ঈদের দিনে ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য একটি রোমাঞ্চকর উপহার নিয়ে এল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। আইপিএল ২০২৫-এর ১২তম ম্যাচে তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR) ৮ উইকেটে পরাজিত করে মরশুমের প্রথম জয় তুলে নিল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সোমবার (৩১ মার্চ) অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে মুম্বইয়ের তরুণ পেসার অশ্বনী কুমার তার অভিষেক ম্যাচে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে সকলের নজর কাড়েন। অন্যদিকে, রায়ান রিকেলটনের অপরাজিত অর্ধশতকের সৌজন্যে মুম্বই মাত্র ১২.৫ ওভারে ১১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু কেকেআরের জন্য এই হার ছিল ঈদের দিনে একটি ‘খারাপ উপহার’, যার ফলে তাদের সমর্থকদের মনে হতাশার ছায়া পড়েছে।
অশ্বনী কুমারের ঝড়ো অভিষেক
ম্যাচের নায়ক ছিলেন ২৩ বছর বয়সী পাঞ্জাবের বাঁহাতি পেসার অশ্বনী কুমার। আইপিএলে তার প্রথম ম্যাচেই তিনি কেকেআরের ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দেন। মাত্র ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি, যা তাকে আইপিএল ইতিহাসে অভিষেকে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার প্রথম বলেই আউট হন কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে (১১)। এরপর রিঙ্কু সিং (১৭), মনীশ পান্ডে (১৯) এবং আন্দ্রে রাসেলের (৫) মতো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি কেকেআরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। ম্যাচ শেষে অশ্বনী বলেন, “আমি খুব ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে চাপ ছিল, কিন্তু দলের পরিবেশ আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে। আমি শুধু একটা কলা খেয়েছিলাম, ক্ষুধা অনুভব করিনি। ক্যাপ্টেন হার্দিক ভাই আমাকে উইকেটে বল করতে বলেছিলেন। গ্রামের সবাই আমাকে দেখছে, আমি খুব খুশি।”
কেকেআরের ব্যাটিং ধস
মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণ হয়ে যায় প্রথম কয়েক ওভারেই। ট্রেন্ট বোল্ট প্রথম ওভারে সুনীল নারিনকে (০) আউট করেন। এরপর দ্বিতীয় ওভারে দীপক চাহার কুইন্টন ডি কককে (১) ফিরিয়ে দেন। পাওয়ারপ্লে শেষে কেকেআরের স্কোর ছিল ৪১/৪। অশ্বনী কুমারের প্রথম বলে রাহানে আউট হওয়ার পর অঙ্গকৃষ রঘুবংশী (২৬) এবং রামনদীপ সিং (২২) কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অশ্বনী, দীপক চাহার (২/১৯) এবং মিচেল স্যান্টনারের (১/১৭) আক্রমণের সামনে তারা টিকতে পারেনি। মাত্র ১৬.২ ওভারে ১১৬ রানে গুটিয়ে যায় কেকেআরের ইনিংস, যা এই মরশুমের সর্বনিম্ন স্কোর।
রিকেলটনের অপরাজিত অর্ধশতক
১১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মুম্বইয়ের শুরুটা মন্দ হয়নি। রোহিত শর্মা এবং রায়ান রিকেলটন ওপেনিংয়ে নামেন। রোহিত ১৩ রান করে আন্দ্রে রাসেলের বলে আউট হলেও, রিকেলটন দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। মাত্র ৩৩ বলে ৫০ রান পূর্ণ করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার এবং ৩টি ছক্কা। উইল জ্যাকস (১৮*) এবং সূর্যকুমার যাদব (১২*) অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। ১২.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মুম্বই ১১৯ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয়। কেকেআরের বোলারদের মধ্যে স্পেন্সার জনসন, হর্ষিত রানা এবং বরুণ চক্রবর্তী কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি।
মুম্বইয়ের প্রথম জয়ের তাৎপর্য
আইপিএল ২০২৫-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম দুটি ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংস এবং গুজরাট টাইটান্সের কাছে হেরে তারা পয়েন্ট টেবিলে শূন্যতে ছিল। কিন্তু কেকেআরের বিরুদ্ধে এই জয় তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে দলটি এখন নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। ম্যাচের পর হার্দিক বলেন, “আমরা প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ উইকেট ভালো ছিল। অশ্বনী এবং আমাদের বোলাররা দারুণ কাজ করেছে। এই জয় আমাদের ছন্দে ফিরিয়ে আনবে।”
কেকেআরের হতাশাজনক পারফরম্যান্স
অন্যদিকে, কেকেআরের জন্য এই ম্যাচ ছিল একটি দুঃস্বপ্ন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা এই মরশুমে একটি জয় এবং একটি হার নিয়ে শুরু করেছিল। কিন্তু মুম্বইয়ের কাছে এই পরাজয় তাদের সমর্থকদের মনে প্রশ্ন তুলেছে। অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং বোলিংয়ের অক্ষমতা দলের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। রিঙ্কু সিং, আন্দ্রে রাসেলের মতো তারকারা প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ম্যাচের পর রাহানে বলেন, “আমরা ভালো শুরু করতে পারিনি। মুম্বইয়ের বোলাররা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। আমাদের ফিরে এসে পরিকল্পনা করতে হবে।”
সম্পূর্ণ তথ্য
কেকেআরের ইনিংস: ১১৬ (১৬.২ ওভার), অঙ্গকৃষ রঘুবংশী ২৬, রামনদীপ সিং ২২, অশ্বনী কুমার ৪/২৪, দীপক চাহার ২/১৯।
মুম্বইয়ের ইনিংস: ১১৯/২ (১২.৫ ওভার), রায়ান রিকেলটন ৫০*, উইল জ্যাকস ১৮*, রোহিত শর্মা ১৩।
ম্যাচের সেরা: অশ্বনী কুমার।
আইপিএলের পথে এগিয়ে
এই জয়ের মাধ্যমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান শক্ত করেছে। অশ্বনী কুমারের মতো তরু ণ প্রতিভার উত্থান ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য সুখবর। অন্যদিকে, কেকেআরকে তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ফিরে আসতে হবে। আইপিএল ২০২৫ এখনো অনেক দূরের পথ পাড়ি দেবে, এবং এই জয়-পরাজয়ের গল্প ক্রিকেট প্রেমীদের মনে উত্তেজনা জাগিয়ে রাখবে।