সুপার কাপে হতাশাজনক সাড়া, পরিবর্তন আসছে ভারতীয় ফুটবলের ক্যালেন্ডারে!

ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) মরসুম শেষের অন্যতম প্রতিযোগিতা হিসেবে শুরু হয়েছিল সুপার কাপ (Super Cup)। ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপ (Federation Cup) বন্ধ করে এই নতুন…

Indian Football FC Goa Clinches Super Cup 2025 Title with 3-0 Win Over Jamshedpur FC

ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) মরসুম শেষের অন্যতম প্রতিযোগিতা হিসেবে শুরু হয়েছিল সুপার কাপ (Super Cup)। ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপ (Federation Cup) বন্ধ করে এই নতুন টুর্নামেন্ট চালু করেছিল সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থা (AIFF)। কিন্তু সাত বছরের মধ্যেই সুপার কাপ নিয়ে ফুটবল মহলে একপ্রকার হতাশা তৈরি হয়েছে। এবছর এফসি গোয়ার শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে টুর্নামেন্ট, কিন্তু স্টেডিয়ামে দর্শকের উপস্থিতি, ক্লাবগুলোর উদাসীনতা এবং জাতীয় দলের সূচির সঙ্গে প্রতিযোগিতার সংঘর্ষ সব মিলিয়ে আবারও প্রশ্নের মুখে এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ।

গৌতম গম্ভীরের পর খুনের ‘হুমকির’ মুখে তারকা ভারতীয় ক্রিকেটার

   

এবারের সুপার কাপে ফাইনালে জামশেদপুর এফসিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এফসি গোয়া। কোচ মানোলো মার্কুয়েজের নেতৃত্বে দল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। কিন্তু মাঠে বা মিডিয়ায় সেই জাঁকজমক দেখা যায়নি। এমনকি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এই প্রতিযোগিতাকে কার্যত গুরুত্বই দেয়নি। তারা মাত্র একজন বিদেশিকে রেখে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছিল। তবুও তারা কেরালা ব্লাস্টার্সের মতো আইএসএলের পূর্ণ শক্তির দলকে হারিয়ে দেয়। শেষমেশ সেমিফাইনালে হেরে ছিটকে গেলেও, বাগান সমর্থকদের মধ্যেও বিশেষ উদ্দীপনা দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর চার্চিল ব্রাদার্স সুপার কাপ থেকে নাম তুলে নেয়। তারা ফেডারেশনের প্রতিযোগিতা ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরও জাতীয় দলের শিবির এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচের কারণে অনেক বড় দল তাদের সেরা খেলোয়াড়দের ছাড়াই খেলতে বাধ্য হয়েছিল। এ বছরও সেই একই সমস্যা দেখা দিয়েছে, ফলে সুপার কাপে পূর্ণ শক্তির দল দেখা যায়নি।

সুপার কাপ জিতেই বড় সিদ্ধান্তের পথে মানোলো মার্কুয়েজ

মূল সমস্যা সুপার কাপে আর্থিক প্রণোদনার অভাব। যেখানে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দল কোটি টাকার পুরস্কার পায়, সেখানে সুপার কাপ জয় করে হাতে আসে মাত্র ২৫ লাখ টাকা—যা অনেক খেলোয়াড়ের এক মাসের বেতনও নয়। তাই দলগুলোর আগ্রহ না থাকাটা স্বাভাবিক।

এই পরিস্থিতিতে ফেডারেশন এখন সুপার কাপের সময়সূচী বদলাতে চাইছে বলেই জানা গিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মরসুমের শুরুতেই আয়োজিত হবে এই টুর্নামেন্ট, সম্ভবত অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। আর বছরের শেষের দিকে আয়োজন করা হবে ডুরান্ড কাপের, যা এতদিন সিজন শুরুর টুর্নামেন্ট হিসেবে ছিল। কারণ, শেষ কয়েক বছর ধরে ডুরান্ড কাপকে প্রাক-আইএসএল প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করত বড় ক্লাবগুলি, ফলে তাদের সেরা স্কোয়াড দেখা যেত এই টুর্নামেন্টে।

ইংল্যান্ড সফরে নেতৃত্ব বদলের সিদ্ধান্ত! নতুন ভূমিকায় এই তরুণ ক্রিকেটার

তবে শুধু সময় পরিবর্তন নয়, ফেডারেশন এবার ঐতিহ্যবাহী ফেডারেশন কাপ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও করছে বলে বেশ কিছু মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট ছিল একসময় ভারতের প্রিমিয়ার কাপ প্রতিযোগিত। কিন্তু ২০১৮ সালে এটি বাতিল করে চালু হয় সুপার কাপ। এখন আবার সেই পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাইছে ফেডারেশন, যাতে ক্লাবগুলোর আগ্রহ বাড়ে ও দর্শক টানতে সুবিধা হয়।

ঘরের মাঠে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে সুনীল ছেত্রীদের উত্তরসূরিরা

এফসি গোয়ার কোচ মানোলো মার্কুয়েজ টুর্নামেন্ট শেষে বলেন, “আমি চাই, অন্তত একটি প্রতিযোগিতা শুধু ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে হোক। স্পেনে একসময় কাপ টুর্নামেন্টে শুধু দেশীয় খেলোয়াড়রাই খেলত। এটা তরুণদের জন্য ভালো হবে।” কিন্তু AIFF ঠিক উলটো পথে হেঁটেছে, ক্লাবগুলোকে ৬ জন বিদেশি খেলোয়াড় রাখার অনুমতি দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, সুপার কাপ নিয়ে ফেডারেশনের পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আসছে। মর্যাদা ফেরাতে সময়, পুরস্কার অর্থ ও কাঠামোয় পরিবর্তন প্রয়োজন। তারই অংশ হিসেবে সুপার কাপের সময়সূচি বদল এবং ফেডারেশন কাপের প্রত্যাবর্তন হয়তো নতুন সূচনা আনতে পারে ভারতীয় ফুটবলের ক্যালেন্ডারে।