পাওয়ারলিফটিংয়ে নতুন দিগন্তের সন্ধানে বাংলার অদিতি

জনপ্রিয়তার শীর্ষে সকলে না পৌঁছালেও, খেলাকে ভালোবেসে এগিয়ে চলেছেন কিছু নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়াবিদ। তাদেরই একজন, পশ্চিমবঙ্গের পাওয়ারলিফটার অদিতি নন্দী (Aditi Nandy)। তিন বছর আগে গুজরাটের সুরাটে…

পাওয়ারলিফটিংয়ে নতুন দিগন্তের সন্ধানে বাংলার অদিতি

জনপ্রিয়তার শীর্ষে সকলে না পৌঁছালেও, খেলাকে ভালোবেসে এগিয়ে চলেছেন কিছু নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়াবিদ। তাদেরই একজন, পশ্চিমবঙ্গের পাওয়ারলিফটার অদিতি নন্দী (Aditi Nandy)। তিন বছর আগে গুজরাটের সুরাটে আয়োজিত জাতীয় পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে (National Powerlifting Championship) ৪৮-৫২ কেজি ওজনশ্রেণিতে রৌপ্য পদক জিতে নিয়েছিলেন অদিতি। তিন বছর পর, সেই একই শহরে আবারও নিজের প্রতিভা প্রমাণের লক্ষ্যে অংশ নেন ওপেন এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ। সেখানেও তাঁর গলায় ঝোলে রৌপ্য পদক।

গত তিন বছর ধরে নিজের কর্মজীবন সামলানোর পাশাপাশি অদিতি কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন পাওয়ারলিফটিংয়ে উন্নতি করতে। তাঁর কোচ স্বনামধন্য পাওয়ারলিফটার জেসন মার্টিন, সবসময় তাঁর ব্যস্ত সময়সূচি অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।

অদিতি বলেন, “এই পথচলা মোটেই সহজ ছিল না। অনেক পরিশ্রম, অনেক জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়েছে। আমি ছয়টি জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলেছি। পুরো সময়ের চাকরি সামলানোর পর, ক্লান্ত শরীর নিয়েও সন্ধ্যায় অনুশীলন চালিয়ে যেতে হয়। চাকরি ও পাওয়ারলিফটিং একসঙ্গে চালানো মানসিক ও শারীরিকভাবে খুবই চ্যালেঞ্জিং।”

পরিবার এবং কাছের বন্ধুরা সবসময় পাশে থাকার কারণে তাঁর জন্য কিছুটা সহজ হয়েছে, তবে সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব অনুভূত হয়েছে বেশ কয়েকবার।

তিনি বলেন, “এই খেলা অলিম্পিক তালিকাভুক্ত নয়, তবে প্যারালিম্পিকে রয়েছে। তাই আমাদের মতো মূলধারার ক্রীড়াবিদদের জন্য সরকারি সহায়তা মেলে না। বেশিরভাগ সময় আমাদের নিজেদের খরচেই বেসরকারি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। তাই স্পনসরশিপের অভাব বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

পাওয়ারলিফটিং কেন বেছে নিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে অদিতি বলেন, “অনেকদিন ধরেই ওজন উত্তোলনের অনুশীলন করছিলাম। পরে পাওয়ারলিফটিং সম্পর্কে জানতে পারি এবং এটি চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিই। এই খেলাটি অধ্যবসায় ও প্রচণ্ড মানসিক শক্তির দাবি রাখে। এটি সবার জন্য নয়, অনেক পরিশ্রম ও আত্মনিবেদন লাগে।”

Advertisements

২০২৫ সালে তাঁর প্রথম প্রতিযোগিতা ছিল একেবারেই অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। নিজের ভাইয়ের বিয়ের মধ্যেই প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছে তাঁকে।

তিনি বলেন, “যখন জানতে পারলাম প্রতিযোগিতাটি ভারতে হচ্ছে, তখন মনে হলো এটাই হয়তো আমার সুযোগ। তবে একইসময়ে ভাইয়ের বিয়েও ছিল। তাই বিয়েতে অংশ নিয়ে সেখান থেকে উড়ে গিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হয়েছে। খুব কঠিন প্রতিযোগিতা ছিল এবং প্রতিদ্বন্দ্বীরাও দারুণ খেলেছে। তবে আমি খুশি কারণ যিনি আমাকে হারিয়েছেন, তিনিও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। আগামীবার আরও ভালো করার লক্ষ্য রাখছি।”

অদিতির এই লড়াই ও সাফল্য নিঃসন্দেহে বাংলার ক্রীড়াজগতে এক অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে তিনি আরও উচ্চতায় পৌঁছান, এটাই বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের চাওয়া।