জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় (Pahalgam Terror Attack) ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গোটা দেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা এই হত্যালীলার দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় বেছে বেছে হিন্দুদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যা দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সঞ্চার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর হ্রাস করা। এই ঘটনার প্রভাব ক্রীড়া জগতেও পড়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্কের বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও (Sourav Ganguly) কড়া বার্তা দিয়েছেন।
পহেলগাঁও হামলার পরপরই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কলকাতায় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-তে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “এই ঘটনা কোনও মজার বিষয় নয়। এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলাকে কখনও মেনে নেওয়া যায় না। কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ সম্পূর্ণ অসম্ভব। শুধু তাই নয়, আইসিসি টুর্নামেন্টেও ভারত ও পাকিস্তানকে যাতে একই গ্রুপে না রাখা হয়, সেই জন্য বিসিসিআই-এর চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সব রকমভাবে জবাব দিতে হবে।”
বিসিসিআই ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে যে, ভারত সরকারের নির্দেশ মেনে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ খেলবে না। বিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা বলেন, “আমরা পহেলগাঁও হামলার শিকারদের পাশে আছি এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকার যা বলবে, আমরা তাই করব। আমরা সরকারের নীতির কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলি না এবং ভবিষ্যতেও খেলব না। তবে, আইসিসি ইভেন্টে আমরা খেলি, কারণ এটি আইসিসি’র বাধ্যবাধকতার অংশ।” তবে, সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিসিসিআই আইসিসি’কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে যাতে ভবিষ্যতে ভারত ও পাকিস্তানকে একই গ্রুপে না রাখা হয়। যদিও ক্রিকবাজের একটি রিপোর্টে বিসিসিআই-এর একজন কর্মকর্তা এই দাবি অস্বীকার করেছেন, তবু এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও অপেক্ষমাণ।
পহেলগাঁও হামলার পর ক্রীড়া জগত থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামী বলেছেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও ক্রিকেট খেলা উচিত নয়। এখন নয়, কখনও নয়।” প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়াও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নীরবতার সমালোচনা করে বলেছেন, “পাকিস্তান যদি এই হামলার সঙ্গে জড়িত না হয়, তবে তাদের প্রধানমন্ত্রী এখনও নিন্দা করলেন না কেন?”
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ ২০১২-১৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে দুই দল কেবল আইসিসি টুর্নামেন্ট এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) ইভেন্টে মুখোমুখি হয়। তবে, পহেলগাঁও হামলার পর এই মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। এসিসি’র এশিয়া কাপের মিডিয়া রাইটস বিক্রির ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের গুরুত্ব থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই টুর্নামেন্টের ড্র এবং ভেন্যু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগতে পারে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কড়া বক্তব্য এবং বিসিসিআই-এর অবস্থান দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে লিখেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা এই মুহূর্তে অসম্ভব। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “পহেলগাঁও হামলার পর বিসিসিআই-এর এই সিদ্ধান্ত সঠিক। ক্রিকেটের চেয়ে দেশের সম্মান বড়।”
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের ক্রীড়া জগতে যে প্রভাব পড়েছে, তা কেবল ক্রিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাংককে মহিলাদের বেসবল এশিয়া কাপে ভারতীয় মহিলা দল পাকিস্তানকে হারিয়ে জয়লাভ করেছে, যা ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ সঞ্চার করেছে। এই জয়কে অনেকে জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকারের কঠোর অবস্থান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের কড়া বক্তব্য এই ঘটনার গুরুত্বকে আরও উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ কেবল আইসিসি ইভেন্টে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাও অনিশ্চিত।