কলকাতার (Kolkata) অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব (Football Club) মহামেডান এসসি (Mohammedan SC) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) প্রবেশ করেছে। একসময় কলকাতার ফুটবল দৃশ্যপটে বড় প্রভাব বিস্তারকারী ক্লাবটি এই বছর প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগে অংশ নিচ্ছে। মহামেডান এসসি ২০২৩-২৪ সিজনে আই-লিগ (I League) জয়ের মাধ্যমে আইএসএলে সরাসরি প্রবেশের সুযোগ পায়। যার মাধ্যামে তারা এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে এই মরসুমে।
শেষ দিনে সঞ্জয় সেনের ছাত্রদের ভরসাতেই স্বপ্ন দেখছে বঙ্গবাসী, পাশে ক্রীড়ামন্ত্রী
এতদিন পর্যন্ত মহামেডান এসসি কলকাতার ফুটবলের তৃতীয় বড় দল হিসেবে পরিচিত। কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের সাথে মহামেডান এসসি পুরোনো দিনের গৌরবময় দল হলেও তারা আইএসএলে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে। এই মরসুমে দলটি তাদের ঘরের মাঠ হিসেবে কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে বেছে নিয়েছে, যা নতুন স্টেডিয়ামের অভিজ্ঞতা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালে ক্লাব ফুটবলে সেরা পাঁচ কোচের তালিকায় ইস্ট-মোহনের দুই প্রাক্তন
তবে, আইএসএলে তাদের যাত্রা খুব মসৃণ ছিল না। প্রথম ম্যাচে তারা হেরে গেলেও পরবর্তী ম্যাচে তাদের কিছু ভালো পারফরম্যান্স লক্ষ্য করা যায়। সাদা-কালো ব্রিগেড নিজেদের প্রথম অ্য়াওয়ে ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসিকে পরাজিত করেছিল এবং পরবর্তী ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে একটি ড্র করেছিল। তবে, তারপর থেকে তাদের জন্য পরিণতিটি ছিল একেবারে বিপরীত। তারা একের পর এক হারের সম্মুখীন হয়েছিল, আর ফলস্বরূপ তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই মরসুমে তাদের কোচ আন্দ্রে চেরনিশভের (Andrey Chrenyshov) নেতৃত্বে কিছু ভালো মুহূর্ত হলেও দলটি প্রতিযোগিতামূলক মানের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। চেরনিশভের অধীনে দলটি ১৩টি আইএসএল ম্যাচে খেলেছে, যেখানে তাদের ১টি জয়, ৩টি ড্র এবং ৯টি পরাজয় হয়েছে। এর ফলস্বরূপ তাদের পয়েন্ট হয়েছে মোট ৬, এবং তাদের গড় পয়েন্ট প্রতি ম্যাচে মাত্র ০.৪৬। বর্তমানে লিগ টেবিলের লাস্ট বয় তারা। এই পরিসংখ্যান মহামেডান এসসির জন্য একেবারে হতাশাজনক।
বাংলায় হোক ডার্বি ম্যাচ, মুখ খুললেন সৃঞ্জয় বসু
মহামেডান এসসি তাদের পারফরম্যান্সে একটিই বড় সমস্যা দেখেছে—দলের আক্রমণ এবং রক্ষণে ভারসাম্যের অভাব। তাদের স্কোরিং ফিগার মাত্র ৫ গোল এবং তারা ২২টি গোল হজম করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য আইএসএলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে, দলের বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে অ্য়ালেক্সিস গোমেজের পারফরম্যান্স কিছুটা ভালো হলেও, স্থানীয় খেলোয়াড়রা এখনও নিজেদের সেরাটা দেখাতে পারছেন না। যদিও লালরেমসাঙ্গা তাঁদের অন্যতম সেরা ফুটবলার, তবুও পুরো দলের সম্মিলিত পারফরম্যান্স চাহিদামাফিক ছিল না।
মহামেডান এসসির কোচ চেরনিশভ এক সময় আই-লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ৪-৩-৩ আক্রমণাত্মক ফর্মেশন দিয়ে দলটিকে শিরোপা জেতাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু আইএসএলে তাঁর দলকে পরিণত করতে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এবার তিনি ৪-৪-২ বা ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করছেন, যাতে দলকে রক্ষণাত্মকভাবে খেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর ব্যবহৃত রক্ষণাত্মক কৌশল ইন্ডিয়ান সুপার লিগের চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সত্যিই সাড়া দিচ্ছে না।
আপাতত স্থগিত কলকাতা ডার্বি, মতামত দিলেন দেবাশিস দত্ত
দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের কথা বলতে গেলে, মহামেডান এসসি এখনও তাদের খেলার ধরন উন্নত করার চেষ্টা করছে, তবে তাদের রক্ষণাত্মক ফুটবল এবং আক্রমণাত্মক ফর্মেশনগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবটির কৌশলগত পরিবর্তন, ট্রান্সফার উইন্ডো, এবং নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে আরো কাজ করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট।
মহামেডান এসসি, যেহেতু কলকাতার ফুটবল দৃশ্যে তিন নম্বর বড় দল, সেহেতু তাদের শীর্ষ মানের ফুটবল খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি এই মৌসুমে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে চায়, তবে তাদের কোচিং স্টাফ এবং ক্লাব প্রশাসনকে সঠিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে, এবং অবশ্যই জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে শক্তিশালী দল গঠন করতে হবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে পারফরম্যান্সের উন্নতি এবং উপযুক্ত সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে আইএসএলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
মুম্বইয়ের বিপক্ষে গোল করে নিজের লক্ষ্য স্থির করলেন নিকসন
মহামেডান এসসির বর্তমান পারফরম্যান্স চ্যালেঞ্জিং হলেও তাদের ইতিহাস এবং ফুটবলে অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের ক্লাবের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের উপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতে তারা আরো বড় সাফল্য পেতে পারে, যদি তারা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলে।