আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এ (Champions Trophy 2025) গ্রুপ বি থেকে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ বৃষ্টি এবং ভেজা আউটফিল্ডের কারণে পরিত্যক্ত হয়। এই ফলাফলের ফলে অস্ট্রেলিয়া তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে। গ্রুপ এ থেকে ইতিমধ্যে ভারত এবং নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে জায়গা করে ফেলেছে। এখন শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ম্যাচটি নির্ধারণ করবে গ্রুপ বি থেকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালিস্ট কে হবে—দক্ষিণ আফ্রিকা না আফগানিস্তান।
ম্যাচে আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ২৭৩ রানের লড়াকু স্কোর গড়ে। তবে, অস্ট্রেলিয়া জবাবে দুর্দান্ত শুরু করে। ম্যাথু শর্ট এবং ট্রাভিস হেড প্রথম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। আজমাতুল্লাহ ওমরজাই শর্টকে ২০ রানে আউট করলেও, হেড এবং অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ দ্বিতীয় উইকেটে ৬৫ রান যোগ করেন। ১২.৫ ওভারে ১০৯/১-এ থাকা অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্যের দিকে দ্রুত এগোচ্ছিল। কিন্তু তখনই বৃষ্টি খেলায় বাধা দেয়। ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি চলার পর আউটফিল্ডে জল জমে যায়। গ্রাউন্ড স্টাফরা খেলা শুরু করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এই ফলাফল অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেয়।
অস্ট্রেলিয়া ২০০৬ এবং ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিল। তবে, ২০১৩ এবং ২০১৭ সালের টুর্নামেন্টে তারা একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। এবার চোট-বিধ্বস্ত দল নিয়ে টুর্নামেন্টে প্রবেশ করলেও, বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। এর আগে তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল।
আফগানিস্তানের ইনিংস
আফগানিস্তান টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শুরুটা ভালো হয়নি। স্পেন্সার জনসন প্রথম ওভারেই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে আউট করেন। এরপর সেদিকুল্লাহ আতাল এবং ইব্রাহিম জাদরান দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন। আতাল ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যদিও অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট পড়তে থাকে। জনসন তাঁকে আউট করেন। মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নায়েব এবং রহমত শাহ কেউই উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি মাঝের ওভারে ধীর গতির ইনিংস খেলেন। তবে, শেষ দিকে রশিদ খান এবং আজমাতুল্লাহ ওমরজাই দারুণ ব্যাটিং করে দলকে ২৭৩ রানে পৌঁছে দেন। ওমরজাইয়ের দ্রুতগতির ইনিংস আফগানিস্তানকে লড়াইয়ের জায়গায় রাখে।
আফগানিস্তান কীভাবে এখনও সেমিফাইনালে উঠতে পারে?
হাশমাতুল্লাহ শাহিদির নেতৃত্বে আফগানিস্তান টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৭ রানে হেরেছিল। তবে, দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ইংল্যান্ডকে ৮ রানে হারিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে। বর্তমানে তাদের তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট রয়েছে। তবে, সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা এখন ইংল্যান্ডের হাতে। শনিবার (১ মার্চ) দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ম্যাচটি আফগানিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
আফগানিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য ইংল্যান্ডকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জিততে হবে। যদি ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে, তবে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকাকে কমপক্ষে ২০৭ রানের ব্যবধানে হারাতে হবে। আর যদি দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৩০০ রান করে, তবে ইংল্যান্ডকে সেই রান ১১.১ ওভারের মধ্যে তাড়া করে জিততে হবে। এই দুটি পরিস্থিতিই আফগানিস্তানের নেট রান রেটের ওপর নির্ভর করে তাদের সেমিফাইনালে পৌঁছে দেবে। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেট +২.১৪০, যেখানে আফগানিস্তানের -০.৯৯০। এই বড় ব্যবধানে জয় না হলে আফগানিস্তানের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা
অস্ট্রেলিয়া এই টুর্নামেন্টে চোটের সমস্যা নিয়ে এসেছিল। তাদের প্রধান পেসার প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক এবং জশ হ্যাজেলউডের মতো তারকারা অনুপস্থিত। তবুও তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগ করে নিয়ে এগিয়ে থাকে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে তারা শক্তিশালী ব্যাটিং দেখিয়েছিল। ট্রাভিস হেড এবং স্টিভ স্মিথের ব্যাটিং তাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি না হলে তারা সম্ভবত এই ম্যাচ জিতত। তবে, বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় তারা এক পয়েন্ট পেয়ে সেমিফাইনালে চলে যায়।
আফগানিস্তানের আশা
আফগানিস্তানের জন্য এই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে ওঠা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতো। তারা ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তাদের শক্তি দেখিয়েছে। ইব্রাহিম জাদরানের ১৭৭ রান এবং আজমাতুল্লাহ ওমরজাইয়ের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তাদের এই টুর্নামেন্টে আলোচনায় রেখেছে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের সুযোগ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় তাদের ভাগ্য এখন ইংল্যান্ডের ওপর নির্ভর করছে।
শনিবার করাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ম্যাচটি আফগানিস্তানের জন্য একটি অলৌকিক ঘটনার অপেক্ষায় রাখবে। ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে, তবে তারা যদি বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয়, তবে আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা বেঁচে থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকা তিন পয়েন্ট নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের নেট রান রেট আফগানিস্তানের তুলনায় অনেক ভালো। তাই আফগান সমর্থকদের জন্য এটি একটি অসম্ভবের কাছাকাছি আশা।
অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালে ওঠা তাদের শক্তি এবং অভিজ্ঞতার প্রমাণ। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের জন্য এই টুর্নামেন্টে তাদের লড়াই প্রশংসনীয়। শনিবারের ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করবে গ্রুপ বি থেকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালিস্ট কে হবে। আফগানিস্তানের জন্য এখন প্রার্থনা আর অপেক্ষার পালা।