ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে (AFC Challenge League) ব্যর্থ হয়েছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC)। অতীত ভুলে লাল-হলুদ শিবির এখন পুরোপুরি নজর দিয়েছে আসন্ন সুপার কাপের (Super Cup) দিকে। বৃহস্পতিবার রাতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের অভিযান শেষ করে শহরে ফিরেছে দল। তবে আপাতত কোচ অস্কার ব্রুজো ফুটবলারদের কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম দিয়েছেন। অধিকাংশ বিদেশি ফুটবলার দেশে ফিরে গেলেও ক্লেন্টন সিলভা এবং মেসি বাউলি এখনও কলকাতায় রয়েছেন, যদিও তাঁরাও শীঘ্রই চলে যাবেন।
এই মুহূর্তে ক্লডিয়াস সরণির এই ক্লাবের প্রধান লক্ষ্য হল সুপার কাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। এছাড়া গতবারের শিরোপা বজায় রেখে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে খেলতে নামা। ব্রুজো চাইছেন মার্চের শেষ সপ্তাহ কিংবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে। এদিকে শুক্রবার কলকাতা থেকে শিলংয়ে জাতীয় শিবিরে যোগ দিতে চলে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের দুই ফুটবলার জিকসন সিং এবং নাওরেম মহেশ সিং।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় কোচ অস্কার ব্রুজো বেশ হতাশ। তবে আইএসএলের শেষ দিকে দলের পারফরম্যান্সে ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা গেছে। এই উন্নতির ধারা ধরে রেখে ব্রুজো এখন সুপার কাপ নিয়ে আশাবাদী। গতবার ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ক্লেন্টন সিলভার নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাই এবারও এই টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফলের আশা করছে দল। পুরো মরসুম জুড়ে একের পর এক ব্যর্থতার পর সুপার কাপ এখন ইস্টবেঙ্গলের জন্য একমাত্র ভরসা।
মশাল ব্রিগেডের ফুটবলাররা ভালো করেই জানেন, যদি এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন, তাহলে সারা মরসুমের ব্যর্থতার ছবি কিছুটা হলেও পাল্টানো সম্ভব। তবে ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, একের পর এক হারের ফলে দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই ভেঙে গেছে। সুপার কাপে এসে সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া যায় কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
কোচ অস্কার ব্রুজো এই বিষয়টি ভালো করেই বোঝেন। তিনি জানেন, সুপার কাপ জিততে পারলে সমর্থকদের সারা বছরের হতাশা ও যন্ত্রণার ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেওয়া সম্ভব। তাই তিনি এই টুর্নামেন্টকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফুটবলাররা যাতে মানসিকভাবে ফুরফুরে অবস্থায় সুপার কাপে নামতে পারেন, সেজন্যই তিনি খেলোয়াড়দের কিছুদিনের জন্য ছুটি দিয়েছেন। তাই মার্চের শেষ থেকে প্রস্তুতি শুরু করার পরিকল্পনা করছেন ব্রুজো। এই সময়ে তিনি দলের ফিটনেস, কৌশল এবং মানসিক দৃঢ়তার উপর জোর দেবেন।
ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা সারা বছর ধরে দলের ব্যর্থতায় হতাশ। তবে গতবারের সুপার কাপ জয় তাঁদের কিছুটা আশা দিয়েছিল। এবারও সেই আশা বুকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। তবে দলের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সুপার কাপে সাফল্য পাওয়া সহজ হবে না। প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী, আর ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। তবুও কোচ ব্রুজো আশা ছাড়ছেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, সঠিক প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে মাঠে নামলে দল আবারও সাফল্যের স্বাদ পেতে পারে।
এদিকে, ইস্টবেঙ্গলের দুই ফুটবলার জাতীয় শিবিরে যোগ দিয়েছেন, যা দলের জন্য গর্বের বিষয়। তবে সুপার কাপের প্রস্তুতির জন্য তাঁদের দ্রুত দলে ফিরে আসা জরুরি। এখন দেখার বিষয়, ব্রুজোর পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয় এবং ইস্টবেঙ্গল সুপার কাপে তাদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় কিনা। সমর্থকরা আশা করছেন, গতবারের মতো এবারও ভুবনেশ্বরে ইস্টবেঙ্গল শিরোপা জিতে তাঁদের হাসি ফোটাবে। তবে এই পথে চ্যালেঞ্জ অনেক। সবকিছু ঠিকঠাক চললে হয়তো লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে আবার হাসি ফুটবে।