ভালোবাসার দিনে বাঙালি খুঁজছে সেই ম্যাজিশিয়ানকে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি! ১৯৬২। বেঁচে থাকলে ৬৩ পেরিয়ে ৬৪ তে পা দিতেন আজ! বেঁচে থাকলে? ম্যাজিশিয়ানদের আবার চলে যাওয়া থাকে নাকি? তারা তো থেকেই যান!…

Bengalis Seek the Magic of Krishanu Dey

১৪ ই ফেব্রুয়ারি! ১৯৬২। বেঁচে থাকলে ৬৩ পেরিয়ে ৬৪ তে পা দিতেন আজ! বেঁচে থাকলে? ম্যাজিশিয়ানদের আবার চলে যাওয়া থাকে নাকি? তারা তো থেকেই যান! ভগবান কী একটা আশ্চর্য দিন বেছে নিয়েছিলেন কৃশানু দে’কে (Krishanu Dey) পৃথিবীতে আনার জন্য! এটা নাকি ভালোবাসার দিন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে! ছয়ের দশকের শুরুতে যখন তিনি ধরাধামে এলেন তখনও গ্লোবালাইজেশন শব্দটা এমন করে গ্রাস করেনি বাঙালি জীবনকে। ভ্যালেনটাইন্স ডে শব্দটা তখনও শোনেইনি বাঙালি। কিন্তু তাদের অজান্তেই এক ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল সেই বছরের সেই চোদ্দই জানুয়ারির দিনটায়।

বড় মধ্য মেধার দাপাদাপি চারিদিকে। জীবন বড় জটিল এখন। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই লড়তে হয় প্রতিটা মুহূর্তে। অলৌকিক কোনো কিছুই আর ঘটেনা জীবনে আজকাল। একান্ন পার করে বাহান্নতে পা দেওয়া আমি যখন কোনো বিষণ্ণ বিকেলে এই দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের এই বাসাটার লোহার গ্রিল ছুঁয়ে দাঁড়াই তখন হঠাৎই ভেসে ওঠে বহু বছর আগের ভিড়ে ঠাসা যুবভারতী। এক গ্রাম্য কিশোর গ্রামেরই দুই দাদার সঙ্গে দৌড়োতে, দৌড়োতে ঢুকছে। খেলা শুরু হয়ে গেছে। একটা গর্জন উঠে আসছে ভরা গ্যালারি থেকে। ভিড়ের ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে সেই কিশোর দেখেছিল একটা ছোট্ট শরীর কেমন করে বড় বড় চেহারার বিদেশীদের টপকে যাচ্ছে। গর্জন বাড়ছিল। তারপর এরিক গেরেটসের বাড়িয়ে দেওয়া পায়ে আটকে গিয়েছিল ছোট্ট শরীরটা! পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। গর্জনটা একটা হাউইয়ের মতই আকাশে মিলিয়ে গিয়েছিল যেন।

   

একটা ছোট্ট শরীর। কুঁজো হয়ে নিজের গোলের দিকে মুখ করে বলটা ধরা আর তারপর অলৌকিক সেই হাফ টার্নটা! সেই দৌড়। রোজকার জীবনে রোজই হেরে যাওয়া মধ্যবিত্ত বাঙালিও দৌড় দিত। কাটাতো একের পর এক প্রতিপক্ষকে। তারপর মাটিতে পড়ে যেত। আবার উঠে পড়ত পিঠের ধুলো ঝেড়ে। আবার অলৌকিকের পিছনে ধাওয়া করত।

বাঙালিরা ম্যাজিক শব্দটা খুব ভালোবাসে। আর তাই বহু বাঙালির কাছে তিনি নাকতলার ম্যাজিশিয়ান! অনেকেই আছেন যাদের ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হয়নি। তাঁরা মনে মনে রোজ কৃশানু দের মতই কোমরের দোলায় ছিটকে দেওয়ার চেষ্টা করতেন প্রতিপক্ষকে। অনেকেই চুনী দেখেননি, সুরজিৎ দেখননি। তবু ফুটবলপ্রেমী বাঙালির কাছে কৃশানু ছিলেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। তাঁর মাঠ ছাড়ার পরেও বাঙালি বাঁ পায়ের কোনো ফুটবলার দেখলেই কৃশানুকে খুঁজেছে সবুজ ঘাসে। অভিজিৎ রায়চৌধুরী, সৌভিক চক্রবর্তী, হালের তীর্থঙ্কর সরকার…। বাঙালি খুঁজে চলেছে। এক অনন্ত খোঁজ!

বাঙালি খুঁজছে নাকতলার ম্যাজিশিয়ানকে! বাঙালি তাকে ছুঁতে চাইছে। অলৌকিক স্পর্শের সন্ধান চলতেই থাকে। এ সন্ধান চলতে থাকবে যতদিন বাঙালির জীবনে ফুটবল নামের খেলাটা বেঁচে থাকবে।