অস্ট্রেলিয়ান (Australia) ক্রিকেটের জন্য এটি একটি নতুন নিম্নসীমা। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২ বছর পর ওয়ানডে সিরিজে হার মানতে হয়েছে তাদের। পার্থের তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের কাছে আট উইকেটে পরাজয়ের পর অস্ট্রেলিয়া এমন একটি রেকর্ডও তৈরি করেছে, যা মোটেই কাঙ্খিত নয়—প্রথমবারের মতো কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একটি অর্ধশতকও করতে পারেনি তাদের কোনো ব্যাটার। তিন ম্যাচের এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা একবারও অর্ধশতক ছুঁতে না পারায় দলটি ব্যাটিং বিভাগে চরম অসন্তোষের মুখে পড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিভাগের বিপর্যয়ের মধ্যে পাকিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বে দলটি দারুণ সূচনা করেছে। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের নিয়ে প্রায় খেলা করেই ছেড়েছে এবং অবশেষে আট উইকেটে জয় তুলে নিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে। ২০২৩ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়ার এমন ব্যর্থতা দলটির অভিজ্ঞতা ও তারকার অভাবের ইঙ্গিত দেয়।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারলেও পাকিস্তান পরের দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয়। সিরিজের শীর্ষ তিন রান সংগ্রাহকের তালিকায় ছিল পাকিস্তানের তিনজন ব্যাটার—সাঈম আয়ুব (১২৫ রান তিন ম্যাচে, সর্বোচ্চ ৮২), আব্দুল্লাহ শফিক (১১৩ রান তিন ম্যাচে, সর্বোচ্চ ৬৪*) এবং বাবর আজম (৮০ রান তিন ইনিংসে, সর্বোচ্চ ৩৭)। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে স্টিভ স্মিথ ৭৯ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেও দলের ব্যাটিং শক্তি হিসেবে যথেষ্ট ছিল না।
ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ পাকিস্তানের পেসারদের সামনে নড়বড়ে হয়ে পড়ে। শাহীন শাহ আফ্রিদি (৩/৩২), নাসিম শাহ (৩/৫৪) এবং হারিস রউফ (২/২৪)-এর তোপে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। বড় কোনো পার্টনারশিপ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়ে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৩১.৫ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে শন অ্যাবোট (৩০) এবং ম্যাথু শর্ট (২২) ২০ রানের বেশি করতে পেরেছেন।
পাকিস্তান তাদের রান তাড়ায় আয়ুব (৫২ বলে ৪২) এবং শফিক (৫৩ বলে ৩৭)-এর একটি ৮৪ রানের উদ্বোধনী পার্টনারশিপ গড়ে। এরপর বাবর আজম (৩০ বলে ২৮*) এবং রিজওয়ান (২৭ বলে ৩০*) প্রায় ২৩ ওভার হাতে রেখেই ম্যাচ শেষ করেন। হারিস রউফ তৃতীয় ম্যাচে দারুণ পারফরমেন্সের জন্য ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ এবং সিরিজ জুড়ে ১০ উইকেট নেওয়ার কারণে ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ নির্বাচিত হন।
কেন হারল অস্ট্রেলিয়া?
অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের পেছনে তাদের বড় খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি অন্যতম কারণ ছিল। মর্নাস লাবুশান, স্টিভ স্মিথ এবং প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্কের মতো পেস বোলাররা টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য দল থেকে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মিচেল মার্শ ও ট্র্যাভিস হেড ব্যক্তিগত কারণে খেলা থেকে বিরত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলটি এতটা অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় পাকিস্তানের বোলিংয়ের সামনে টিকতে পারেনি।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে স্টিভ স্মিথ দুই ম্যাচে ৭৯ রান করেন এবং সেরা ইনিংস ছিল ৪৪। জশ ইনগ্লিস তিন ম্যাচে ৭৪ রান করেন এবং ৪৯ রান সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। ব্যাটিংয়ে সেরা ফর্মে থাকা ব্যাটারদের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিভাগ চরম চাপের মধ্যে পড়ে।
পরিসংখ্যান ও অতীত রেকর্ড
অস্ট্রেলিয়ার জন্য এই সিরিজ পরিসংখ্যানগত দিক থেকে হতাশাজনক ছিল। তাদের ব্যাটিং পারফরমেন্স খুবই নিম্নমানের ছিল এবং প্রথমবারের মতো কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অর্ধশতকহীন একটি রেকর্ড তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় পাকিস্তানের ধারালো পেস আক্রমণ এবং স্কোরিংয়ের ধারাবাহিকতা।