আবুধাবি: এশিয়া কাপ ২০২৫-এর (Asia Cup 2025) গ্রুপ বি-এর ১১তম ম্যাচে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে পরাজিত করে সুপার ফোরে প্রবেশ করেছে শ্রীলঙ্কা। এই জয়ের ফলে আফগানিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে এবং বাংলাদেশও নেট রান রেটের সুবিধায় সুপার ফোরে যোগ দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ এখন গ্রুপ এ থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে সুপার ফোর স্টেজে যোগ দেবে, যা শনিবার থেকে শুরু হবে। ম্যাচে আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান করে, যার মধ্যে মোহাম্মদ নাবির অসাধারণ ২২ বলে ৬০ রান (৫টি সিক্সসহ) ছিল হাইলাইট। শ্রীলঙ্কা ১৮.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭১ রান করে লক্ষ্য অর্জন করে, যাতে কুসাল মেন্ডিসের অপরাজিত ৭৪ রান (৫২ বলে) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ম্যাচের শুরুতে আফগানিস্তানের ব্যাটিং চ্যালেঞ্জিং ছিল। শ্রীলঙ্কার নুবান থুসারা শুরুতেই টপ অর্ডার ভেঙে দেন, ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে ৭৯/৬-এ নিয়ে যান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং দাসুন শানাকার মিডল ওভারে টাইট বোলিং করে চাপ বজায় রাখেন। ১৯ ওভারে ১৩৭/৭-এ থাকা আফগানিস্তানের জন্য নাবির শেষ ওভারে দুনিথ ওয়েলালাগেকে ৫টি সিক্স মারা এক অবিশ্বাস্য মুহূর্ত ছিল। নাবির ২২ বলে ৬০ রান করে আফগানিস্তানকে সম্মানজনক স্কোর পর্যন্ত নিয়ে যান, যা টুর্নামেন্টের দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড ভাঙে। আফগানিস্তানের অন্যান্য অবদানকারীদের মধ্যে গুলবাদিন নাইব ২৫ এবং আজমতুল্লাহ ওমরজাই ২০ রান করেন। শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ে থুসারা ৩/৩০, হাসারাঙ্গা ১/২৫ এবং শানাকা ২/২০ ছিলেন সেরা।

শ্রীলঙ্কার চেইজিংয়ে লক্ষ্য ১৭০ ছিল, কিন্তু সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য মাত্র ১০১ রান দরকার ছিল, যা তারা ১৩তম ওভারে অর্জন করে। পাথুম নিসাঙ্কা ৩৫ এবং কুসাল পেরেরা ২৮ রান করে ভিত্তি গড়েন, কিন্তু নুর আহমেদের স্পিনে মাঝখানে চাপ সৃষ্টি হয়। কুসাল মেন্ডিস ৫২ বলে ৭৪ রান (৬টি ফোর এবং ৩টি সিক্সসহ) করে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। কামিল মিশরা ২২ এবং চারিথ অসালাঙ্কা ১৫ রান যোগ করেন। আফগানিস্তানের বোলিংয়ে আজমতুল্লাহ ওমরজাই ১/১০ এবং রশিদ খান ১/২৫ ছিলেন সেরা, কিন্তু নাবির শেষ ওভারের ম্যাজিক সত্ত্বেও তারা লক্ষ্য রক্ষা করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা ১৮.৪ ওভারে ১৭১/৪ করে ৬ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে।
এই জয়ের ফলে শ্রীলঙ্কা গ্রুপ বি-তে শীর্ষে উঠে সুপার ফোরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ, যারা আগের ম্যাচে হংকংকে হারিয়েছে, নেট রান রেটের সুবিধায় দ্বিতীয় স্থান পেয়ে সুপার ফোরে যোগ দেয়। আফগানিস্তানের জন্য এটি মাস্ট-উইন ম্যাচ ছিল, কিন্তু ব্যাটিংয়ের মাঝামাঝি ধস এবং চেইজিংয়ের ব্যর্থতায় তারা বাদ পড়ে। আফগান ক্যাপ্টেন রশিদ খান বলেন, “আমরা ভালো লড়াই করেছি, কিন্তু শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ আমাদের থামিয়েছে। নাবির অবদান অসাধারণ ছিল।” শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেন চারিথ অসালাঙ্কা বলেন, “কুসালের ইনিংস আমাদের জিতিয়েছে। এখন সুপার ফোরে ফোকাস করব।”
টুর্নামেন্টের প্রেক্ষাপটে এই ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গ্রুপ বি-তে শ্রীলঙ্কা অপরাজিত ছিল এবং আফগানিস্তানের জন্য এটি সেমিফাইনালের পথ খোলার সুযোগ ছিল। নাবির শেষ ওভারে ৫টি সিক্স মারা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যা আফগানিস্তানকে ১৬৯-এ পৌঁছে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার চেইজে মেন্ডিসের স্থিতিশীলতা এবং স্পিনের বিরুদ্ধে তাঁর দক্ষতা দলকে জয় এনে দেয়। এই ফলাফলের পর সুপার ফোরে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ অংশ নেবে। সুপার ফোর শনিবার থেকে শুরু হবে, যেখানে গ্রুপ স্টেজের ফর্ম্যাট অনুসরণ করা হবে এবং শীর্ষ দুটি দল ফাইনালে যাবে।
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর এই ম্যাচটি দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ে নাবির ম্যাজিক সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার বোলিং এবং চেইজিং দলের দক্ষতা জয় নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের জন্য এটি ভালো খবর, কারণ তারা হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়ে নেট রান রেট উন্নত করেছে। সুপার ফোরে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ আবার উত্তেজনা বাড়াবে। আফগানিস্তানের ক্যাম্পেইন শেষ হলেও নাবির পারফরম্যান্স তাদের স্মৃতিতে থাকবে।