সিঙ্গাপুর ম্যাচের পূর্বে শেফিল্ড ছেড়ে আবেগঘন বার্তা ওপার বাংলার তারকা ফুটবলারের

২০২৪-২৫ মরসুমটা বাংলাদেশি (Bangladesh) বংশোদ্ভূত ইংলিশ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর (Hamza Choudhury) ফুটবল ক্যারিয়ারে এক অগ্নিপরীক্ষার নাম হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ক্লাব লেস্টার সিটির খেলোয়াড় হয়েও…

Hamza Choudhury left England Football Club Sheffield United FC

২০২৪-২৫ মরসুমটা বাংলাদেশি (Bangladesh) বংশোদ্ভূত ইংলিশ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর (Hamza Choudhury) ফুটবল ক্যারিয়ারে এক অগ্নিপরীক্ষার নাম হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ক্লাব লেস্টার সিটির খেলোয়াড় হয়েও সিজনের শুরুতে তিনিলোনে যোগ দেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে (Sheffield United FC), যার মূল লক্ষ্য ছিল প্রিমিয়ার লিগে ফেরার পথ সুগম করা। কিন্তু ফুটবল যেমন অনিশ্চয়তার খেলা, তেমনি এই যাত্রাপথও শেষমেশ পরিণত হলো হতাশার এক গল্পে।

চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে শেফিল্ড ইউনাইটেড ছিল বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্লে-অফ ম্যাচে সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে শেষ মুহূর্তে থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা। প্রিমিয়ার লিগের দরজায় পৌঁছেও সেটা আর খোলা হলো না ব্লেডসদের জন্য। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার হিসেবে হামজা চৌধুরী নিজের সবটা উজাড় করে দিলেও ভাগ্য আর সময় একসঙ্গে হয়নি বলে কষ্টটা যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

   

এই ব্যর্থতার মাঝেও হামজা যে পেশাদারিত্ব ও কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছেন, তা নজর কেড়েছে অনেকের। ধারে কাটানো সিজন শেষে তিনি শেফিল্ড ইউনাইটেডকে একটি আবেগঘন বার্তায় বিদায় জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া ওই পোস্টে হামজা লিখেছেন, “এভাবে মরসুমের শেষ হওয়াটা সত্যিই খুব কষ্টদায়ক। গত কয়েক দিন ধরে ঠিক কীভাবে কথাগুলো বলব, সেটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছে, আমরা আরও অনেক বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিলাম, কিন্তু ভাগ্যে সেটা লেখা ছিল না।”

তিনি আরও লেখেন, “আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই শেফিল্ড ইউনাইটেডের সঙ্গে যুক্ত সকলকে—প্রধান কোচ ও তার সহকারী স্টাফদের, আমার সব সতীর্থদের, এবং প্রতিটি সমর্থককে, যারা আমার সময়টা এখানে এতটা স্মরণীয় করে তুলেছেন।” এই কথাগুলোতে ফুটে উঠেছে তাঁর মানসিক দৃঢ়তা, শ্রদ্ধাবোধ এবং খেলাটির প্রতি ভালোবাসা।

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

A post shared by Hamza Choudhury (@hamzachoudhury)

অন্যদিকে, হামজার মূল দল লেস্টার সিটিও ২০২৪-২৫ মরসুম শেষে প্রিমিয়ার লিগ থেকে নেমে গেছে চ্যাম্পিয়নশিপে। ফলে শেফিল্ডে ধারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে ফিরতে হচ্ছে লেস্টারের ক্যাম্পে। আবারও তাকে ক্লাব পর্যায়ে নতুন করে নিজের জায়গা তৈরি করতে হবে।

Advertisements

তবে ক্লাব ফুটবলের এই কঠিন পর্ব শেষে হামজা এখন পুরোপুরি মনোযোগ দিচ্ছেন জাতীয় দলের দিকেই। বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে তাঁকে আগামী ১০ জুন দেখা যেতে পারে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে, সেটিও দেশের মাটিতে। এটি হতে পারে তাঁর দেশের মাটিতে অভিষেক ম্যাচ। এর আগে ২০২৫ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে খেলেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ওই ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ও মাঠে উপস্থিতি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন এক আশার সঞ্চার করে।

হামজার জাতীয় দলে খেলার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র কাগজে-কলমে পরিবর্তন নয়; এটি বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। একজন প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলারের অভিজ্ঞতা ও মানসিকতা জাতীয় দলের তরুণদের মাঝে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে তাঁর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলার দক্ষতা, পজিশনিং ও বল কন্ট্রোল দেশের ফুটবলকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

হামজা চৌধুরীর গল্প শুধুই একজন খেলোয়াড়ের দলবদল কিংবা পারফরম্যান্সের নয়; এটি একটি মানসিক দৃঢ়তা, নিজের শেকড়ের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং চ্যালেঞ্জকে সাদরে গ্রহণ করার গল্প। শেফিল্ড ইউনাইটেডের ব্যর্থতার পরও তিনি যে ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যতের প্রতি আশা জাগায়।

এই নতুন অধ্যায়ে হামজাকে ঘিরে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশাও এখন তুঙ্গে। তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে গোটা বাংলাদেশ। এবার অপেক্ষা দেশের জার্সিতে মাঠ কাঁপানোর।