Asia Cup 2025: আবুধাবিতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অভিযান শুরু শ্রীলঙ্কার

আবুধাবি: এশিয়া কাপ ২০২৫-এর (Asia Cup 2025) গ্রুপ বি-এর উদ্বোধনী ম্যাচে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শক্তিশালী শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে…

Asia Cup 2025 SL Beat BAN by 6 Wickets in Opener

আবুধাবি: এশিয়া কাপ ২০২৫-এর (Asia Cup 2025) গ্রুপ বি-এর উদ্বোধনী ম্যাচে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শক্তিশালী শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৯ রান করতে পারে। তারপর শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৪.৪ ওভারে ৪ উইকেট গুমিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে এবং ৩২ বল বাকি রেখে জয় নিশ্চিত করে। পাথুম নিসাঙ্কার দ্রুত ৩৪ বলে অর্ধশতরান (৫০) এবং কামিল মিশরার মূল্যবান ৩২ বলে ৪৬ রান এই জয়ের সূত্রপাত করে। এই জয়ের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা গ্রুপ বি-তে শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসে, যখন বাংলাদেশের নেট রান রেটে বড় ধাক্কা লাগে এবং তারা গ্রুপে তৃতীয় স্থানে নেমে আসে।

Also Read | India vs Pakistan : ‘জিততেই হবে..!’, ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে কড়া বার্তা কুলদীপের কোচের

   

ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে। টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেন চারিথ অসালাঙ্কা, যা তাদের জন্য সোনার সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের উদ্বোধকরা তানজিদ হাসান এবং পারভেজ হোসেন ইমন দুজনেই শূন্যে আউট হয়ে যান। প্রথম ওভারে নুবান থুসারা তানজিদকে ধরিয়ে দেন, যিনি একটিও রান করতে পারেননি। পরের ওভারে দুসমন্ত চামেরা পারভেজকে মেইডেন ওভারে ধরিয়ে বাংলাদেশকে ০-২ করে দেন। এরপর টোয়িহিদ হৃদয় রান আউট হয়ে ৯-৩ করে দলকে আরও বিপর্যস্ত করেন। পাওয়ারপ্লের শেষে বাংলাদেশ ৩০-৩-এ ছিল, যা তাদের জন্য বড় ধাক্কা। লিটন দাস এবং মাহেদী হাসানও দ্রুত আউট হয়ে ৯.৫ ওভারে দলকে ৫৩-৫-এ নিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে জাকের আলী এবং শামিম হোসেনের অপরাধমুক্ত ৮৬ রানের অংশীদারিত্বই বাংলাদেশকে সম্মানজনক স্কোর পর্যন্ত নিয়ে যায়। জাকের ৩০ রান এবং শামিমের ৪০ রান এই পার্টনারশিপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Also Read | Asia Cup Final : এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছল ভারত, প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র

শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ ছিল অসাধারণ। তারকা স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা হামস্ট্রিং আঘাত থেকে ফিরে এসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন (২/২৫)। পেসাররা থুসারা এবং চামেরা প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়ে শান্ত রাখেন বাংলাদেশকে। দুজনেরই ৪-৪ ওভারে ১৭-১৭ রান দিয়ে একটি করে মেইডেন ওভার করা অসাধারণ। এই শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিংয়ের কারণেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভেঙে পড়ে এবং তারা লক্ষ্যমাত্র ১৪০ রান সেট করতে পারে। বাংলাদেশের বোলাররা, বিশেষ করে মুস্তাফিজুর রহমান এবং তানজিম হাসান সাকিব, চেষ্টা করলেও শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের থামাতে পারেনি।

চেইজিংয়ে শ্রীলঙ্কার শুরু ছিল চমৎকার। উদ্বোধক পাথুম নিসাঙ্কা এবং কামিল মিশরা দুজনেই আক্রমণাত্মকভাবে খেলে পাওয়ারপ্লে শেষে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যান। নিসাঙ্কা তার ৩৪ বলের ইনিংসে ৫টি বাউন্ডারি এবং ৩টি সিক্স করে অর্ধশতক পূর্ণ করেন, যা দলের জন্য মোমেন্টাম তৈরি করে। মিশরা ৩২ বলে ৪টি বাউন্ডারি এবং ২টি সিক্স করে ৪৬ রান যোগ করেন। কুসাল মেন্ডিসকে মুস্তাফিজুর ধরিয়ে দিলেও (০ রান) শ্রীলঙ্কা কোনো সমস্যায় পড়েনি। পরে ক্যাপ্টেন অসালাঙ্কা এবং জনিথ লিয়ানাজের অবদানে দল লক্ষ্য অতিক্রম করে। শেষে ১৪.৪ ওভারে ১৪০-৪ করে শ্রীলঙ্কা জয় নিশ্চিত করে। এই সহজ চেইজে তারা নেট রান রেটও উন্নত করে এবং গ্রুপ বি-তে শীর্ষে উঠে আসে।

Advertisements

Also Read | Chennaiyin FC coach: চেন্নাইয়িন কোচের হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে মিরান্ডা

এই ম্যাচটি দুই দলের মধ্যে চিরকালীন ভাইভালের অংশ। গত ১০ বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৬টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৮টি এবং বাংলাদেশ ৮টি জিতেছে, যা তাদের সমান শক্তির প্রমাণ। সম্প্রতি জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ গোলে জয়ী হয়েছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। কিন্তু এশিয়া কাপে বাংলাদেশের উদ্বোধনী ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারানোর পর এই পরাজয় তাদের জন্য বড় ধাক্কা। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন লিটন দাস বলেন, “আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্টে উন্নতি দরকার। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা আমাদের প্ল্যানকে বিফল করে দিয়েছে।” অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেন অসালাঙ্কা বলেন, “আমাদের বোলাররা দারুণ কাজ করেছে। এই জয় আমাদের ক্যাম্পেইনকে শক্তিশালী করে।”

এশিয়া কাপ ২০২৫-এর এই ম্যাচটি টুর্নামেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গ্রুপ বি-কে ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ বলা হচ্ছে। এখানে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং হংকং রয়েছে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের পাঁচটি ম্যাচই একপেশে হয়েছে, কোনোটাই টাইট ফিনিশ হয়নি। শ্রীলঙ্কার জন্য পরবর্তী ম্যাচ ১৫ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে, যা তাদের জন্য সহজ হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচ ডু-অর-ডাই হয়ে উঠেছে। যদি তারা জিততে না পারে, তাহলে সেমিফাইনালের পথ কঠিন হয়ে যাবে।

শ্রীলঙ্কার এই জয়ে তাদের অভিজ্ঞতা এবং সাম্প্রতিক ফর্মের প্রতিফলন ঘটেছে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ফিরে আসা দলের জন্য বুস্টারের মতো। বাংলাদেশের জন্য এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে স্থিতিশীলতা এবং বোলিংয়ে বিস্তার। টুর্নামেন্টের পরবর্তী ম্যাচে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ দুবাইয়ে রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে, যা এশিয়া কাপের হাইলাইটস হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীরা উত্তেজনায় অপেক্ষমাণ। শ্রীলঙ্কার এই জয় তাদের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।