একেই হয়ত বলে প্রকৃত গুরু দক্ষিণা। একেবারে নিঃশব্দে নিজের ঋণ স্বীকার। গুরুর ঋণ শোধ হয় না কোনও দিন কিন্তু একটা প্রতীকী প্রতিদান, অবশ্যই শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হয়। যেটা করে দেখিয়েছিলেন আশিস নেহরা (Ashish Nehra)। ক্রিকেটে আশিসের হাতে খড়ি হয়েছিল কোচ তারক সিনহার কাছে। দিল্লির সনেট ক্রিকেট ক্লাবের বাচ্চাদের খেলা শেখাতেন তিনি।
২০২১ সালে প্রয়াত এই কোচের কাছে হাতে খড়ি নিয়ে জাতীয় দলে খেলেছেন মনোজ প্রভাকর, আশিস নেহরা, শিখর ধাওয়ান, আকাশ চোপড়া। বর্তমান স্টার ক্রিকেটার ঋষভ পন্থকে গড়ে তুলেছিলেন তারক সিনহাই। যার মৃত্যুর পর ঋষভ বলেছিলেন, “তারক স্যার ছিলেন আমার পিতার মতো।”
সেই তারক সিনহাকে আশিস নেহরা কিভাবে গুরুদক্ষিণা দিয়েছিলেন হঠাৎ এখন সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে চর্চায়। কারণ একটা পডকাস্ট।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পদমজিৎ শেরাওয়াত এক পডকাস্ট ইন্টারভিউতে বলেছেন,” আশিস তখন ইন্ডিয়া টিমে খেলছে। একদিন চলে এলো সনেট ক্লাবে নেট প্র্যাকটিসের জন্য। মাঠে পৌঁছে দেখে তারক স্যার নেই কিন্তু বাচ্চারা সব পৌঁছে গেছে। স্যার এলেন একটু দেরিতে। আশিস তাঁকে মজা করে খোঁচা দিয়ে বলেছিল, স্যার নিজেই যদি দেরি করে তাহলে বাচ্চাগুলোর সময় জ্ঞান হবে কী করে? উত্তরে সেদিন তারক স্যার বলেছিলেন, “ভীষন সংকটে পড়েছি। তোমার পক্ষে এই সমস্যা বোঝা সম্ভব নয় কারণ তুমি এখন টিম ইন্ডিয়ার প্লেয়ার, থাকো বাংলো বাড়িতে।” আশিসের প্রশ্ন, “হয়েছেটা কী?”
তারক স্যার বলেন, “যে বাড়িতে এতদিন ভাড়া ছিলাম সেটা এবার ছাড়তেই হবে। মালিক তিনদিনের নোটিশও দিয়ে দিয়েছে। তাই সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম নতুন ভাড়াঘর খুজতে।” আশিস সেদিন কিছুই বলেন নি। এরপর দু’দিন ধরে তুমুল বৃষ্টির জন্য নেট প্র্যাকটিস ছিল বন্ধ। তিনদিনের মাথায় ফের প্র্যাকটিস শুরু হবার পর, সেদিন আশিস এলো দেরিতে। তারক স্যার এবার পাল্টা খোঁচা দিয়ে তাকে বললেন, “কী হলো টিম ইন্ডিয়া প্লেয়ারের? আমাকে জ্ঞান দিয়ে নিজেই এখন দেরি?”
উত্তরে আশিস বলেছিল, “যার গুরুর একটা নিজস্ব ঘর খুঁজে পেতে সারা জীবন কেটে গেল, তার শিষ্যের তো তিনদিন অন্তত লাগবেই।” একথা বলেই পকেট থেকে একটা চাবি বার করে তারক স্যারের হাতে দিয়ে বললো, “এই নিন আপনার ঘর। ওরা ঘরটা একটু ঝারপোছ করছে, দশ দিনের মধ্যে হাতে দিয়ে দেবে। এবার সোজা ওখানে গিয়ে উঠবেন।”
অথচ আশিস কিন্তু জীবনে কোনও দিন কারও কাছে স্যারকে বাড়ি কিনে উপহার দেবার কথা ঘুণাক্ষরেও বললেন নি। এটাই আশিসের মহত্ব।