৩ জুন ২০২৫ আরসিবি (RCB) আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে (Chinnaswamy) আয়োজন করা হয়েছিল এক জাঁকজমক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ইতিমধ্যেই ভারত ‘এ’ (India ‘A’) বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ (South Africa ‘A’) মধ্যে তিনটি একদিনের ম্যাচ (ODI series) এবং দুটি চার দিনের ম্যাচ বেঙ্গালুরু থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
৩ জুন ২০২৫ আরসিবি (RCB) আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে (Chinnaswamy) আয়োজন করা হয়েছিল এক জাঁকজমক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শহরজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ, উল্লাসে ফেটে পড়েছিল গোটা কর্নাটক। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয় ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায়। স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হওয়া বিশাল জনতার চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের, আহত হন বহু মানুষ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পরে একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে—কে এই ঘটনার জন্য দায়ী? আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজি, কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা (কেসিএ), না কি রাজ্য পুলিশ?
যদিও কেসিএ এবং আরসিবি নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে, বিসিসিআই (BCCI ) কিন্তু বিষয়টিকে একেবারেই হালকাভাবে নেয়নি। বোর্ডের তরফ থেকে বড়সড় পদক্ষেপ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আপাতত চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কোনও আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ম্যাচ হবে না। ইতিমধ্যেই ভারত ‘এ’ (India ‘A’) বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ (South Africa ‘A’) মধ্যে তিনটি একদিনের ম্যাচ (ODI series) এবং দুটি চার দিনের ম্যাচ বেঙ্গালুরু থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজটি হবে রাজকোটে (Rajkot) এবং লাল বলের ম্যাচগুলো হবে বোর্ডের সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে।
বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ওই দিনকার নিরাপত্তা ব্যর্থতা ও স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মোটামুটি ৫০ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা থাকলেও সেইদিন বাইরে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। অনেকে জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলস্বরূপ ঘটে মারাত্মক বিপর্যয়।
ঘটনার পর কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা দাবি করে, এই বিজয়োৎসবের আয়োজন বা নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। তারা পুরো দায় চাপিয়ে দেয় আরসিবি ও পুলিশের উপর। অন্যদিকে, পুলিশ আধিকারিকরা জানান, আরসিবি কর্তৃপক্ষের চাপেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে বাধ্য হয় তারা, যদিও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির ব্যাপারে তারা আগেই সতর্ক করেছিল।
এই ঘটনার ফলে শুধু কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা নয়, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে। বিশেষ করে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ উদ্বোধনী ম্যাচ, একটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল বেঙ্গালুরুতে। এখন সেই সব ম্যাচ অন্য ভেন্যুতে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আইসিসি এবং বিসিসিআইয়ের মধ্যে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বোর্ড চাইছে, যতক্ষণ না চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন সেখানে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন না করতে। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়ামের প্রবেশ ও প্রস্থান পথ, দর্শক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ক্ষয়ক্ষতির দিকটিও কম উদ্বেগের নয়। সেদিনের হুড়োহুড়ির চাপে স্টেডিয়ামের বেশ কিছু জায়গার দেওয়াল ও রেলিং ভেঙে যায়। ফলে পুরো স্টেডিয়ামকে আবার খতিয়ে দেখে সারানো প্রয়োজন। এই কারণেও দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে বড় ম্যাচ আয়োজন সম্ভব নয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা এখন তীব্র চাপের মুখে। বোর্ডের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ, জনমতের ক্ষোভ এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা মিলে সংস্থার ভাবমূর্তিতে বড়সড় আঁচ লেগেছে। সাংবাদিক বৈঠকে কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি রঘুরাম ভাট যদিও দাবি করেন যে, ম্যাচ সরানোর পেছনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই, তবে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সূত্র তা পুরোপুরি খারিজ করেছে।