Active vs Passive Funds: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—বিনিয়োগকারীদের অ্যাকটিভ (Active) ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত, নাকি প্যাসিভ (Passive) ফান্ডে? এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ব্যক্তির ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা, বাজার সম্পর্কে তার জ্ঞান, বাজার পর্যবেক্ষণের পরিমাণ এবং তার আর্থিক ও মানসিক সহনশীলতার উপর।
অস্থির বাজারে অ্যাকটিভ ফান্ডের ভূমিকা
যেখানে বাজার স্থিতিশীল থাকে না, সেখানে অ্যাকটিভ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অনেক সময় ভালো ফলাফল দিতে পারে। বর্তমান বাজার কেবল মৌলিক অর্থনৈতিক তথ্য দ্বারা চালিত হয় না; বরং এটি আন্তর্জাতিক খবর, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব, লিকুইডিটি সমস্যা এবং টেকনিক্যাল স্তরের উপরও নির্ভর করে। এই ধরনের আন্দোলনগুলোর মাঝে অনেক সময় সাময়িক সুযোগ তৈরি হয়, যেগুলিকে ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন সম্ভব — কিন্তু সেটা সম্ভব তখনই, যখন কেউ সক্রিয়ভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।
কৌশলগত নমনীয়তা: অ্যাকটিভ ফান্ডের অন্যতম শক্তি
অ্যাকটিভ ফান্ড মানেই বার বার কেনাবেচা নয়। এটি মানে হচ্ছে — যেকোনো সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা রাখা। ধরা যাক, বাজারে বড় ধরনের সংশোধনের আগে মুনাফা তুলে নেওয়া বা কোনো বিশেষ খাতে বিনিয়োগ করা, যেখানে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। এইসব সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তখনই, যখন একজন অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজার বাজার, অর্থনৈতিক তথ্য, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করে একটি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সক্ষম হন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি জানা যায় যে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত বিবৃতি বা কোনো রাজনৈতিক ঘোষণার কারণে নির্দিষ্ট খাতের স্টকগুলোর দাম পড়ে যেতে পারে বা বাড়তে পারে, তখন একজন অ্যাকটিভ ফান্ড ম্যানেজার সেই অনুযায়ী পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস করতে পারেন।
প্যাসিভ ফান্ডের সীমাবদ্ধতা
প্যাসিভ ফান্ড যেমন ইটিএফ বা ইনডেক্স ফান্ড মূলত বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এগুলোর উদ্দেশ্য বাজারকে হারানো নয়, বরং বাজারকে অনুসরণ করা। তাই বাজার যখন পড়ে, তখন এই ধরনের ফান্ডও পড়ে যায়। এখানে কোনো প্রকার ‘ডাউনসাইড প্রটেকশন’ নেই। তবে, এই ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান, কম খরচে নিরাপদ পথ খুঁজছেন এবং প্রতিদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করতে চান না।
ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগ কৌশল: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সেরা উপায়:
ভারতের মতো দেশের পুঁজিবাজার এখন মূলত আবেগ এবং সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সেখানে অ্যাকটিভ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দেয়। কিন্তু এটি প্রতিটি বিনিয়োগকারীর জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
সাধারণ খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হতে পারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পোর্টফোলিও তৈরি করা। মানে, পোর্টফোলিওর একটি অংশ প্যাসিভ ফান্ডে রাখা — যাতে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত ও স্থির সম্পদ তৈরি হয়, এবং অপর অংশ অ্যাকটিভ ফান্ডে রাখা — যেখানে ঝুঁকি বেশি হলেও সম্ভাব্য রিটার্নও বেশি থাকে।
বিনিয়োগ মানে কেবল লাভের দিকটা দেখা নয়, বরং ঝুঁকি কতটা গ্রহণযোগ্য এবং আপনি সেই ঝুঁকি কতটা ম্যানেজ করতে পারেন, সেটাও বিবেচ্য। অস্থির বাজারে কেউ যদি সক্রিয়ভাবে বাজারকে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন এবং ঝুঁকি নিতে রাজি থাকেন, তাহলে অ্যাকটিভ ফান্ড হতে পারে ভালো বিকল্প। অন্যদিকে যারা ধৈর্য ধরে দীর্ঘমেয়াদে ধীরে ধীরে সম্পদ তৈরি করতে চান, তাদের জন্য প্যাসিভ ফান্ড হতে পারে উপযুক্ত পথ।
তবে, সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হতে পারে এই দুইয়ের সমন্বয়। কারণ, অর্থনৈতিক অবস্থা, বাজারের গতি এবং বিনিয়োগকারীর নিজস্ব অবস্থান সব কিছু মিলিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগই ভবিষ্যতের সাফল্যের চাবিকাঠি।