বাঁচালে স্টেডিয়ামে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। কিন্তু ভারতীয় দল হাল ছাড়েনি। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সালের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে গেলে খেলার মোড় ঘুরে যায়। ভারতের গোলকিপার সুরজ সিং আহেইবাম দুর্দান্ত সেভ করেন, এবং শামি শেষ পেনাল্টি গোলে পরিণত করে জয় নিশ্চিত করেন। এই জয় ভারতের সাফ ইতিহাসে দশম শিরোপা এবং অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে টানা দ্বিতীয় শিরোপা।

কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজের (Bibiano Fernandes) প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ (Bibiano Fernandes) দলের প্রতি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা জানতাম ফাইনাল মোটেই সহজ হবে না। বাংলাদেশও দুর্দান্ত লড়াই করেছে, এক গোল পিছিয়ে থেকেও তারা ফিরে এসেছে। কিন্তু আমাদের ছেলেরা অসাধারণ মানসিক শক্তি দেখিয়েছে। তারা ৯০ মিনিট এবং তার পরেও লড়াই চালিয়ে গেছে।” ফার্নান্দেজ বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করে বলেন, “তাদের প্রতিরোধের প্রশংসা করতেই হবে। এটি একটি দারুণ ম্যাচ ছিল।”

অরুণাচল প্রদেশের দর্শকদের অভূতপূর্ব সমর্থনের কথা উল্লেখ করে ফার্নান্দেজ বলেন, “অরুণাচল প্রদেশ আমাদের জন্য অসাধারণ ছিল। আমি ভারতের কোথাও যুব ফুটবল ম্যাচে এত দর্শকের উপস্থিতি দেখিনি। আমি এই জয় অরুণাচলের সমর্থকদের উৎসর্গ করতে চাই। তাঁরা আমাদের সর্বতোভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত, এটি তরুণদের জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওমাং দোদুমের মতো আরও খেলোয়াড় পাব।” অরুণাচলের স্থানীয় খেলোয়াড় ওমাং দোদুম এই টুর্নামেন্টে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা ফার্নান্দেজের প্রশংসার কারণ হয়ে উঠেছে।

Advertisements

অরুণাচলের ভূমিকা এবং দর্শকদের অবদান
অরুণাচল প্রদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে স্থানীয় দর্শকদের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৮-০ এবং নেপালের বিরুদ্ধে ৪-০ গোলের জয়, সেমিফাইনালে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয় এবং ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শ্যুটআউটে জয়—প্রতিটি ম্যাচে দর্শকদের উৎসাহ দলকে নতুন শক্তি জুগিয়েছে। এমনকি সেমিফাইনালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও দর্শকরা স্টেডিয়াম ছেড়ে যাননি, যা ফার্নান্দেজ এবং অধিনায়ক শামি উভয়েই প্রশংসা করেছেন। শামি বলেন, “অরুণাচলের মানুষ ফুটবলকে এত ভালোবাসে। তাদের সমর্থন আমাদের গর্বিত করেছে।”

ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ এবং ফার্নান্দেজের স্বপ্ন
বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ ভারতীয় যুব ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ। তিনি এর আগে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ এবং ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ শিরোপা জিতেছেন। এই জয় তার চতুর্থ সাফ শিরোপা। তিনি বলেন, “ভারতে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। যদি আমরা সঠিকভাবে উন্নয়ন করতে পারি, তবে একদিন ভারত বিশ্বকাপে অংশ নেবে। এটাই আমার স্বপ্ন।” দল এখন পরবর্তী বছরের এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের কোয়ালিফায়ারের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে, যা ফার্নান্দেজের জন্য আরেকটি বড় লক্ষ্য।

টুর্নামেন্টে ভারতের আধিপত্য
ভারত টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য ছিল। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা এবং নেপালকে বড় ব্যবধানে হারানোর পর, সেমিফাইনালে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তারা তাদের আক্রমণাত্মক খেলা অব্যাহত রাখে। ড্যানি মেইটি লাইশরাম সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং মোহাম্মদ আরবাশ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন, যা দলের সামগ্রিক শক্তি প্রদর্শন করে। গোলকিপার সুরজ সিং আহেইবামও সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেয়েছেন।

ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের এই জয় শুধু একটি শিরোপা নয়, বরং ভারতীয় ফুটবলের তৃণমূল স্তরে ক্রমবর্ধমান উন্নতির প্রতিফলন। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে ভারতীয় যুব ফুটবল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। অরুণাচল প্রদেশের সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতিভা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এই জয়ের মাধ্যমে ভারত সাফের আধিপত্য ধরে রেখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে সাফল্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।