২০২৫ সালের শেষ দিনে সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন (Santoh Trophy Champion) হওয়ার মাধ্যমে ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখেছেন সঞ্জয় সেন (Sanjoy Sen) এবং তাঁর বাংলা দল। ২০২২ সালে টাইব্রেকারে কেরালার (Kerala) কাছে হারতে হয়েছিল, কিন্তু এবার বাংলার (Bengal) ফুটবল প্রেমীদের জন্য এল এক অনন্য জয়। এবারের সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জয় ছিল এক নতুন সূচনা, যেখানে বাংলার ফুটবল দল শুধু সেরা হয়নি, বরং তাদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের পরিণতি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জল্পনা, বর্ষবরণের রাতে অবসর নিলেন হিটম্যান? সিডনি টেস্টে ভারতের নতুন অধিনায়ক!
ম্যাচের শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মাতে সঞ্জয় সেন, রবি হাঁসদা, নরহরি, সৌরভরা। বাংলা ফুটবল দলের এই জয়ে যেন ভেসে উঠছিল সেই অতীতের স্মৃতি, যেখানে ২০২২ সালে টাইব্রেকারে কেরলের কাছে হারতে হয়েছিল বাংলাকে। সেই দুঃখের দিনগুলো ভুলে গিয়ে এবার গৌরব অর্জন করতে পেরেছে বাংলা। তাদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর অনুশীলন, একাধিক প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং একসঙ্গে কাজ করার এক অদম্য স্পিরিট।
সন্তোষ ট্রফি জয়ে বাংলা ফুটবল দলকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, থাকছে কী বিশেষ উপহার?
বাংলা কোচ সঞ্জয় সেনের কথা বললে, তাঁর মুখে ছিল এক অদ্ভুত তৃপ্তি, তাঁর দলের অর্জনে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলা দলের শক্তিশালী অভিযানের সূচনা। সঞ্জয় সেন আগেই বলেছিলেন, “আমাদের অপরাজিত থাকা মূল্যহীন হয়ে যেত যদি ফাইনাল না জিততাম।” তাঁর এই দৃঢ় মনোবল ছিল দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ফাইনালে এই কঠিন মানসিকতার কারণে বাংলাকে প্রথম থেকেই এগিয়ে থাকতে সাহায্য করেছে।
এবার বাংলা দল ফাইনালে কেরলকে পরাজিত করেছিল, যা ছিল পূর্বের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে না। কেরলের বিরুদ্ধে পরাজয়ের ব্যথা কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সাথে বাংলা দল তাদের গতি এবং প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারল। সঞ্জয় সেন দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছেন। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পরও রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিয়ে সার্ভিসেস এবং মণিপুরের মতো শক্তিশালী দলকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল বাংলা দল। বাংলার ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস তখন আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছিল।
প্রকাশ্যে এল বড় আপডেট, আইপিএলে ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামবেন রিঙ্কু?
ম্যাচের পরে বাংলা অধিনায়ক চাকু মান্ডি নিজের আবেগ আর খুশি প্রকাশ করতে একদম আটকাতে পারছিলেন না। তাঁর মুখে ছিল রবির প্রশংসা। চাকু মান্ডি বলেছিলেন, “রবি আজ দারুণ খেলে গোল করল। আগের ম্যাচেও গোল করেছিল। দলের সবাই একসাথে কাজ করার জন্যই আজকের জয় সম্ভব হয়েছে।” তাঁর এই কথাগুলি দলের মধ্যে এক চমৎকার সহযাত্রার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। রবির প্রসঙ্গ উঠতেই সবার মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। সেই রবি হাঁসদা, যিনি নিজের খেলা এবং গোল দিয়ে বাংলা দলের জয়কে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, সঞ্জয়ের প্রশংসার পাত্র।
বাংলার এই জয় শুধু বাংলা দলের জয় নয়, পুরো ফুটবল মহলের জয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকার এই সাফল্যকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো বাংলা আমাদের হৃদয়ে থাকে। বাংলার এই জয় ইস্টবেঙ্গলেরও জয়।” দেবব্রত সরকার বাংলা দলের সাফল্যকে পরিকল্পনামাফিক খেলার ফলাফল হিসেবে তুলে ধরেন এবং এর জন্য টিম এবং আইএফএ-কে শুভেচ্ছা জানান।
একী কাণ্ড! এফসি গোয়ার ফুটবল ইতিহাসে বাগানের প্রাক্তন কোচ?
সঞ্জয় সেনের পরিকল্পনা, দলের কঠোর পরিশ্রম, এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তা বাংলা ফুটবলকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তিনি অতীতের স্মৃতি ত্যাগ করে দলকে এক নতুন পথ দেখিয়েছেন। সঞ্জয় সেনের মতে, “বাংলা ট্রফি না জিতলে কোন অর্থই ছিল না। আমরা হারতে রাজি ছিলাম না, তাই পরিশ্রম করতে থাকলাম।”
এবার বাংলার ফুটবল দল নিশ্চয়ই ইতিহাসের পাতায় সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে। এই জয়ের মাধ্যমে বাংলার ফুটবল বিশ্বে আবারও প্রমাণিত হল যে তারা এখন শুধু অতীতের সাফল্যের জন্য পরিচিত নয়, বরং ভবিষ্যতের এক শক্তিশালী দল হিসেবে উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের এই জয় বাংলা ফুটবলের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।