ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের তারকা স্ট্রাইকার বালা দেবী রবিবার ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে (IWL 2025) দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করে শ্রীভূমি এফসি’কে সেতু এফসি’র বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে জয় এনে দিয়েছেন। ব্যারাকপুরের বিভূতি ভূষণ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বালা দেবীর অভিজ্ঞতা ও কৌশল প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ৩৯তম, ৪৯তম (পেনাল্টি) এবং ৬৫তম মিনিটে গোল করে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান।
ম্যাচে সেতু এফসি প্রথমে ৩৭তম মিনিটে হাদিজাহ নান্দাগোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বালা দেবীর নৈপুণ্যে শ্রীভূমি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেয়। সেতু এফসি’র হয়ে লিশাম ববিনা দেবী ৮৮তম মিনিটে একটি গোল ফিরিয়ে দলের হারের ব্যবধান কমালেও, ম্যাচের ফলাফল বদলাতে পারেননি।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলই আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করে। সেতু এফসি ৩৭তম মিনিটে হাদিজাহ নান্দাগোর গোলে এগিয়ে যায়, যা শ্রীভূমি শিবিরে উদ্বেগ ছড়ায়। কিন্তু বালা দেবী দুই মিনিট পরেই, ৩৯তম মিনিটে, দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ের মাধ্যমে সমতা ফেরান। এই গোল শ্রীভূমি খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়ায় এবং দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরও আধিপত্য বিস্তার করে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই, ৪৯তম মিনিটে, শ্রীভূমি একটি পেনাল্টি পায়। বালা দেবী স্নায়ু ধরে শট নিয়ে দলকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন। এরপর ৬৫তম মিনিটে তিনি তার তৃতীয় গোলটি করেন, যা ম্যাচের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত করে দেয়। সেতু এফসি শেষ মুহূর্তে লিশাম ববিনা দেবীর গোলে ব্যবধান কমালেও, সমতা ফেরানোর সময় তাদের হাতে ছিল না।
এই ম্যাচে বালা দেবী ছিলেন শ্রীভূমি এফসি’র জয়ের মূল কাণ্ডারি। তার গোল করার দক্ষতা, শান্ত মাথা এবং অভিজ্ঞতা তাকে ভারতীয় মহিলা ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রথম গোলটি ছিল তার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রমাণ, দ্বিতীয় গোলটি পেনাল্টি থেকে তার মানসিক দৃঢ়তার পরিচয়, এবং তৃতীয় গোলটি ছিল তার ফিনিশিংয়ের শ্রেষ্ঠত্ব।
ম্যাচ শেষে বালা বলেন, “আমরা জানতাম এই ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধু দলের জন্য আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।” তার এই পারফরম্যান্স শুধু শ্রীভূমি’র জয়ই নিশ্চিত করেনি, বরং আইডব্লিউএল-এ তার প্রভাব আরও গভীর করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের শ্রীভূমি এফসি’র জন্য এই জয় আইডব্লিউএল-এ তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। স্বাগতিক দল হিসেবে তারা সমর্থকদের সামনে এই জয় তুলে নিয়ে মনোবল বাড়িয়েছে। মৌসুমে শ্রীভূমি এফসি ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে, এবং বালা দেবীর মতো খেলোয়াড়ের উপস্থিতি তাদের শিরোপার দৌড়ে শক্তিশালী প্রতিযোগী করে তুলেছে।
অন্যদিকে, সেতু এফসি’র জন্য এই হার একটি ধাক্কা। তারা ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে গেলেও, বালা দেবীর আক্রমণের সামনে টিকতে পারেনি। শেষ মিনিটে গোল ফিরিয়ে তারা লড়াই চালিয়ে গেলেও, পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। তাদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা এবং গোল করার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা এই হারের অন্যতম কারণ।
বালা দেবী ভারতীয় মহিলা ফুটবলের একটি আইকন। তিনি শুধু দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গোলের পর গোল করেছেন, বরং দেশীয় লিগেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছেন। ২০২০ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের রেঞ্জার্স এফসি’তে খেলার মাধ্যমে প্রথম ভারতীয় মহিলা ফুটবলার হিসেবে ইউরোপীয় ক্লাবে চুক্তিবদ্ধ হন। তার এই হ্যাটট্রিক প্রমাণ করে, তিনি এখনও শীর্ষ ফর্মে রয়েছেন।
ম্যাচ শেষে বিভূতি ভূষণ স্টেডিয়ামে উপস্থিত সমর্থকরা বালা দেবী এবং শ্রীভূমি এফসি’র প্রশংসায় মেতে ওঠেন। সামাজিক মাধ্যমে একজন সমর্থক লিখেছেন, “বালা দেবী আমাদের গর্ব। তার হ্যাটট্রিকে আমরা উৎসবে মাতোয়ারা।” অনেকে মনে করছেন, এই জয় শ্রীভূমি’কে মৌসুমে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শ্রীভূমি এফসি’র বিরুদ্ধে সেতু এফসি’র ৩-২ গোলের এই ম্যাচ ছিল বালা দেবীর একক প্রতিভার প্রদর্শনী। তার হ্যাটট্রিক শুধু শ্রীভূমি’কে জয় এনে দেয়নি, বরং ভারতীয় মহিলা ফুটবলের সম্ভাবনাকেও তুলে ধরেছে। পশ্চিমবঙ্গের ফুটবলপ্রেমীরা এখন শ্রীভূমি এফসি’র কাছ থেকে আরও বড় সাফল্যের আশা করছেন। আইডব্লিউএল-এ এই জয় মৌসুমের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।