সিজনে চরম ব্যৰ্থতার পর কোচ বদলের পরিকল্পনা? নজরে প্ৰাক্তন ভারতীয় কোচ

মাত্র এক বছর আগেই কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) হয়ে উঠেছিলো আইপিএলের রাজা। বেগুনি-সোনালী ঝড়ে উড়ে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষরা। কিন্তু ২০২৫ (IPL 2025) যেন সবকিছু বদলে গেল।…

KKR’s V3 Dominates as Defending Champions Crush SRH by 80 Runs in IPL 2025

মাত্র এক বছর আগেই কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) হয়ে উঠেছিলো আইপিএলের রাজা। বেগুনি-সোনালী ঝড়ে উড়ে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষরা। কিন্তু ২০২৫ (IPL 2025) যেন সবকিছু বদলে গেল। চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে নিয়েও নিজেদের মান রাখতে পারলো না শাহরুখ খানের দল। ১৪টি লীগ ম্যাচে মাত্র ৫টি জয়, ৭টি হার এবং দুটি ম্যাচ ভেস্তে গিয়ে মাত্র ১২ পয়েন্টে লীগ টেবিলের অষ্টম স্থানে শেষ—এ যেন একেবারে বিপরীত ছবি।

এই ব্যর্থতার দায় কার? শুধুই কি ক্রিকেটারদের অফ ফর্ম, না কি দলগঠনের ভুল ও কৌশলের ঘাটতি এর জন্য দায়ী? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সবকিছুই একসঙ্গে মিলে তৈরি করেছে এই ধ্বংসস্তূপ।

   

প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্রিকেটারকে ছেড়ে দেওয়া ছিলো এক বড় ভুল। ২০২৪ ট্রফিজয়ী দলের তিন স্তম্ভ—শ্রেয়স আইয়ার, ফিল সল্ট এবং মিচেল স্টার্ককে ছেড়ে দিয়ে কার্যত নিজেদের পায়ে কুঠার মেরেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি। অথচ এই খেলোয়াড়দের বিকল্প হিসেবে কোনো অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক তারকা বা ধারাবাহিক পারফর্মারকে নেওয়া হয়নি। বরং ২৩.৭৫ কোটি টাকা খরচ করা হয় ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ওপর, যিনি পুরো সিজনে একবারও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি।

দ্বিতীয়ত, গেমপ্ল্যান ও ব্যাটিং অর্ডারে চরম অব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক ম্যাচে দেখা গেছে, ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের নিচে নামিয়ে, অপরিচিত বা অনভিজ্ঞ ব্যাটারদের উপরে পাঠানো হচ্ছে। রিঙ্কু সিং মতো ফিনিশারকে ছয় কিংবা সাত নম্বরে নামানো, এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সুনীল নারিনকে ধারাবাহিকভাবে ওপেন করানোতেও ক্ষোভ বাড়ছে সমর্থকদের মধ্যে, বিশেষ করে যখন তাঁর ব্যাটিং আর আগের মত কার্যকর নয়।

২৫ বছর পর রোনাল্ডোর গোলে জার্মানিকে হারিয়ে ফাইনালে পর্তুগাল

Advertisements

তৃতীয়ত, দলের কৌশলগত দিক থেকেও বড়সড় ঘাটতি ছিলো। গতবারের মতো ম্যাচে ম্যাচে নতুন পরিকল্পনা, বোলিং রোটেশন বা ম্যাচ রিডিং-এর কোনো ছাপ ছিলো না এবার। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪-এর সাফল্যের মূল কারিগর ছিলেন মেন্টর গৌতম গম্ভীর, যিনি এবার ভারতীয় দলের হেড কোচ হয়ে যাওয়ায় নাইট শিবিরে সৃষ্টি হয়েছে এক শূন্যতা। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও মেন্টর ডোয়েন ব্র্যাভো সেই জায়গা পূরণ করতে পারেননি।

এই মুহূর্তে নাইট শিবিরে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হল, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে সরিয়ে কে হবেন পরবর্তী কোচ? ক্রিকেটমহলে গুঞ্জন উঠেছে প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইওন মর্গ্যানের নাম। যদিও কোচিংয়ে তাঁর কোনো বড় মঞ্চের অভিজ্ঞতা না থাকায়, তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্যদিকে, অনেকেই মনে করছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী হতে পারেন নাইটদের পরবর্তী পথপ্রদর্শক। তাঁর অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা—সব মিলিয়ে বিপর্যয়ের সময় কেকেআরের জন্য হতে পারে এক আদর্শ চয়েস।

শাস্ত্রীর নেতৃত্বে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ায় টানা দুটি টেস্ট সিরিজ জিতেছিলো, যে সাফল্য তাঁকে একজন ‘মোটিভেটর’ হিসেবে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। তাছাড়া কঠিন সময়েও যিনি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে খেলোয়াড়দের সেরা ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারেন, এমন কোচের প্রয়োজন এখন নাইটদের।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২৫ আইপিএল ছিল নাইট রাইডার্সের জন্য এক চরম বাস্তবতা-পরীক্ষা। অতীতের গৌরব ধরে রাখতে হলে শুধু কাগজে কলমে নয়, মাঠে কার্যকর কৌশল ও ভারসাম্যপূর্ণ দলগঠনের দিকে নজর দিতে হবে। সামনে নতুন মরসুম, নতুন সুযোগ। এখন দেখার, নাইট শিবির সেই চ্যালেঞ্জ নিতে কতটা প্রস্তুত।