ভারতের প্রাপ্তির ঝুলি কি একেবারেই শূন্য? এই প্রশ্নটি প্রায়ই ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্রিকেট মহলে। ব্যর্থতার মেঘে ঢেকে গেছে ভারতের গত কয়েকটি ম্যাচের পরিণতি, কিন্তু এর মধ্যেও কিছু দিক রয়েছে যা প্রাপ্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিগত কয়েক মাসের ভারতের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির (BGT) পরে, অনেকেই মনে করছেন যে ভারতের ক্রিকেটে কিছু শেখার বিষয় রয়েছে, আর তা যতটা কঠিন, ততটাই মূল্যবান। আসুন, এক নজরে দেখি ভারতীয় দলের সেই অর্জনগুলো, যেগুলো আলোচনায় এসেছে।
১. সিরাজের অবদান এবং সমালোচনা
শুরুতেই আসি মোহাম্মদ সিরাজের প্রসঙ্গে। ভারতের পেস আক্রমণের অন্যতম স্তম্ভ সিরাজ, যাকে অনেকেই অতিরিক্ত ব্যবহার করার জন্য সমালোচনা করেছেন। গত দুবছর আগেও ওয়ান ডে র্যাংকিংয়ের একনম্বর বোলার হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন সিরাজ। তবে বর্তমানে তাকে বিভিন্ন ট্র্যাকে একটু বেশিই চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সাইকেলে সিরাজকে ৬৩০ ওভারের বেশি বল করতে দেওয়া হয়েছে, যা শারীরিকভাবে অনেকটা ক্লান্তিকর ছিল। বুমরাহ ও সামির অনুপস্থিতিতে তাকে প্রায়ই প্রাথমিক বোলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এই অতিরিক্ত চাপের মধ্যে সিরাজের পারফরম্যান্স মোটেও বাজে নয়। তিনি ৫টি টেস্ট ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়েছেন, যা বুমরাহ এবং কামিন্সের পরেই রয়েছে। অর্থাৎ, যতোটা সমালোচনা হয়েছে, সিরাজ আসলে ততটা খারাপ বোলিং করেননি। এর মধ্যে অন্যতম দিক হলো, সিরাজের ধারাবাহিকতা এবং দুর্দান্ত লাইন-লেংথ। যদিও সবসময় ফর্মে থাকা সম্ভব নয়, তবে সিরাজ এই অবস্থায় খুব ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, যা তার জন্য এক বড় প্রাপ্তি।
২. টেস্ট সিরিজে ভারতের সম্ভাবনা
ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা শুরু করলে, অনেকেই সমালোচনা করেছেন দলের ব্যাটিং নিয়ে। বিশেষ করে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজের ফলাফল ভারতের জন্য হতাশাজনক ছিল। তবে, বিশ্লেষকদের মতে, এই সিরিজে ভারত অন্তত একটি ড্র বা ১-২ ফল পেতে পারতো যদি মেলবোর্নে প্রথম টেস্টে ড্র না হতো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের পর, যখন ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখে, তখন অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে এই সিরিজটি আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু ভারতের পারফরম্যান্স সবদিক থেকে ব্যর্থতার দিকে না গিয়ে, তাদের সংকল্প ও আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছে।
এছাড়া, দলের কম্পোজিশন এবং কোচিং স্টাফের দিক থেকেও কিছু গঠনমূলক পরিবর্তন দরকার ছিল। ভারতের দলের জন্য এই সিরিজে কিছু লাভ হয়েছে, যেহেতু তারা যশশ্বী জয়সোয়ালের মতো প্রতিভাকে দেখার সুযোগ পেয়েছে, যারা নিজেদের প্রথম সুযোগেই উজ্জ্বল প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে।
৩. যশশ্বী জয়সোয়াল: নবতর প্রতিভা
ভারতের ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ এই তরুণ ক্রিকেটার যশশ্বী জয়সোয়ালকে নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা যথার্থই গুরুত্বপূর্ণ। সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তার বাজে পারফরম্যান্সের পর, তাকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি। কিন্তু এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরে সে তার আসল প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। তার শক্তিশালী শট খেলার কৌশল এবং প্রতিরোধের ক্ষমতা তাকে সামনে নিয়ে আসছে। বিশেষভাবে, তার ব্যাটিংয়ে যে পরিমাণ দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস দেখা গেছে, তা ভারতের জন্য এক বড় প্রাপ্তি। যদি তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে ভবিষ্যতে সে ভারতের জন্য আরও বড় কিছু করতে সক্ষম।
৪. ঋষভ পন্থ: অনন্য ব্যাটিং
অন্যদিকে, ভারতের সর্বোচ্চ ইন ফর্ম ব্যাটার ঋষভ পন্থও কিছুটা সাইডলাইনে চলে গেছেন। গত ২-৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ঋষভ পন্থ ভারতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার দুটি ম্যাচে ১০৪ বলে ৩০ রান এবং ১০৫ বলে ৪০ রান করার পর কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে। তবে, এই ধরনের পারফরম্যান্সের জন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না। গাভাসকারের গালির পর, বা নিজের পছন্দের মতো খেলার পরও, পন্থ যে ধরনের খেলাধুলার ক্ষমতা দেখিয়েছে তা অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি যেভাবে এক সিরিজে অফফর্ম দেখালেও, তার সামগ্রিক দক্ষতা এখনও ভারতীয় দলের জন্য বিরাট শক্তি।
৫. অস্ট্রেলিয়ার দক্ষ পরিকল্পনা
অস্ট্রেলিয়া এই সিরিজে খুব ভালো খেলার পর ফাইনালে উঠেছে। তবে, ভারতের ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা সেখানে একটি বড় কারণ। অস্ট্রেলিয়া বোলিং পরিকল্পনা প্রতিটি ব্যাটারের জন্য খুব ভালোভাবে তৈরি করেছিল, যা তাদের সফলতা নিশ্চিত করেছে। যদিও ভারতীয় দল ভালো শট নির্বাচন এবং প্ল্যানিং করতে পারলে, হয়তো ফলাফল আরও ভিন্ন হতে পারতো। সুতরাং, এই সিরিজের শেষে ভারতের জন্য যে প্রাপ্তি রয়েছে তা হলো, দলটি আরও ভালো পরিকল্পনা এবং ব্যাটিংয়ে আরও ধারাবাহিকতার দিকে কাজ করতে পারে।
এখনো অনেক কিছু বাকী রয়েছে ভারতের জন্য। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফল অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখলেও, ভারতের ক্রিকেট দলের মাঝে কিছু অমূল্য প্রাপ্তি রয়েছে। সিরাজের ধারাবাহিকতা, যশশ্বী জয়সোয়ালের প্রতিভা, ঋষভ পন্থের ব্যাটিং এবং ভারতীয় দলের সামগ্রিক শক্তি—এগুলো হলো এমন কিছু দিক যা ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে পারে।