২০১৭-১৮ মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) অভিষেকের পর থেকেই বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC) নিজেকে প্রমাণ করেছে। লিগের অন্যতম ধারাবাহিক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্লাব হিসেবে। শুরু থেকেই তারা দেখিয়েছে তাদের আধিপত্য, প্রথম দুই মরসুমেই লিগ টেবিলের শীর্ষে শেষ করে। যদিও প্রথম ফাইনালে চেন্নাইন এফসির কাছে হেরে গিয়েছিল তারা, পরের বছর তারা প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ইতিহাস গড়ে তোলে।
অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পাঁচবার প্লে-অফে পৌঁছেছে। একবার আইএসএল কাপ জিতেছে এবং তিনবার রানার্স-আপ হয়েছে। এই দলের মধ্যে বহু প্রতিভাবান ফুটবলার খেলেছেন, যারা নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে ক্লাবকে বারবার সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। নিচে দেখে নেওয়া যাক বেঙ্গালুরু এফসি’র সর্বকালের সেরা আইএসএল একাদশ, যারা দলের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
গোলরক্ষক: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (Gurpreet Singh Sandhu)
বেঙ্গালুরুর ‘অটল প্রাচীর’। ২০১৭ সাল থেকে গুরপ্রীতের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁকে সেরা করে তুলেছে। ১৬৪ ম্যাচে ৫২টি ক্লিন শিট, দুইবার গোল্ডেন গ্লাভস জয়। এক কথায় তিনি বেঙ্গালুরুর রক্ষণভাগের মুখ।
রাইট ব্যাক: হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা (Harmanjot Singh Khabra)
যতটা নির্ভরযোগ্য, ততটাই কর্মঠ। ডানদিকে খেলা ছাড়াও মিডফিল্ডে প্রয়োজনে নেমেছেন। চার বছরে ৬০ বেশি ম্যাচ খেলে ২০১৮-১৯ মরসুমে কাপ জয়ের মূল সৈনিকদের একজন।
সেন্টার ব্যাক: রাহুল ভেকে (Rahul Bheke) ও জুয়ানান (Juanan)
রাহুল ভেকে, দুই দফার এই ডিফেন্ডার বেঙ্গালুরুর হয়ে ৯০ বেশি ম্যাচ খেলে ২০১৮-১৯ আইএসএল ফাইনালে জয়সূচক গোলটি করেন। তাঁর দলনেতৃত্ব ও পারফরম্যান্স তাকে সেরা করে তোলে।
স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জুয়ানান ছিলেন রক্ষণভাগের অন্যতম স্তম্ভ। চার বছর ক্লাবে থেকে ২৫টি ক্লিন শিটে অবদান রাখেন। তাঁর স্থিতিশীলতা ও অভিজ্ঞতা ছিলেন ফাইনাল-জয়ী দলের অপরিহার্য অংশ।
লেফ্ট ব্যাক: নাওরেম রোশন সিং (Naorem Roshan Singh)
২০২০-২১ মরসুমে যাত্রা শুরু করা রোশন পরে লেফ্ট ব্যাক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দুই পায়ে সমান দক্ষতা এবং ১৪টি অ্যাসিস্ট, ১০০টি সুযোগ তৈরি করে তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: এরিক পার্টালু (Erik Paartalu)
অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডার পার্টালু ছিলেন শক্তি, ভারসাম্য ও ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। ৬৭ ম্যাচে ৯টি গোল ও ৭টি অ্যাসিস্ট দিয়ে তিনি প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন।
মিডফিল্ড: ডিমাস ডেলগাডো (Dimas Delgado) ও সুরেশ সিং ওয়াংজাম (Suresh Singh Wangjam)
স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ডিমাস ছিলেন দলের ব্রেইন। ১৪টি অ্যাসিস্ট ও অসাধারণ পাসিং রেঞ্জ তাঁকে বেঙ্গালুরুর অন্যতম কার্যকর মিডফিল্ডার করে তোলে।
আর সুরেশ সিং, যিনি আজকের দিনে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ, বেঙ্গালুরুর হয়ে ১১৩টি ম্যাচ খেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর অসীম স্ট্যামিনা ও ডিফেন্সিভ অবদান একে অপরকে পরিপূরক করেছে।
রাইট উইঙ্গার: উদান্ত সিং (Udanta Singh)
‘ফ্ল্যাশ’ নামে পরিচিত উদান্ত তাঁর গতির জন্য বিখ্যাত। ১০০’র বেশি ম্যাচ, ১১টি গোল ও ১৪টি অ্যাসিস্ট দিয়ে ডান প্রান্তকে বেগবান করে তুলেছিলেন।
লেফ্ট উইঙ্গার: সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)
বেঙ্গালুরু মানেই সুনীল ছেত্রী। ক্লাবের প্রাণভোমরা ছেত্রী ১৬৬ ম্যাচে ৬৮টি গোল করেছেন। ৪০ বছর বয়সেও তাঁর ফর্ম অব্যাহত, গত সিজনে আবারও ১৪টি গোল করে নিজের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন।
স্ট্রাইকার: মিকু ফেডর (Miku Fedor)
শুধু দু’টি মরসুম খেলেও ভেনেজুয়েলার এই ফরোয়ার্ড বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে নিজেকে কিংবদন্তি করে তুলেছেন। ২০ গোল ও ৪ অ্যাসিস্টে তিনি ছিলেন আক্রমণের ভয়ঙ্কর অস্ত্র।
প্রধান কোচ: কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)
২০১৮-১৯ মরসুমে প্রধান কোচ হিসেবে বেঙ্গালুরুকে আইএসএল কাপ জেতান। রক্ষণভাগে স্থায়ীত্ব এবং ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন তাঁর মূল পরিচয়।
এই একাদশ শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, বেঙ্গালুরু এফসি’র একটি আবেগ, একটি ইতিহাস। এই দলটি ক্লাবের স্বর্ণযুগের প্রতীক। আগামী দিনেও হয়তো নতুন তারকারা আসবে, তবে এই নামগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ‘দ্য ব্লুজ’ ভক্তদের হৃদয়ে।
Bengaluru FC iconic XI featuring the best to represent the Blues in the ISL