বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার্সে (Asian Cup Qualifiers) ভারতের (India vs Bangladesh) বিরুদ্ধে ম্যাচে মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর (Hamza Choudhury) ভূমিকা নিয়ে আশাবাদী। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচে হামজার উপস্থিতি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তৈরি করবে বলে তিনি মনে করেন।
গতকাল সৌদি আরবে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ শিবির শেষ করে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্প্যানিশ কোচ ক্যাবরেরা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর প্রভাব নিয়ে তার আত্মবিশ্বাসের কথা জানান। “অবশ্যই, হামজার মতো একজন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়ের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের জন্য বড় শক্তি। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে পার্থক্য গড়ে দেবেন,” ক্যাবরেরা বলেন।
Also Read | ভারতের বিপক্ষে বাংলার ‘নতুন স্টার’ হামজা চৌধুরী কে?
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি দলের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে—তার নেতৃত্ব এবং পেশাদারিত্বের কারণে। আমি মনে করি, তিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে উৎসাহী। নিশ্চিতভাবেই কিছু ভালো ফল আসবে।” আজ রাতে ঢাকায় হামজার সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন ক্যাবরেরা। তিনি জানান, পুরো দলটি হামজাকে স্বাগত জানাতে এবং তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শুরু করতে উদগ্রীব।
“সবাই উৎসাহিত। সব খেলোয়াড় তার সঙ্গে দেখা করতে এবং প্রশিক্ষণ নিতে চায়। আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম। আমি ভারতকে হারানোর পরিকল্পনা নিয়ে তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ শুরু করার অপেক্ষায় আছি,” বলেন ক্যাবরেরা।
বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে রাইট-ব্যাক হিসেবে খেলা হামজা দলে যোগ দেওয়ায় ক্যাবরেরা মনে করেন, বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। উল্লেখ্য, ভারত তাদের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনেছে এই ম্যাচের জন্য। তবুও ক্যাবরেরা আশাবাদী। “সুনীল ছেত্রী এই ম্যাচের জন্য ফিরে আসায় সবাই উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত। ভারত একটি শক্তিশালী দল, কিন্তু আমরাও ক্রমশ উন্নতি করছি। আমি একটি ৫০-৫০ ম্যাচ আশা করছি,” তিনি বলেন।
ভারতের শক্তি সম্পর্কে স্বীকার করে ক্যাবরেরা বলেন, “আমরা ভারতীয় দলের প্রতি অনেক সম্মান রাখি, তারা ঘরের মাঠে খেলুক বা বাইরে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের একটি মান আছে। হামজার যোগদান আমাদের অতিরিক্ত শক্তি দেবে।” হামজার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং নতুন আশা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই লড়াই উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামজা চৌধুরী: বাংলাদেশের নতুন তারকা
হামজা চৌধুরী, যিনি লিসেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন এবং বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে আছেন, বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য একটি বড় সংযোজন। গত ডিসেম্বরে তিনি ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের পক্ষে খেলার জন্য জাতীয়তা পরিবর্তন করেন। তার মা বাংলাদেশি এবং তিনি শৈশব থেকেই এই দেশের সঙ্গে সংযুক্ত। গত সোমবার সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরে এবং তার গাড়ি ভিড়ে আটকে যায়।
“এটা অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আমার হৃদয় উত্তেজনায় ভরে উঠেছে,” সাংবাদিকদের বলেন হামজা। “অনেক দিন পর এখানে আসা। এখানে থাকতে পেরে আমি উৎসাহিত। ইনশাআল্লাহ, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে জিতব।” তার এই আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ দলের মনোবল বাড়িয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ভারত বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৬তম স্থানে রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ১৮৫তম। তবে হামজার যোগদান বাংলাদেশের মিডফিল্ডকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত গত ১৫ মাসে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিততে পারেনি, তাদের শেষ জয় ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে কুয়েতের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচে সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যিনি ৪০ বছর বয়সেও দলের প্রধান আক্রমণভাগের খেলোয়াড়।
২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ও বাংলাদেশের শেষ দেখায় ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। সুনীল ছেত্রী এবং বাংলাদেশের ইয়াসিন আরাফাত গোল করেছিলেন। এবার হামজার উপস্থিতি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি
সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ শিবিরে বাংলাদেশ দল তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও শুধু একটি ম্যাচ হয়েছে, জর্ডানের ক্লাব আল ওয়েহদাতের বিরুদ্ধে। এই শিবিরে দলের কৌশল এবং শারীরিক ফিটনেসের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হামজা শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ১৮ মার্চ বাংলাদেশে যোগ দেন এবং ২০ মার্চ ভারতের উদ্দেশে দলের সঙ্গে রওনা দিয়েছেন।
ক্যাবরেরা বলেন, “আমরা হামজাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে চাই। তাকে আমাদের খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করব।” দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, “হামজা যখন ২৫ মার্চ জাতীয় সংগীত শুনবেন, তখন তার শরীরে কাঁটা দেবে।”
গ্রুপ পরিস্থিতি ও গুরুত্ব
বাংলাদেশ এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার্সের তৃতীয় রাউন্ডে গ্রুপ সি-তে রয়েছে। এই গ্রুপে ভারত, হংকং, এবং সিঙ্গাপুরও আছে। প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে দুইবার করে খেলবে। গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি ২০২৭ সালের এশিয়ান কাপে জায়গা পাবে। বাংলাদেশের জন্য প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।
সম্ভাব্য প্রভাব
হামজার যোগদান বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য একটি মাইলফলক। তার প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব এবং পেশাদারিত্ব দলের মান উন্নত করবে। তিনি এফএ কাপ এবং ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন লিসেস্টার সিটির হয়ে। তার উপস্থিতি তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করবে এবং সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশা জাগাবে।
ভারতের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে। তাদের কোচ মানোলো মার্কেজ সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়ে এনে আক্রমণ শক্তিশালী করেছেন। তবে হামজার মতো একজন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারের বিরুদ্ধে মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তার করা কঠিন হতে পারে।
২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচটি উত্তেজনাপূর্ণ হবে। হামজা চৌধুরীর অভিষেক এবং সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন এই ম্যাচকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। ক্যাবরেরার আত্মবিশ্বাস এবং হামজার প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই ম্যাচ কেবল একটি খেলা নয়, বরং দুই দেশের ফুটবলের ভবিষ্যতের একটি ইঙ্গিতও বটে।