বাংলাদেশ ফুটবলের (Bangladesh Football) জন্য সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ মরসুম ঘরোয়া ফুটবলের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও শেষ হয়েছে ফর্টিস এফসি ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। নতুন সিজন শুরু হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর, চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে। এর আগে ১ জুন থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে দলবদলের (Transfer Window) সময়। এই সময়ে ক্লাবগুলো নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পেশাদার লিগ কমিটির তৃতীয় সভায় নতুন মরসুমকে ঘিরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—বাংলাদেশ জাতীয় দলের ইউরোপের কোনো দেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ইচ্ছা।
আগামী ১ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিফা উইন্ডোতে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ খেলতে চায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, “আমরা সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে ম্যাচ খেলব। সেটা অ্যাওয়ে হতে পারে, আবার হোমও হতে পারে। অ্যাওয়ে হলে আমাদের ইচ্ছা ইউরোপের কোনো দেশের সঙ্গে খেলা।”
জাতীয় দলের এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে দলের পারফরম্যান্স উন্নয়নের চিন্তা। ইউরোপের উন্নত ফুটবল কাঠামো ও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে বাফুফে।
নতুন মরসুমে মোট পাঁচটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ফেডারেশনের। এর মধ্যে রয়েছে বহু প্রতীক্ষিত সুপার কাপ, যা গত সিজনে আয়োজনের চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার তা মাঠে গড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪–২৫ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ চার দল—মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী লিমিটেড, বসুন্ধরা কিংস ও রহমতগঞ্জ—এই সুপার কাপে অংশ নেবে।
লিগ শেষ হওয়ার পর ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হবে স্বাধীনতা কাপ। এই টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র স্থানীয় ফুটবলারদের খেলার অনুমতি থাকবে। এটি স্থানীয় খেলোয়াড়দের আত্মপ্রকাশের একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রফি বিতরণেও এসেছে পরিবর্তন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র লিগ চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি পাবে। রানার্সআপ দলের জন্য থাকছে না কোনো ট্রফি। এমন সিদ্ধান্ত প্রতিযোগিতার মান আরও বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
বিদেশি ফুটবলার নিয়েও বড় পরিবর্তন এসেছে। আগামী মরসুম থেকে প্রতিটি ক্লাব পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে, ম্যাচে খেলতে পারবে তিনজন। আগে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ছয় ও চারজন।
বয়সভিত্তিক উন্নয়নের চিন্তা থেকে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ক্লাবের শুরুর একাদশে একজন অনূর্ধ্ব–২০ খেলোয়াড় রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ইমরুল হাসান বলেন, “যখন অনূর্ধ্ব–২৩ ও জাতীয় দলের খেলা একসঙ্গে পড়ে, তখন দল নির্বাচনে সমস্যা হয়। বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়দের সুযোগ দিলে আমাদের হাতে বিকল্প খেলোয়াড় থাকবে।”
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য আর কোনো ক্লাবের হয়ে ডাগআউটে থাকতে পারবেন না। এর ফলে স্বচ্ছতা এবং স্বার্থসংঘাত এড়ানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২৫–২৬ মরসুমে বাংলাদেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। পরিকল্পনাগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হলে দেশের ফুটবল কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে বলেই আশা করা যায়।